আধুনিকতার ছোঁয়ায় ভাটা পড়েছে পটুয়াদের পট শিল্পে

নিজস্ব প্রতিবেদক:- আধুনিকতার ছোঁয়ায় ভাটা পড়েছে পটুয়াদের পট শিল্পে। বাঁকুড়া থেকে ছাতনা হয়ে শুশুনিয়া যাওয়ার পথে কিছুটা যাবার পথেই ডানদিকে গেলেই পড়বে নীল রং সাইনবোর্ডে সাদা হরফে লেখা চিত্রকর পট শিল্প ভরতপুর গ্রাম। সেই ডান দিক বেকে 4 কিলোমিটার পাহাড়ের কোল বেয়ে সিমেন্টের রাস্তা পেরোলেই পড়বে ভরতপুর গ্রাম। আর এই গ্রামেই রয়েছে পটুয়াদের শিল্পগ্রাম যা পটুয়াপাড়া নামে পরিচিত। প্রাচীন এই সংস্কৃতির অন্যতম রীতি ছিল পটচিত্র অঙ্কন। তাদের গ্রামের বাড়ির দেওয়াল যেন এখনো কথা বলে ওঠে শিল্পের কথা কারুকার্যের কথা। এই গ্রামে পট শিল্পের সাথে যুক্ত প্রায় 16 টি পরিবারের বসবাস। তাঁরা প্রায় সবাই পটশিল্পী ৷ এটাই তাঁদের জীবিকা। এই পট শিল্প প্রায় 130 বছরের পুরনো বলে জানা যায়। অতীতে বাঁকুড়ার অনেক জায়গায় পটশিল্প বিভিন্ন দেওয়ালে ফুটে উঠলেও কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্প। মূলত দুই ধরনের পট হয় জড়ানো পথ এবং চৌকো পট। জড়ানো পটে বিভিন্ন কাব্য এবং ঘটনা এইসব আকা হয়। আর সেই নানান গল্পকথা শিল্পী ফুটিয়ে তুলেন চৌকো পটে। আগে হয় গান পরে হয় পট।শিল্পীরা নিজেরাই গান এবং সুর বানান। শুশুনিয়া পাহাড়তলীতে বিভিন্ন রং এর পাথর জোগাড় করে সেগুলো গুঁড়ো করে বিভিন্ন ধরনের রং প্রস্তুত করেন। এবং ছাগলের লোম ব্যবহার করে উনারা পট চিত্র আঁকার জন্য তুলি বানান। তবে বর্তমানে বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর আগের মতো পটের গানে ভিড় জমে না। একটা সময় ছিল, যখন তপন চিত্রকর, বন্দনা চিত্রকররা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পটচিত্রের উপর কৃষ্ণলীলা, মনসামঙ্গল দেখিয়ে বা এই শিল্পকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষে করে পেটের ভাত জোগাতেন।কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে সেটুকুতেও এখন ভাঁটা পড়েছে। তবুও এই শিল্পকে বজায় রাখতে পটগান গেয়ে ভিক্ষে করতে বের হন তারা। কোনরকম চলে সংসারে দিনযাপন। বাংলার প্রতিটি কোনায় নানা শিল্প ছড়িয়ে রয়েছে ৷ তবে কদর না পেয়ে অনেক শিল্প আবার কালচক্রে হারাতেও বসেছে। এরইমধ্যে সংকটের মুখে বাংলার পটচিত্র শিল্প ৷ আধুনিকতার ছোঁয়া কেড়ে নিয়েছে তাঁদের রুজি রোজগার ৷মাথায় হাত পড়েছে ভরতপুর পট-পাড়ার মানুষগুলোর ৷ তবে এই পট শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। বেশ কিছুদিন আগে বাঁকুড়া পুলিশের উদ্যোগে পটের সাথী নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের কাছে পট শিল্পকে তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। একচালা বাড়িতে বাস করা অসহায় মানুষগুলি এখন তাকিয়ে প্রশাসনের দিকে ৷ শিল্প থাক, আপাতত দু বেলা দু মুঠো খেতে পাওয়াই তাঁদের জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ৷