কবিগুরুর শান্তির নীড়ে অশান্তির ছায়া, নৈপথ্যে কারা!

কবিগুরুর শান্তির নীড়ে অশান্তির ছায়া, নৈপথ্যে কারা!

     

     

     

     

    নতুন গতি : লাল মাটির পথ, রকমারি ফুলের সৌরভ, বাউল ফকিরের দোতারার শব্দ, ভিড়ে ঠাসা খোয়াই হাট। সব মিলিয়ে শব্দে শব্দে ভেসে থাকা শান্তিনিকেতন এই বাংলার প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তি । শান্তিনিকেতনে যারা প্রায়ই আসেন তাদের কাছে হয়তো উপরের লাইন দুটি খুবই পরিচিত। সারা বছর ধরে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনেকটাই পরিবর্তিত এখন শান্তিনিকেতন লাগোয়া এলাকাগুলো। মস্ত বড় বড় বাড়ি, টুরিস্ট লজ গড়ে উঠেছে। শান্তিনিকেতন যেন ব্যবসার পণ্যতে পরিণত। বিগত কয়েক দশকে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য যা ছিল সেটা বর্তমানে কিছুটা হলেও ক্ষুন্ন।

    আগেকার মতো আর রাস্তার দুই ধারে রাঙ্গামাটির পথের দেখা মেলে না, পথচলতি মানুষের পায়ে লালমাটির ধুলোর দেখা নেই, দেখা মেলেনা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু উঁচু গাছের, দেখা নেই পরিযায়ী পাখিদের। শহরের বাবুদের অপসংস্কৃতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক থেকে শুরু করে এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা। বহুকাল ধরেই আদিবাসীরা শান্তিনিকেতনের সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বসবাস করত। আগে শান্তিনিকেতনের স্নেহে ভালোভাবেই দিন কেটে যেত তাদের কিন্তু বর্তমানে প্রোমোটার রাজের দখলে শান্তিনিকেতন। জল ,জঙ্গল, পাহাড়ের প্রকৃত মালিকদের বঞ্চনা করে চোখ ধাঁধানো অট্টালিকা গড়ে উঠেছে, রমরমিয়ে চলছে দালাল রাজ অল্প টাকা দিয়েই আদিবাসীদের জমি গুলোকে দিনের-পর-দিন গ্রাস করে নিচ্ছে কিছু ব্যবসায়ী নামক হাঙ্গর।

     

    সম্প্রতি বোলপুর শান্তিনিকেতনের কোপাই নদী সংলগ্ন এলাকার আদিবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। প্রোমোটার রাজ ও শহুরে বাবুদের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সদস্য ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতা সোনা মুর্মু আমাদের জানান

    কোপাই নদীর ধারে একটি মহাশ্মশান ঘাট ও মন্দির রয়েছে। যে মন্দির ও মহাশ্মশান ঘাটে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিদ্যাধরপুর, বাঁশ পুকুর, সরপুকুর ডাঙা, বাঁধলো ডাঙ্গা গ্রামের মানুষরা পূর্বপুরুষের সময় ধরে অস্থি বিসর্জন ও ধর্মীয় কার্যকলাপ পালন করে আসছেন কিন্তু সম্প্রতি কিছু বহিরাগত ব্যবসায়িক দালাল মারফত এসে আদিবাসীদের পবিত্র মহাশ্মশান ও মন্দির সংলগ্ন এলাকাতে জোর করে দোকানপাট বসিয়ে দখল করে নিতে চাইছে। এভাবেই আদিবাসীদের জায়গাগুলো একের পর এক দখল হচ্ছে। বাহির থেকে পর্যটকরা এসে মন্দির ও মহাশ্মশান সংলগ্ন এলাকাতে মদ্যপান করে এলাকাগুলোকে আবর্জনায় ভরিয়ে দিচ্ছে, উক্ত এলাকাতে চলছে অসামাজিক কাজকর্ম।

     

    শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা বিদ্যাসাগর মেটের কথায় আদিবাসীদের শহরের বাবুরা মানুষ মনে করে না’, অসামাজিক কাজকর্ম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কোপাই নদীর ধারে রমরমা বাজার বসছে, পর্যটক সাথে তাদের নামি দামি গাড়ির ভীড়। নদীতে আদিবাসী বোনেরা স্নানের জন্য যায় কিন্তু পর্যটকের ভিড়ের জন্য এলাকার মহিলারা দারুন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। মদের বোতলে ও ভাঙ্গা কাঁচে এলাকা ভরে যাচ্ছে । এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত। এগুলো রবীন্দ্র ঐতিহ্য বিরোধী।

     

    এখন আদিবাসীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে পাঁচটি গ্রামের আদিবাসী নেতারা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে পাশে পেতে চাইছেন। মঞ্চের সদস্যদের সাথে আদিবাসী নেতৃত্তের আলোচনাও হয়েছে মহাশ্মশানের জমি উদ্ধার ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। মঞ্চের পক্ষ থেকে অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম, মনীষা ব্যানার্জি,রাজকুমার ভুইমালিরা জানান, আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বৃহৎ আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি।