পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এবারে “শিক্ষারত্ন” সম্মান পাচ্ছেন তিন জন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এবার শিক্ষারত্ন সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন তিনজন।শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতিবছর রাজ্যসরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর শিক্ষক দিবসের দিন রাজ্যজুড়ে বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে “শিক্ষারত্ন” সম্মানে ভূষিত করা হয়।প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তর থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেছে নেওয়া হয় এই বিশেষ সম্মানের জন্য। ‘শিক্ষক দিবস’ এর দিন নির্বাচিত হাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় “শিক্ষারত্ন” পুরস্কার তুলে দেন। এবারও “শিক্ষারত্ন” সম্মান প্রাপকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। সেই তালিকায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে স্থান পেয়েছেন তিন শিক্ষক। এই তালিকায় রয়েছেন বিপ্লবীদের স্মৃতিবিজড়িত মেদিনীপুর টাউন স্কুলের(বয়েজ) প্রধান শিক্ষক ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী। মাধ্যমিক বিভাগ থেকে এবার জেলার একমাত্র শিক্ষক রূপে এই সম্মান পাচ্ছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং রবীন্দ্র গবেষক ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী। অপরদিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রাথমিক বিভাগ থেকে এই পুরস্কারে এবার সম্মানিত হচ্ছেন দাঁতন ১ নং ব্লকের দোয়াস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন দাস প্রধান। এছাড়াও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়স্তর থেকে এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড.অজয় কুমার মিশ্র।

    প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর টাউন “হেরিটেজ” উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিনে জাতীয় স্তরে শিক্ষক হিসেবে “রাষ্ট্রপতি পুরস্কার”-এ ভূষিত হন। ইংরেজি সাহিত্যের এই বিদগ্ধ ও পন্ডিত এই মানুষটি সারা বিশ্বজুড়ে তাঁর জ্ঞান ও গরিমার স্বাক্ষর রেখেছেন বিভিন্ন বক্তৃতা ও শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠানে। লিখেছেন ১৪ টি গ্রন্থ। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মালয়েশিয়ার মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়ে পেয়েছেন সম্মাননা পত্র। একাধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ফেলোশিপ পেয়েছেন। শ্রীলংকা থেকে আমন্ত্রিত হয়ে পেয়েছেন ‘ইন্টার্নেশনাল পিস অ্যাম্বাসেডর’ সম্মান। দাঁতনের মোহনপুর ব্লকের পুরুনীয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া মেদিনীপুরের কৃতি ভূমিপুত্র ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী ২০০৬ সালে মেদিনীপুর টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১০ সালে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মেদিনীপুর টাউন স্কুল “হেরিটেজ” ঘোষিত হয়। শহীদ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অন্যতম পীঠস্থান এই টাউন স্কুলের সার্বিক পরিকাঠামো তাঁর আন্তরিকতা স্পর্শে উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। বর্তমানে, জেলা শহর মেদিনীপুরের বাসিন্দা ড. চক্রবর্তী একজন বিশিষ্ট “রবীন্দ্র গবেষক” এবং লেখক রূপেও সর্বজনবিদিত। শিক্ষা জগৎ ছাড়াও সামাজিক ক্ষেত্রেও তার অবদান সর্বজন স্বীকৃত। ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী জানান “এই সম্মান শুধু আমার নয়, আমার বিদ্যালয়েরও। আমার বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী-কে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে এই সম্মান। সর্বজন শ্রদ্ধেয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর-কে অন্তরের অন্তর্স্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি সন্মানীয়া জেলাশাসক ড. রশ্নি কমলের প্রতি। বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো ও সার্বিক বিকাশে যথাসাধ্য সমর্পিত থেকেছি। বিদ্যালয়ের আরও মানোন্নয়ন ঘটানোই আগামীদিনের লক্ষ্য।”

    ফাইল চিত্র

    অন্যদিকে, মেদিনীপুরের দাঁতনেরই ভূমিপুত্র তথা বাসিন্দা স্বপন দাস প্রধান এবারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এবার জেলা থেকে একমাত্র এই সম্মান প্রাপক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত দোয়াস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কে তিনি জেলার অন্যতম একটি “মডেল স্কুল”-এ এ রূপায়িত করেছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পরিবেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে এই বিদ্যালয় জেলার অন্যতম গর্ব। তাঁর এই সম্মান শুধু বিদ্যালয় নয়, সমগ্র দাঁতন বাসীকে গর্বিত করেছে বলে তাঁর সমাজ মাধ্যম অ্যাকাউন্টে একাধিক ব্যক্তি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সদাহাস্যময় ও বিদ্যালয়ের জন্য নিবেদিত প্রাণ স্বপন দাস প্রধান বাবু তাঁর নিরলস পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন ঘটিয়ে “শিক্ষারত্ন- ২০২১” সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি,রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়াও, তাঁর পাশে থাকার জন্য বিদ্যালয়ের সহকর্মী বৃন্দ থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। এছাড়াও এবারে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় “শিক্ষরত্ন” সম্মান পাচ্ছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. অজয় কুমার মিশ্র।তিনি তাঁর বিদগ্ধ পাণ্ডিত্য,শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এই সম্মানে সম্মানিত হচ্ছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহামারী করোনা আবহে গত বছরের মতো এবারও কলকাতার রাজ্যস্তরীয় অনুষ্ঠানের পরিবর্তে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের দপ্তর থেকেই আগামী ৫ সেপ্টেম্বর এই তিন জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক ডাঃ রশ্মি কমল।