জাতীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিরোধী শিবিরকে সংহত করতে উদ্যোগী তৃণমূল কংগ্রেস

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি নয়, ভারতের সংবিধান বাঁচাতে, জাতীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে মোদি-শাহ শক্তির বিরুদ্ধে বিরোধী শিবিরকে সংহত করতে উদ্যোগী তৃণমূল কংগ্রেস। কী এই উদ্যোগের তাৎপর্য তা বিশ্লেষণ করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র।

    তিনি বলেন , ‘সরকার যদি একবার বিরোধী কণ্ঠস্বরকে চুপ করিয়ে দেওয়ার নীতি অনুসরণ করতে শুরু করে, তবে তার কাছে একটাই উপায় থাকে, আর সেটা হল উত্তরোত্তর দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করা, যতক্ষণ না সরকার সকল নাগরিকের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠে এবং সারা দেশে এমন একটা অবস্থা তৈরি হয় যেখানে প্রত্যেকে আতঙ্কের মধ্যে থাকে।’

    তিনি বলেন, ‘কথাগুলো হ্যারি ট্রুম্যানের। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের তেত্রিশতম প্রেসিডেন্ট। মার্কিন কংগ্রেসে ৮ অগাস্ট, ১৯৫০-এ সেদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ বার্তা দিতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
    আজ থেকে ৭১ বছর আগে মার্কিনমুলুকে বলা এই বার্তা আজকের ভারতেও সমভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে দেখা দিচ্ছে। এটা দুঃখের। এটা আতঙ্কের। আর এই সর্বগ্রাসী আতঙ্কের আবহে তাবৎ বিরোধী কণ্ঠের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। দেশের যেখানে যখন ভীতির পরিবেশ ছড়ানোর সুচিন্তিত প্রয়াস দেখা যাচ্ছে, বিরোধী কণ্ঠরোধের বন্দোবস্ত পাকাপাকি করার ব্যবস্থা হচ্ছে, তখন সেখানেই পৌঁছে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। তা সে সংসদের ভেতরে হোক বা ত্রিপুরার মাটিতে।’

    তাঁর কথায়, ‘রাজনীতির ছাত্রমাত্রেই জানেন, উদারনৈতিক গণতন্ত্রের সঙ্গে স্বৈরতন্ত্রের পার্থক্য। ভারতে উদারনৈতিক গণতন্ত্র সংবিধানের মাধ্যমে স্বীকৃত। এই ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সাম্যের ওপর জোর দেওয়া হয়। কোনও বিশেষ ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণির স্বার্থে এই ব্যবস্থা কাজ করে না। সংখ্যালঘিষ্ঠের স্বার্থ অবহেলিত হয়, এরকম কোনও বিষয় এই ব্যবস্থায় স্বীকৃত নয়। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। বহুদলীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে একাধিক রাজনৈতিক দলের স্বীকৃত অস্তিত্বের সূত্রে এই ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের স্বৈরাচারী মনোভাব প্রতিহত করা যায়।

    পক্ষান্তরে, ফ্যাসিবাদী সর্বাত্মক রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন ফ্রেডারিশ ও ব্রেজিনস্কি। তাঁদের মতে, এরকম ব্যবস্থায় একটা ‘official ideology’ থাকে। আনুগত্য আদায়ের জন্য সরকার সন্ত্রাস চালায়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্দেশ কার্যকর হয়। আর ‘The government has monopoly of communication’। এই দুটি ধ্রুপদী চালচিত্র পাশাপাশি রাখলে যে কোনও ভারতীয় নাগরিক বলে দেবেন, বর্তমানে এদেশের শাসনব্যবস্থার মূর্তি এই দুটির মধ্যে কোনটির দিকে পা বাড়িয়ে দিয়েছে। উদারনৈতিক গণতন্ত্রের পুকুরে যে স্বৈরতন্ত্রের পদ্ম ফোটাবার যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’

    তাঁর মতে, “জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতৃত্বে নিজেকে দেখতে চাইছেন না। তিনি বার বার বলছেন, এই জোটে তিনি ‘লিডার’ নন, ‘ক্যাডার’। তাঁর এই মনোভাবই বিরোধী শিবিরে তাঁর গ্রহণযোগ্যতাকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।”

    তিনি আরও বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে তা ইতিমধ্যেই বিরোধী শিবিরে মান্যতা লাভ করেছে। ভারতে সাংবিধানিক গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে, বিরোধী শিবিরে জোরদার ঐক্য এখন সময়ের দাবি। সেই দাবি পূরণে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও আপস করেনি। করতে চায় না। করবে না। জননেত্রীর বার্তাতেই সেই সুর সুস্পষ্ট।’