আজ গোটা দেশ আনন্দিত, বাবরি ধ্বংসে কোন ষড়যন্ত্র হয়নি, আনন্দ প্রকাশ করেছেন মনোহর যোশী

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: দীর্ঘ ২৮ বছর পর আজ রায় হল বাবরি মসজিদ কাণ্ডের। অবসরের নেওয়ার আগে  বুধবার লখনউয়ের বিশেষ আদালতে রায় পড়লেন বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব। ৩২ জন জীবিত অভিযুক্তই পেলেন বেকসুর খালাস ৷ রায় শুনেই উচ্ছ্বসিত মুরলী মনোহর যোশি, লাল কৃষ্ণ আদবানিরা ৷ রায় ঘোষণা হতেই জয় শ্রীরাম বলে চেঁচিয়ে ওঠেন আদবানি ৷ উচ্ছ্বসিত এই কেসে অভিযুক্তের তালিকায় থাকা মুরলী মনোহর যোশী ৷ বলেন, ঐতিহাসির রায় শোনাল আদালত ৷

     

    বাবরি রায় শুনে প্রসন্ন মুরলী মনোহর যোশি বলেন, ‘আদালতের রায়েই প্রমাণিত ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বিবাদিত সম্পত্তিটি ভেঙে ফেলার পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র ছিল না ৷ থাকলেও আমাদের র‍্যালি বা কর্মসূচি তার অংশ ছিল না ৷’ রায় নিয়ে উচ্ছ্বসিত এম এম যোশী বলেন, ‘এই রায়ে আমি তো প্রসন্নই, গোটা দেশই খুশি ৷ সবাই এখন অধীর আগ্রহে রামমন্দিরের অপেক্ষা করছে ৷’ যোশির মতো খুশি আদবানিও ৷ তিনি বলেন, আদালতের রায়কে স্বাগত ৷ এই রায় আমার রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতিফলন ৷ রামমন্দির রায়ের পর এই রায় দেশকে গর্বিত করল ৷ রামমন্দির আন্দোলনে জড়িত সবাইকে শুভেচ্ছা ৷

     

    দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদই আদালত পৌঁছে গিয়েছিলেন বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব। একে একে পৌঁছন সাধ্বী ঋতম্ভরা, সাক্ষী মহারাজরা। মোট ২৬ জন অভিযুক্ত যোগ দেন এজলাসে। তবে বয়সজনিত কারণে আসতে পারেননি লালকৃষ্ণ আদবানি ও মুরলী মনোহর যোশি। তাঁরা যোগ দেন ভিডিও কনফারেন্সে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে আসতে পারেননি উমা ভারতী। আসেননি মোহান্ত নৃত্যগোপাল দাসও। অভিযুক্ত, সিবিআই-এর আইনজীবী এবং তাঁদের আইনজীবী ছাড়া কারও প্রবেশাধিকার ছিল না আদালত চত্বরে।

     

    বাবরি ধ্বংসে রায় প্রায় ২০০০ পাতার। ২ সেপ্টেম্বর শুরু হয় রায় লেখার কাজ। বুধবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ সেই রায় পড়তে শুরু করেন বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব। তিনি বলেন, ‘১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের ঘটনায় অভিযুক্তদের উস্কানি ছিল, এমন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ঘটনাস্থলে সমবেত মানুষের অতি উৎসাহেই এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা উৎসাহী জনতাকে থামানোর চেষ্টা করেন, তা প্রমাণিত। তাই ষড়যন্ত্র বা পরিকল্পনার অভিযোগ খাটে না ৷’

     

    বিচারক এস কে যাদব রায়ে বলেন, ‘কিছু সমাজবিরোধী মসজিদ ভেঙেছিল৷ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি সিবিআই ৷ যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি তারা ৷ সিবিআইয়ের দেওয়া ছবি-ভিডিও আদালতগ্রাহ্য নয় ৷ কারণ- ছবির নেগেটিভ দিতে পারেনি সিবিআই ৷’

     

    ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের ঘটনা। উন্মত্ত হিংসা দেখেছিল গোটা দেশ। করসেবকদের হামলায় গুঁড়িয়ে গিয়েছিল শতাব্দীপ্রাচীন বাবরি মসজিদ। তাদের দাবি ছিল, ওই স্থানে রাম মন্দির ছিল। শুরু হয় গোষ্ঠী হিংসা, সংঘর্ষ। নিহত হন ১,৮০০ জন। ঘটনায় লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলীমনোহর জোশি, উমা ভারতীর মতো বিজেপি নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে বাবরি মসজিদ ধ্বংসে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়। সেই মামলার তদন্ত করে সিবিআই।২৮ বছর পর বুধবার মসজিদ ধ্বংসের মামলার রায় ঘোষণা করল লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত। ওই মামলায় মোট ৪৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৭ জন মারা গিয়েছেন। লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলীমনোহর জোশি, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ার,চম্পত রাই,কল্যাণ সিং, সাধ্বী ঋতম্ভরা, সাক্ষী মহারাজ সহ ৩২ জন বেকসুর খালাস ৷

     

    ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে অযোধ্যা জমি মামলার। গত ৯ নভেম্বর পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের দাবি খারিজ করে সেখানে রামমন্দির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছে। যদিও বাবরি মসজিদ ভাঙার নিন্দাও করেছিল সর্বোচ্চ আদালত।