বৃক্ষরোপণ হোক সামাজিক আন্দোলন,গাছ লাগিয়ে নজির গড়লেন প্রীতি পালের সমাগম

মহঃনাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর,১৭ অক্টোবরঃ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাসহ নৈসর্গিক শোভাবর্ধনে বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশের দূষণ রোধ ও বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে গাছ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখে থাকে। অথচ নগরায়ণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর যন্ত্র-প্রযুক্তির মোহে অযাচিতভাবে বৃক্ষনিধন করা হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে বন। ফলে দেখা দিচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বাড়ছে উষ্ণায়ন আর মানবসভ্যতা পড়ছে হুমকির মুখে।

    মঙ্গলবার মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১নং ব্লকের কুশিদা এলাকার এক সোশ্যাল মিডিয়া স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা সমাগম কুশিদা গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বর,রাস্তা ও বাঁধের দুই ধারে মেহগনি গাছ লাগিয়ে নজির গড়লেন।তাদের মহত কাজের প্রশংসা করেছেন হরিশ্চন্দ্রপুর-১নং ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু ও কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতর প্রধান আকতারি খাতুন সহ এলাকার সকলেই।

    সোশ্যাল মিডিয়া স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা সমাগমের কর্ণধার প্রীতি পাল জানান, মানুষের হয়ে মানুষের পাশে এগিয়ে আসার ইচ্ছেটা অনেকের রয়েছে কিন্তু সেগুলো সুপ্ত হয়ে থাকায় তারা এগিয়ে আসতে পারে না। চাইলেই এগোতে পারে,মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে কিন্তু এই সবকিছুর জন্য দরকার মানসিক জোর ও একতা।

    তিনি আরো জানান, সামাজিক কাজকর্ম করে দেখানোর উদ্দেশ্যে নিয়ে স্বাধীনতা দিবসের পরের দিন অর্থাৎ ১৬ আগস্ট সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সকলকে একতার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।প্রথম প্রথম প্রীতির ডাকে সাড়া দিয়েছিল মাত্র পাঁচ থেকে ছয় জন মাত্র। মনের জোর এতটাই বেশি ছিল যে এই কিছু সংখ্যক সদস্য নিয়েই তৈরি হয় “সমাগম” যার অর্থই হল “মানুষের সম্মেলন” এবং যার উদ্দেশ্যেই হল “মানুষের হয়ে,মানুষের পাশে দাঁড়ানো”। যদিও পরবর্তীকালে ধিরে ধিরে এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ১৫ তে এসে দাঁড়িয়েছে।

    কর্ণধার প্রীতি পাল বলেন,”আমাদের আলোচনা পর্বে সমাগমের সূচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এবং এই কর্মসূচির পেছনে আমাদের দুটো উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমরা সমাজের মধ্যে গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে সকলকে জাগরিত করতে চেয়েছিলাম এবং দ্বিতীয়ত, যেমন বলা হয়ে থাকে “একটি গাছ, একটি প্রাণ” ঠিক তেমন ভাবেই বৃক্ষরোপণের দ্বারা গাছের প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা সমাগমের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি। ঠিক যেমন ভাবে গাছ বড়ো হয়ে নিজের ডাল পালা বিস্তার করে আশ্রয় হয়ে ওঠে, ঠিক তেমন ভাবেই “সমাগম” যেন এই সমাজ তথা সমাজের অসহায় মানুষদের আশ্রয় হয়ে ওঠতে পারে। এই কর্মসূচি সম্পাদনের জন্য আমরা ব্লক অফিস তথা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে অনুমতি নিলেও কোনোরকম সহযোগিতা ছাড়াই শুধুমাত্র সমাগমের সদস্যদের সহযোগিতা ও সম্মেলনে ১৪ই অক্টোবর কুশিদার গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বর , স্কুল ও বাঁধের দুই ধারে গাছ লাগানোর মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান সম্পাদিত করি। আমাদের গ্রাম কুশিদা তথা তার পাশ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী আরও অনেক কাজ করার উদ্দেশ্য নিয়ে সমাগম এগিয়ে চলেছে। আশা করি সমস্ত গ্রামবাসী আমাদের সহযোগিতা করবে এবং আমাদের এই কাজে এগিয়ে আসবে।সোশ্যাল মিডিয়ার ডাকে ধিরে ধিরে স্ব-ইচ্ছায় সমাগমে যুক্ত হন মৌসুমি দাস, সৌমশ্রী চক্রবর্তী, পূজা পাল, অনামিকা রায়, রিঙ্কি দাস, রিমা দাস, অর্চিতা দাস, লাবনী থোকদার, সঙ্গীতা মন্ডল, সঙ্গীতা রায়, টুকি দাস, রবি সাহা, বিকি কর্মকার, মনিকা দাস ও রাজেস রায়।

    বিডিও অণির্বান বসু জানান,দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের মতো সামাজিক আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে। শুধু জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান বা বৃক্ষমেলার সময় নয় নিজ নিজ উদ্যোগে প্রত্যেক সচেতন মানুষকে সময়-সুযোগ বুঝে বৃক্ষরোপণে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোকে উপলক্ষ করে বৃক্ষরোপণ করলে সেটা ভালো কাজ দেবে। যেমন সেটা হতে পারে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ নিজ জন্মদিনে, সন্তানের জন্মদিনে, সন্তানের প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিন, বিবাহ বার্ষিকীতে, বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের নামে, পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনে বা অন্য কোনো বিশেষ কারণে ইত্যাদি।