প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের পড়ুয়াদের মধ্যে এ বিষয়ে সম্যক ধারণা তৈরি করতে এগিয়ে এলো গ্রামীণ হাওড়া আমতার অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ

নিজস্ব সংবাদদাতা : কোন পথে গেলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব, তার জন্য কিভাবে প্রস্তুতি প্রয়োজন সে সম্পর্কে ওদের বেশিরভাগই অজানা। কার পক্ষে কোন পথটা হতে পারে আদর্শ! মেধা থাকার পরও নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও সঠিক গাইডেন্স এর অভাবে কার্যত খেই হারিয়ে ফেলেন বহু ছাত্র-ছাত্রী। বিক্রম, অরিজিৎ, স্বর্ণালী, মনিকা কেউ এবার মাধ্যমিক পাস করেছে কেউ কলেজ জীবনে প্রবেশ করবে। এদের কেউ চিকিৎসক, কেউ সরকারি আমলা, কেউ গবেষক হতে চায়। কিন্তু ঠিক কোন পথে গেলে নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব! সেটা অজানা অনেকেরই। এবার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের পড়ুয়াদের মধ্যে এ বিষয়ে সম্যক ধারণা তৈরি করতে এগিয়ে এলো গ্রামীণ হাওড়া আমতার অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’। রবিবার দুপুরে আমতা-১ ব্লকের উদং উচ্চ বিদ্যালয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি কেরিয়ার গাইডেন্স শিবিরের আয়োজন করা হয়।

    গ্রামীণ হাওড়ার আমতা, বাগনান, উদয়নারায়নপুর, উলুবেরিয়া সহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পড়ুয়া এই শিবিরে অংশগ্রহণ করেন। শিবিরে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাঁথি-২ ব্লকের বিডিও (BDO)শুভজিৎ জানা, ডব্লুবিসিএস(WBCS) অফিসার প্রশান্ত মহাপাত্র, খড়গপুর আইআইটি গবেষক অরিজিৎ জানা, আমতা পোস্টাল সাব ডিভিশনের ইন্সপেক্টর রাজু সিং সহ অন্যান্যরা। কীভাবে একজন পড়ুয়া গ্রাজুয়েশনের পর ডব্লুবিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেবেন তার জন্য কিভাবে পড়াশোনা প্রয়োজন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন প্রশান্ত মহাপাত্র। আবার কমার্সের কৃতি ছাত্র পার্থ চ্যাটার্জি পড়ুয়াদের সামনে কমার্স নিয়ে আলোচনা করলেন।প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল থেকে পড়াশোনা করেও কিভাবে প্রধানমন্ত্রী রিসার্চ ফেলো হিসেবে খড়গপুর আইআইটিতে (IIT) গবেষণার কাজ চালাচ্ছেন সেই কাহিনী সবার সামনে তুলে ধরলেন অরজিৎ জানা। আবার পার্থ খাঁ,কেয়া প্রধানরা ইঞ্জিনিয়ারিং নার্সিং প্যারামেডিকেল সহ বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ে আলোচনা করলেন।

    সংগঠনের কর্তা পৃথ্বীশরাজ কুন্তী জানান, শিক্ষায় স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সংগঠনের পথ চলা। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে গিয়ে সংগঠন মনে হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর গ্রাম অঞ্চলের বহু পড়ুয়া দিশাহীন হয়ে পড়ে। অনেকেই জানেনা চাকরি ক্ষেত্রে কতগুলো দিক রয়েছে। এসব বিষয় সম্পর্কে পড়ুয়াদের মধ্যে একটা ধারণা গড়ে তুলতেই এই উদ্যোগ। এই শিবিরে বক্তা হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন কাঁথি-২ নম্বর ব্লকের বিডিও শুভজিৎ জানা। তাঁর কথায়, এটা ভীষন প্রয়োজনীয় একটা পদক্ষেপ। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার পর কী পড়াশোনা করলে কী হওয়া যায় এটা জানতেই বেশ কিছুটা সময় কেটে যায়। তিনি বলেন, পড়ুয়ারা এই শিবির থেকে আগামীর লক্ষ্যের যেমন সম্যক ধারণা পেল, তেমনই অনেকটা মোটিভেটও হল। শিবিরে ঘণ্টা তিনেকের আলোচনা শেষে চলে প্রশ্নোত্তর পর্ব। শিবিরে অংশ নেওয়া পড়ুয়ারা বিভিন্ন প্রশ্ন রাখলেন। তাঁদের প্রশ্নের উত্তর সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিলেন কিঞ্জল সেনগুপ্ত, প্রশান্ত মহাপত্ররা।শিবিরের অংশ নিয়েছিলেন সোনামুই ফতে সিং নাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সৌমিতা মল্লিক। সৌমিতার কথায়, “আমাদের দেশে প্রায় আড়াইশো বেশি বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্স রয়েছে যা আমার সম্পূর্ণ অজানা ছিল এখানে এসে অনেক কিছু জানলাম\” আবার আমতা উদং উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সাগর ঘোড়ুই এর কথায়, আমি পুলিশের চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করব। তার আগে এই শিবিরে এসে কিভাবে পুলিশ হওয়া সম্ভব সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারলাম।