ভালোবাসা দিবস ও ইসলাম

আসিফ আলোম, মুর্শিদাবাদ

    ভালোবাসা দিবসের যে সংজ্ঞা, যে অর্থ বা উদ্দেশ্য হোক না কেন বর্তমানে ভালোবাসা দিবস বলতে যেটা স্পষ্ট সেটা হচ্ছে দুজন যুবক-যুবতি পার্কের বা কোন নির্জন জায়গায় বসে অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হওয়া।অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা, মুর্খামিতার বর্তমান নাম ভালোবাসা দিবস!প্রেম-ভালোবাসার নামে সমাজে প্রতিনিয়ত চলছে অশ্লীলতা ও ধোঁকাবাজি।বিভিন্ন নাম (রোজ ডে,কিস ডে, ভ্যালেন্টাইন ডে,) নানা রকম ডে এর নামে ছেলেমেয়েরা জড়িয়ে পড়ছে অবৈধ সম্পর্কে। নষ্ট করছে নিজেদের জীবন,নস্ট করছে পরিবার ।
    এই বেহায়াপনায় পিছেয়ে নেই বিবাহিত মহিলারাও। বর্তমানে সমাজে মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পরকীয়া। বর্তমান সমাজের এই আবেগ মিশ্রিত অশ্লীল কামুক ভাব ভালোবাসার নামেই চলছে। এইরকম বিভিন্ন নাম দিয়ে অশ্লীলতা সমাজে বেড়েই চলেছে , যার ফলশ্রুতি হিসেবে পারিবারিক বিবাদ, ডিভোর্স, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস! পরিশেষে অবৈধ সন্তানের জন্ম! যার পাপমোচন হয় গর্ভের শিশুটির মৃত্যুর মাধ্যমে।
    শুধু জীবন কেড়ে নেয় না বরং একটা পরিবারকে ধূলিসাৎ করে দেয়,ভেঙে যায় কত সুন্দর সুখের সংসার, সুন্দর ভাবে সমাজে জীবন যাপনে বাধা সৃষ্টি করে কিন্তু, তবুও আমরা আবেগের বশীভূত হয়ে ছুটে চলি ভালোবাসা নামক অস্তিত্ব বিহীন মরিচিকার পিছুনে।বিভিন্ন বিনোদন পার্কে, রেষ্টুরেন্টে,ছোট বড় হোটেল,আবাসনে, এখন তো ট্রেনে,বাসে, মেট্রো তে প্রতিনিয়ত দেখা যায় বিবাহিত মহিলা থেকে শুরু করে স্কুল কলেজের ছাত্র/ছাত্রী কে, দিনের পর দিন ক্লাস ও সংসার ফাঁকি দিয়ে প্রেমের দোহাই দিয়ে করছে অশ্লীলতা, প্রেম ভালোবাসা মানে শারীরিক সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত ।
    এসব কার্যকলাপ দেখে যে প্রশ্নটি জাগছে সেটি হচ্ছে “প্রেমের টানে শরীর নাকি শরীরের টানে প্রেম” ?
    তাহলে এই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে বাঁচার বা পরিত্রাণের উপায় কী?
    আমার মতে এ থেকে বাঁচার দুটি উপায়ে। প্রথমত : ধর্ম বা আল্লাহর ভয় এর মাধ্যমে দ্বিতীয়তঃ এসবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি আইন করে। যদিও আইনের থেকে আল্লাহর ভয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মানুষ সুযোগে সদ্ব্যবহার করতে ছাড়ে না।
    এই বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ইসলাম চরম ভাবে নিষেধ করেছে এবং ভয়াবহ শাস্তির কথা বলেছে।
    ইসলাম যেহেতু নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছে সেহেতু ইসলামে বিয়ের পূর্বে প্রেমও নিষিদ্ধ।
    আর প্রেম ভালোবাসার নামে সমাজে যে বেহায়াপনা অশ্লীলতা চলছে এগুলো সবই জেনা বা ব্যভিচারের অন্তর্ভুক্ত।
    রাসুল (স.) বলেছেনঃ “কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের যিনা , অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার যিনা , অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের যিনা , ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের যিনা , খারাপ কথা শোনা কানের যিনা , আর যিনার কল্পণা করা ও আকাংখা করা মনের যিনা। অতঃপর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয় ”। [ সহীহ – বুখারী , মিশকাত : ৮৬ , সহীহ – মুসলিম : ২৬৫৭ ]
    জেনা হারাম ও অত্যন্ত মন্দ কাজ। আল্লাহ জেনাকে হারাম ঘোষণা করে বলেছেন , “তোমরা জেনার কাছেও যাবে না। কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং খারাপ কাজ। ” [ সুরা বনী-ইসরাঈলঃ ৩২ ]
    রাসুল ( স.) বলেছেন , “আল্লাহর দৃষ্টিতে শিরকের পর সবচাইতে বড় গুনাহ হচ্ছে এমন কোন জরায়ুতে একফোটা বীর্য ফেলা , যা আল্লাহ তার জন্য হালাল করেন নি।” [ সহীহ বুখারী ]
    যে সব বড় পাপ করলে দুনিয়াতেই কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে জেনা তার মধ্যে অন্যতম।
    দুনিয়াতে দু ‘ টি বড় পাপের প্রতিক্রয়া খুবই নিন্দনীয়। জেনা তার একটি।
    জেনাকারীর বাস্তব বিচার বা সামাজিক বিচার যেমন অপমানজনক তেমনি সমাজে দুর্নাম ছড়িয়ে যাওয়াও অপমানজনক।
    কাজেই যেনাকারী ইহকালেও ক্ষতিগ্রস্ত , পরকালেও ক্ষতিগ্রস্ত।
    দুনিয়াতে জেনাকারি পুরুষ ও মহিলার জন্য 100 বেত্রাঘাত মারার নির্দেশ রয়েছে পবিত্র কোরানে।(সূরা নূর – 2)
    আর পরকালেও রয়েছে এর ভয়াবহ শাস্তি।
    হযরত জুন্দব রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত জান্নাত-জাহান্নাম অবলোকন সম্পর্কিত দীর্ঘ একটি হাদীছে রসূল (স.) বলেন “ভ্রমণের একপর্যায়ে আমরা বিশাল একটি তন্দুরের মত বস্তুর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। এতে খুবই চিৎকার ও আক্ষেপের আওয়াজ শুনতে পেলাম। কাছে গিয়ে দেখলাম, সেখানে কিছু উলঙ্গ পুরুষ ও নারী। দেখলাম, তাদের নীচ থেকে আগুনের লেলিহান শিখা বের হচ্ছে। ভ্রমণ শেষে আমার সাথীদ্বয় বললো, তন্দুরের মত বস্তুতে যাদের দেখছেন, তারা হলো, জেনাকারী পুরুষ ও জেনাকারী নারী (বুখারীতে ৬৬৪০) ।