ভাঙচোরা ঠাকুর দালান আজও যেন ইতিহাস! এখনও কয়েকটি মন্দির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে জমিদারিকালের

নিজস্ব সংবাদদাতা : ভাঙচোরা ঠাকুর দালান আজও যেন ইতিহাস বলে চলে। এদিকে ওদিকে কয়েকটি মন্দির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে জমিদারিকালের । তবে সে জৌলুস যে আর নেই, তা বোঝাই যায়। একটা সময় দেবানন্দপুরে জমিদারি ছিল দত্ত মুন্সিদের। ১৫৮১ সালে কনৌজ থেকে এদেশে এসে জমিদারি পত্তন করেন দত্ত মুন্সিদের পঞ্চদশ পুরুষ কামদেব দত্ত।কামদেবই দুর্গা পুজোর সূচনা করেন বলে কথিত।মূলত কাঠের ব্যবসায় প্রতিপত্তি বেড়েছিল দত্ত মুন্সিদের। সেসময় সপ্তগ্রাম বন্দরে সরস্বতী নদী দিয়ে বাণিজ্য হত ।সেই সরস্বতী নদীর পূর্ব প্রান্তে দেবানন্দপুর ছিল সে সময়ে বর্ধিঞ্চু গ্রাম । আজ পোড়োবাড়ি, শ্যাওলা পড়া ইট,পলেস্তারা খসে পড়া দেওয়ালে কান পাতলে কি কথা বলবে ইতিহাস ? গাছপালার জঙ্গলে ছড়িয়ে রয়েছে মন্দির, ভগ্নপ্রায় বাড়ির একাংশ, ঠাকুর দালান। স্তম্ভের উপরে ছাদ ভেঙে পড়ায় দালানের কিছুটা অংশে নতুন ছাদ ঢালা হয়েছে। তার তলাতেই হয় পুজো।

    দত্ত মুন্সিদের দুর্গাপুজোই ( Durga Puja ) ছিল আশপাশের গ্রামের মানুষজনের একমাত্র আকর্ষণ। পুজোর দিনগুলোতে এখানেই উৎসবে মেতে উঠত গ্রামের মানুষ। পরিবার বড় হয়েছে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছেন দত্ত মুন্সিদের পরিবারদের সদস্যরা।পুজোর সময় কেউ কেউ আসেন পিতৃপুরুষের ভিটেতে।বর্তমানে সেই পুজোর জৌলুস হারিয়েছে। তবে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে এই পুজো। দত্ত মুন্সিদের তিনটি পরিবার – বড়বাড়ি, নতুনবাড়ি ও ফুলিরতলা বাড়ি। পালা করে পুজোর দায়িত্ব নেয় তিন বাড়ি। একচালার পাঁচ পোয়া মাপের দুর্গা প্রতিমার কোনো পরিবর্তন আজও হয়নি। নবমীতে চাল কুমড়ো বলি দেওয়ার প্রথা আছে। দশমীতে দত্ত মুন্সি পরিবারের মহিলারা ঠাকুর বরণ করে সিঁদুর খেলেন। তারপর হয় বিসর্জন। আগে জমিদার গিন্নিরা বজরা করে স্নান করতে যেতেন ত্রিবেণীতে। তাঁদের জন্য তৈরি করা হয় জেলে ঘাট। সরস্বতী নদীর সেই জেলে ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হয়। বিসর্জনে যাওয়ার আগে গ্রামের বিশালাক্ষ্মী মন্দির ও কালী মন্দিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয় প্রতিমা।দেবানন্দপুর কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান। বলতে গেলে শরৎচন্দ্রের গ্রামের পুজো ছিল দত্ত মুন্সিদের পুজো। বর্তমানে দত্ত মুন্সিদের বংশের যারা জীবিত আছেন তাঁরা বলেন, তাদের পূর্বপুরুষের কাছে শুনেছেন, এই পুজো দেখতে আসতেন শরৎচন্দ্র।