|
---|
নূর মোহাম্মদ খান : ২৪ শে জুন কয়েক হাজার আপার প্রাইমারী চাকরি প্রার্থী ভার্চুয়াল অনশন মঞ্চে সকাল ছটা থেকে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত অনশন কর্মসূচী পালন করলেন । স্কুল সার্ভিস কমিশনের চূড়ান্ত গাফিলতিতে উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সাত বছরে পা দিল। ইন্টারভিউতে অংশ নেওয়ার জন্য ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন থেকেই শুরু হয় অস্বচ্ছতা। বেশী স্কোরের নিয়োগপ্রার্থী ভেরিফিকশনে ডাক না পেলেও ডাক পায় বহু কম স্কোরের নিয়োগপ্রার্থী। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার নিয়োগপ্রার্থী আদালতে দারস্থ হন এবং আদালতের রায়ে ভেরিফিকেশন ও ইন্টারভিউতে অংশ নেন। এভাবেই গেজেট তথা নিয়োগ বিধি লঙ্ঘণের অভিযোগে বারেবারে থমকে গেছে আপার প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ পক্রিয়া। বহু আন্দোলন ও আইনী লড়াইয়ের পর আদালতের নির্দেশে প্রকাশিত হয়েছে মেধা তালিকা। আর এই মেধা তালিকাতেও দেখা গেছে বিস্তর অসঙ্গতি। ইন্টারভিউতে অংশ নেওয়া সব প্রার্থীদের নাম মেধা তালিকায় নেই। টেট ও অ্যাকাডেমিক স্কোরের ক্ষেত্রে ভুরি ভুরি অনিয়ম।আবেদনে নিজেকে অপ্রশিক্ষিত ঘোষণা করা প্রার্থীকেও প্রশিক্ষিত দেখিয়ে প্রশিক্ষণের নম্বর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয় ও ক্যাটাগরী ভিত্তিক প্রার্থী ও শূণ্যপদের ১: ১.৪ অনুপাত মানা হয়নি। সাত বছরের শূণ্যপদ ও নবস্থাপিত বিদ্যালয় গুলির অনুমোদিত ৫১০৮ টি শূণ্যপদ ফাইনাল ভেকেন্সীতে যুক্ত হয়নি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেই শূণ্য পদে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নেওয়ার কথা নিয়োগবিধিতে বলা থাকলেও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী না থাকা এসসি, এসটি, ওবিসি ও প্রতিবন্ধী ইত্যাদি সংরক্ষিত শূণ্যপদগুলি থেকে সমাজের প্রান্তিক অংশের অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীদের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে,তাদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়নি। অর্থাৎ মেধাতালিকা প্রস্তুতিতেও গেজেট তথা নিয়োগ বিধিকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। আর এই ভুলে ভরা মেধাতালিকা সংশোধনের দাবীতে নিয়োগপ্রার্থীদের ১২ হাজারের বেশী অভিযোগ কমিশনে জমা পড়লেও ত্রুটি সংশোধনে কমিশনের সদর্থক উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তাই মামলার অজুহাত না দিয়ে যেসব অসঙ্গতির কারণে এত মামলা সেগুলির দ্রুত সংশোধনের দাবীতে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হলো আপার প্রাইমারী সংগ্রামী মঞ্চের ভার্চুয়াল মঞ্চে আজকের অনশন।গেজেট তথা নিয়োগ বিধিকে মান্যতা দিয়ে অসঙ্গতি দূর করে মামলা মিটিয়ে দ্রুত নিয়োগের দাবীতে লকডাউনের মধ্যেই ৫ই জুন স্কুল সার্ভিস কমিশনে “গেজেট পাঠাও গেজেট পড়াও” শীর্ষক গণ ইমেল কর্মসূচী পালন , ৮ ই জুন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, রেজিস্টার জেনারেল ও আইনমন্ত্রীর কাছে নিয়োগপ্রার্থীদের স্বাক্ষরিত “অনলাইন পিটিশন” জমাকরণ কর্মসূচী নেয় আপার প্রাইমারী সংগ্রামী মঞ্চ। কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আবারও আজ ২৪ শে জুন আপার প্রাইমারী সংগ্রামী মঞ্চের ডাকে ভার্চুয়াল অনশণমঞ্চে কয়েক হাজার নিয়োগপ্রার্থী লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে একদিনের গণ অনশনে সামিল হলেন।এই ভার্চুয়াল অনশন মঞ্চে নিয়োগ প্রার্থীদের পাশাপাশি সামিল হলেন রাজ্যের বিশিষ্টজনেরা। ভার্চুয়াল অনশন মঞ্চে বক্তব্য রাখলেন প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকার, অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র, অধ্যাপিকা নন্দিনী মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন অধ্যক্ষা দীপালী ভট্টাচার্য, নাট্যকার চন্দন সেন, চিত্রপরিচালক অনীক দত্ত, অলচিকি লিপির কবি লেখক সারদা প্রসাদ কিস্কু,আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত আদিবাসী পরগনার বাপি সোরেন। প্রত্যেকেই তাদের দাবিকে ন্যায়সঙ্গত বলে জানিয়েছেন । আপার প্রাইমারী সংগ্রামী মঞ্চের পক্ষে এই অনশণমঞ্চ থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য সরকারকে চব্বিশে জুলাই সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন না হলে আপার প্রাইমারী চাকরি প্রার্থীরা পরিবার পরিজন সহ অনির্দিষ্টকাল অনশণের দিকে যেতে বাধ্য হবে এবং তাদের দাবি না মিটিয়ে সেই অনশন তুলতে প্রশাসনিক বাধা এলে তাঁরা নবান্ন অভিযানে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন আপার প্রাইমারী সংগ্রামী মঞ্চের সদস্যরা।