পদত্যাগ বিজয় রুপানির, চাপে গুজরাটের গেরুয়া শিবির

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: ২০২২-এর শীতে গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন৷ তার ঠিক এক বছরের কিছু বেশি সময় বাকি থাকতে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে হঠাৎ ইস্তফা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানিকে৷ প্রাথমিক ভাবে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তে চমকে উঠেছিল গোটা দেশের রাজনৈতিক মহল৷ রুপানির ইস্তফার পর বিজেপি-র অন্দরের খবর বলছে, দলের নির্দেশেই পদত্যাগ করতে হল গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে৷ কারণ নরেন্দ্র মোদদি এবং অমিত শাহের নিজের রাজ্য গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পারফরম্যান্সে একেবারেই খুশি ছিলেন না দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷

    ২০২৪-এ নরেন্দ্র মোদি সরকারের চূড়ান্ত পরীক্ষা৷ কিন্তু ২০২৪-এর পরীক্ষার আগে আগামী বছর উত্তর প্রদেশ ও গুজরাতের নির্বাচন বিজেপি-র কাছে অ্যাসিড টেস্ট৷ তাই আগেভাগেই সতর্ক পদক্ষেপ ফেলতে চাইছে বিজেপি৷ দলের অন্দরের খবর বলছে, রুপানির কাজে দলের রাজ্য নেতাদের একটা বড় অংশ তো বটেই, দলের শীর্ষ নেতৃত্বও চূড়ান্ত হতাশ ছিলেন৷ অভিযোগ, সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে দলের পরামর্শ শুনছিলেন না রুপানি৷ মানুষের মনেও ক্ষোভ জমছিল৷ আর এই সবকিছুর গুজরাতে দলের মধ্যে বিভাজনও তৈরি হচ্ছিল৷

    পাঁচ বছর আগে গুজরাতে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলেও রাহুল গান্ধির নেতৃত্ব কংগ্রেস খুব একটা খারাপ লড়াই দেয়নি৷ বিশেষত ভোট গণনার শুরুর দিকে তো গুজরাতে বিজেপি নেতাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস৷ ফলে গুজরাতে কংগ্রেসের জনভিত্তি রয়েইছে৷ হার্দিক প্যাটেলের মতো নেতা ২০১৯ সালে যোগ দেওয়ার পর গুজরাতে আরও চাঙ্গা হয়েছে কংগ্রেস৷ তার উপর গুজরাতে নিজেদের পায়ের তলার জমি শক্ত করতে শুরু করেছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি৷

    গুজরাতে সাম্প্রতিক পুরসভা নির্বাচনে সুরাতে দুর্দান্ত ফল করেছে আপ৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজে গুজরাত সফরে গিয়েছেন৷ ২০২২-এ গুজরাতে ভাল ফলের চেষ্টা করছে আপ৷ ২০২২-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে গান্ধিনগরে স্থানীয় ভোট রয়েছে৷ যার ফলও বিধানসভা নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে৷ এই পরিস্থিতিতে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলের নেতা এবং সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জমতে থাকলে তার ফায়দা তুলতে ভুল করবে না কংগ্রেস, আপের মতো বিরোধী দলগুলি৷ আর কোনও ভাবে গুজরাতে পা হড়কালে তা সরাসরি মোদি- শাহের প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে৷ তাই সময় থাকতে থাকতেই সরানো হল রুপানিকে৷

    পদত্যাগের পর বিজয় রুপানিকে বলেছেন, ‘আমার মতো দলের একজন কর্মীকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টিকে ধন্যবাদ৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের দায়িত্ব বদল করাটাই বিজেপি-র ঐতিহ্য৷দল যে দায়িত্ব দেয়, কর্মীরা মন দিয়ে তা পালন করেন৷ আমাকেও যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি৷ মুখ্যমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেওয়ার পর দলীয় সংগঠনে নতুন উদ্যমে কাজ করার জন্য নেতৃত্বের কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেছি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গুজরাতের উন্নয়ন এগিয়ে যাবে৷’

    ফলে, আপাতত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, কর্ণাটক, উত্তরাখণ্ডের মতো গুজরাতেও সরকারের ভাবমূর্তি ফেরাতে নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিতে চলেছে বিজেপি৷ যদিও বিধানসভা নির্বাচনের আগে কাকে গুজরাতের মসনদে বসাবেন মোদি-শাহরা, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ প্রাথমিক ভাবে গুজরাতের উপমুখ্যমন্ত্রী নীতীন প্যাটেল এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্যের নাম উঠে আসছে৷ যদিও মনসুখ মান্ডব্যকে কয়ক মাস আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ তবে রুপানির উত্তরসূরি কে হচ্ছেন, আজকের মধ্যেই তার স্পষট্ আভাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ অতীতে নরেন্দ্র মোদির মতো কেন্দ্রীয় নেতাকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী করে সাফল্য পেয়েছে বিজেপি৷ এবারেও সেই ফর্মুলা প্রয়োগ করা হবে, নাকি রাজ্যের বিধায়কদের মধ্যে থেকেই কাউকে বেছে নেওয়া হবে, সেটাই এখন দেখার৷