|
---|
মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ,চাঁচল :
দেশের দারিদ্রতা ও বেকারত্ব প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।দারিদ্রতা ও বেকারত্বের ছোঁবল দেশের শ্রমিক-শ্রেণীর উপর সব থেকে বেশি লক্ষনীয়। দেশের দরিদ্র বিমোচন ও বেকারত্ব দূরীকরণে সরকার বা কতৃপক্ষের তেমন সু-পদক্ষেপ এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কোন দেশ দারিদ্রতা ও বেকারত্বের বোঝা নিয়ে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারে না।ভারতীয় সরকারের এই দুই বিষয়ের প্রতি নীরবতা প্রকাশ করে যে তাঁরা উন্নয়নশীল দেশেই তাঁদের রাজনৈতিক ধান্দা চালিয়ে যাবেন,ভারতকে তাঁরা উন্নত বিশ্বের কাতারে উপস্থিত হতে দিবেন না।বেকারত্বের সমস্যা অনবরত বেড়ে চলায় শ্রমিকশ্রেণী দিকশূণ্য হয়ে পড়ছে স্বভূমিতে। এই সমস্যার মোকাবিলা করতে পারছে না সমাজের তৃতীয় শ্রেণীর অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণীর মানুষেরা।মোদি ও আদানি-আম্বানির পরগাছা পুঁজিবাদ (ক্রোনি ক্যাপিটালিজম) ধ্বংস করছে দেশের অর্থনীতিকে।
বেকারত্বের ও দারিদ্রতার গ্লানি থেকে মুক্তির আশায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক দেশে কাজ না পেয়ে স্বপ্ন পূরণের জন্য দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেয়। অক্লান্ত পরিশ্রম করে যা রোজগার করে সেটাও পাঠিয়ে দেয় স্বভূমিতে। শত কষ্ট, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা সহ্য করে আপনজনের মুখে হাসি ফোটানোর তাগিদে দিনের পর দিন কলুর বলদের মত খেটে চলেছে তারা ।দেশের মায়া-মমতা ত্যাগ করে আপনজনের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ভিনদেশে কষ্টের জীবনকে আপন মনে করেন তাঁরা। বেশিরভাগ শ্রমিক দালাল চক্রের খবলে পরে ‘ট্যুরিস্ট ভিসা’ নিয়ে পারি দিচ্ছেন বিদেশ বিভুঁইয়ে।তাঁরা অনেকেই ‘ওয়ার্ক পারমিট’ অর্থাৎ কাজের ছাড় পত্রের ধারে কাছে পোঁছাতে পারছেন না দুষ্ট-চক্রের কারণে। দালাল চক্র তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিরক্ষর শ্রমিকদের বোকা বানিয়ে ধোকা দিতে একটুও দ্বিধাগ্রস্ত নয়। বেশিরভাগ পরিযায়ী শ্রমিক( মাইগ্রান্ট লেবার) -রা হয় অশিক্ষিত, তাই তারা ‘ট্যুরিস্ট ভিসা’ ও ‘ওয়ার্ক পারমিট ‘- এর মধ্যে পার্থক্য বুঝেন না।’ওয়ার্ক-পারমিট’ হলো বিদেশে কাজের অনুমতিপত্র যা সংশিষ্ট দেশের লেবার ডিপার্টমেন্ট থেকে সরবরাহ করা হয়।বিদেশে চাকুরী করার জন্য। ‘ওয়ার্ক-পারমিট’ প্রয়োজন।অনেক দেশেই বিমানবন্দরে শ্রমিকদের ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্সের সময় এক বছরের ‘ওয়ার্ক-পারমিট’ এনডোরস্ড করা হয়।
আবার কোন কোন দেশে লেবার অফিস থেকে এই ‘ওয়ার্ক-পারমিট’ দেওয়া হয়।
দালাল চক্রের প্রলোভনে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বিদেশের মাটিতে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিসা শেষ হতেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাঁদের মধ্যে অনেকের কাছে সঠিক প্রমাণাদি না থাকার কারণে বিপদ নেমে আসে প্রবাস জীবনে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলির নিজস্ব কঠিন নিয়ম থাকার কারণে বিদেশ- বিভুঁইয়ে তাঁদের জেলের অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। কে এই নিপীড়িত পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবে? এটা লজ্জার বিষয় যে ভারত মাতার সন্তান হয়েও অনেক পরিযায়ী শ্রমিক দালাল চক্রের কারণে বছরের পর বছর ধরে ভিন্ন দেশের জেলের অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করে চলেছে। ভারত সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না এই বিষয়ে উপর। সরকারের এই শ্রমিকদের প্রতি ভ্রুক্ষেপহীনতা বাড়িয়ে দিচ্ছে দালাল চক্র।দিন দিন দালাল চক্র বেড়েই চলেছে ভারত জুড়ে।
‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’ আবার সরব হয়েছে প্রায় ১৬০ জন ভারতীয় পরিযায়ী শ্রমিকদের আজারবাইজানে জেল-বন্দি হওয়া নিয়ে। তাঁরা দালাল চক্রের চক্রান্তে পরে আজারবাইজানে বন্দি এখন।
এই ভাবেই ওড়িশার কাইনা গ্রামের বাসিন্দা শেখ আলিমুদ্দিন ভাগ্য বদলের আশায় ভিন্ন দেশে পারি দিয়েছিলেন।
জীবনের তাগিদে স্বভূমি থেকে বিদেশে পাড়ি জমান, সুখের আশায় একটু ভালো থাকার আশায়। কিন্তু শেখ আলিমুদ্দিন নিজের জীবনের সুখ কিনতে কিনতে প্রবাস জীবনে তার সুখ কখন যে বিক্রি হয়েগেছে প্রবাস নামের বাজারে তা সে জানতে পারেনি। অনেক সুখের আশায় পরিবার পরিজন ছেড়ে গিয়েছিল প্রবাসে। শুধু আপন জনের মুখে একটু হাসি এনে দিতে। P6594550 নং -এর পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও ভিসা সংক্রান্ত গোলযোগের কারণে তিনি গত এক বছর ধরে আজারবাইজানে জেল-বন্দি আছেন এবং ১০ বছরের কারাদণ্ডে দন্ডিত তিনি। এই দরিদ্র শেখ আলিমুদ্দিনের পরিবারে দুঃখের কালো ছায়া পড়েছে। অলিমুদ্দিন শেকের পরিবারে তার বৃদ্ধ মায়ের করুন কান্না এবং স্বামীহারা স্ত্রীর নিরাশার চাদরে ঢেকে যাওয়া ‘বাংলা সাংস্কৃতি মঞ্চ’-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই বিষয়টির টুইটারের মাধ্যমে বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের, আজারবাইজান এমবাসি(বাঁকু) ও ওড়িশার মূখ্য-মন্ত্রী নবীন পট্টনায়ককে জানানো হয়েছে।কিন্তু এখনোও পর্যন্ত কোন সু-পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।’বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’ এই হত দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সমাজের বুদ্ধিজীবীদের ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে সোচ্চার হতে পিছপা হচ্ছে না।