কেন বলা হয় যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে বাঘাযতীন?

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৭৯ সালের ২ রা ডিসেম্বর নদীয়া জেলার কুষ্টিয়াতে। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে দেশের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন তিনি। কর্মজীবনে তিনি সরকারি চাকুরে ছিলেন। খুব শান্তিপূর্ণভাবে নিজের জীবন কাটাতে পারতেন তিনি, তবে তা তিনি করেননি। দেশ সেবায় নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তাকে আমরা বাঘাযতীন বলে চিনি।

    তার মামার বাড়ি যেখানে ছিল সেখানে একটি বাঘ খুব উৎপাত করছো। গ্রামবাসীরা তার জন্য খুব আতঙ্কে দিন কাটাতো। তিনি ও তার মামাতো ভাই ফনি বাবু ঠিক করলেন বাঘটিকে মারবেন। এই জন্য সকলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বাঘ মারতে বেরিয়ে পড়লেন। তন্ন তন্ন করে গোটা গ্রাম খোঁজবার পরেও বাঘের সন্ধান পেলেন না তারা। এরপরে গ্রামের কাছে জঙ্গলের মধ্যে বাঘের শিকার করবেন বলে সকল গ্রামবাসীরা ঠিক করলেন। ফনি বাবু জঙ্গলের দিকে বন্দুক তাক করে রেখেছিলেন , কোন কারণে বাঘটি এই ব্যাপারটা বুঝতে পারে। সেই কারণে জঙ্গলের পেছনে বের হয়েছিল পাল্টা আক্রমণ করার জন্য। ফনিবাবু তাও গুলি চালিয়েছিলেন , কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বাঘের মাথা ঘেঁষে গুলিটি চলে যায়। এরপরে বাঘটি আরও হিংস্র হয়ে পড়ে। এবং সবার প্রথমে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় কে আক্রমণ করে।

    যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এর হাতে সামান্য একটি ভোজালি ছিল। তিনিও পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন বাঘটিকে। দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি অনেকক্ষণ চলেছিল। বাঘের কামড়ে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাও তিনি হাল ছাড়েননি । অবশেষে তিনি বাঘটিকে মেরে ফেলেন। এরপর থেকেই তিনি আমাদের কাছে বিপ্লবী বাঘাযতীন নামে খ্যাত। তবে মারাত্মক রকম জখম হয়েছিলেন তিনি। সারা শরীরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল তার। তবে তার মামারা চিকিৎসার কোনো ত্রুটি রাখেনি। সবচেয়ে বেশি যখম হয়েছিল তার পা দুটি। অবশেষে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠেন বাঘাযতীন।

    ইংরেজদের কাছে তিনি ত্রাস ছিলেন । ইংরেজরা তাকে দেখলে ভয়ে কাঁপতো। একসঙ্গে তিন চার জন ইংরেজ কে পেটানো তার কাছে কোন ব্যাপারই ছিল না । বারংবার একসাথে তিন চার জনকে পিটিয়ে ছিলেন তিনি। অন্যায় দেখতে পারতেন না বাঘাযতীন। যেখানে অন্যায় দেখতেন সেখানেই তিনি প্রতিবাদ করতেন।

    ১৯১৫ সালে ইংরেজদের সাথে বুড়িবালামের যুদ্ধে মারাত্মকভাবে জখম হয়েছিলেন তিনি। জখম এতটাই বাড়াবাড়ি ছিল , তিনি আর সুস্থ হতে পারেননি। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন বাঘাযতীন।