|
---|
জাকির হোসেন সেখ, নতুন গতি: ১৯৭৫ সালের ৮ ই মার্চ জাতিসংঘ থেকে এই দিনটিকে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারপর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ নারী অধিকার ও বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য সদস্য রাষ্ট্রদের জাতিসংঘ দিবস হিসাবে ৮ মার্চকে ঘোষণা করার আহ্বান জানায়। পরে ১৯৯৫ সালে বেইজিং ঘোষণাপত্র এবং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশনের সময় ১৮০ টি দেশের সরকার একটি ঐতিহাসিক রোডম্যাপ স্বাক্ষর করেছিল। সেখানে এমন একটি বিশ্বের অঙ্গীকার করা হয়েছিল যেখানে প্রত্যেক মহিলার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, শিক্ষা লাভ, আয় অর্জন এবং নিজের মনের মতো করে হিংসা ও বৈষম্য থেকে মুক্ত জীবনযাপন করার অধিকার অর্জনের কথা বলা হয়।
প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট থিম থাকে ৮ মার্চ এই বিশেষ দিনের। ২০১৯ এর ৮ ই মার্চ এইবছর নারী দিবসের থিম হল ব্যাল্যান্স ফর বেটার। অর্থাৎ লিঙ্গ বৈষম্য দুর করার লক্ষ্যে ভারসাম্য তৈরি করা।
মহিলাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনের উৎসব হিসেবেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়।
এবছরেই ভারতে লোকসভার নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো তাই তাদের ভোট রাজনীতির স্বার্থেই যেন এই দিবসটি পালনে আরো সক্রিয়। আরো উচ্চকিত। যদিও এটা তাদের বাধ্যবাধকতাই বলা যায়।
কবে থেকে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন ? সেকথা বলতে গেলে বলতে হয় ১৯৭৫ সালের অনেক আগে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আমেরিকায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। তারও আগেসোশ্যালিস্ট পার্টি অফ আমেরিকা নিউইয়র্কে ১৯০৮ সালে, ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনের উদ্যোগের পর, ১৯ শে মার্চ অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডে প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক নারী দিবস চিহ্নিত হয়েছিল। নারীর কাজের অধিকার, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং কাজের বৈষম্যের অবসান দাবি করেই জমায়েত হয়েছিল লক্ষাধিক মানুষ।
একই সঙ্গে রাশিয়ান মহিলারাও প্রথমবার ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘রুটি ও শান্তি’র দাবিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। ইউরোপের নারীরা ৮ মার্চ শান্তি বিষয়ক কার্যক্রমকে সমর্থন করে বিশাল মিছিলে নামেন। ১৯১৩-১৯১৪ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিবাদ জানানোর একটি প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছিল। এর পরে ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ৮ মার্চ জাতীয় ছুটি ঘোষণা করে। নারীদের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী নানা পদক্ষেপ করা এবং সারা বিশ্বজুড়ে লিঙ্গ সাম্যের উদ্দেশ্যে কাজের জন্য এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয়।
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারও শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নারী দিবসে দেশের রাজনীতিতে মহিলাদের ইতিহাস নিয়ে ক্যুইজের আয়োজন করেছে কংগ্রেস দল। প্রতিযোগী বিজয়ীদের জন্য রয়েছে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার।
আসলে কিন্তু আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সর্বজনগ্রাহ্য ভাবে যে কথাটা উঠে আসছে, তা হলঃ নারী দিবস নয়, চাই নারীর সত্যিকারের অধিকার।
এই স্বল্প পরিসরে বিস্তারিত বলাও সম্ভব নয়।
তবুও, এ বছরের ব্যাল্যান্স ফর বেটার থিমের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শেষ লগ্নে বলতে হয় যে, নারী-পুরুষের অধিকারগত বৈষম্য দুর করে সমতা আর স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিল যে মতাদর্শ, সেই মতাদর্শকেই আজ অপাঙক্তেয় ও বর্জনীয় করে তোলার লক্ষ্যে দেশ বিদেশের প্রচার মাধ্যমগুলো উঠে পড়ে লেগেছে। ফলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের সার্থকতা অধরা থেকে গিয়ে শুধু সেজেগুজে প্রথাপালন আর আড়ম্বরপূর্ণ সেইসব অনুষ্ঠানের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করা ছাড়া কি ই বা পাচ্ছে সমাজ ?