চরৈবেতি ‘র রবীন্দ্র নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান ২০২৪

মতিয়ার রহমান : বীরভূম জেলার হাট বসেছে মঙ্গলবারে’র অন্যতম পরিচিত নাম রাজগাঁ। রাজগ্রাম। এখান থেকেই চৌত্রিশ বছর ধরে নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে চরৈবেতি নামের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক একটি পত্রিকা। শুধু মাত্র পত্রিকা প্রকাশ, কবিতা বা সাহিত্য পাঠ বা আলোচনা নয়। গুণীজন সংবর্ধনা, কৃতী ছাত্র ছাত্রী সম্মাননা প্রদান করে এখন সে জেলার গর্ব।

    প্রতি বছর চরৈবেতি নিয়মিতভাবে রবীন্দ্র নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান করে আসছে। কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গত ২৬ শে ফাল্গুন ১৪৩০, ১০ ই মার্চ ২০২৪ চরৈবেতি বিশেষ নজরুল সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। চরৈবেতির এই কর্তব্যপরায়ণতা ও দায়বদ্ধতা সত্যি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এই প্রশংসনীয় উদ্যোগের সাক্ষী হতে চান অনেকেই। চরৈবেতি এই পরম্পরাকে কুর্নিশ জানাতে চাঁদের হাট বসেছিল রাজগাঁও মহামায়া হাই স্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক)’র সভাকক্ষে। আজ সকাল আটটায় চরৈবেতি পরিবার রবীন্দ্র নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বাংলার দুই বরেণ্য কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে সভা শুরু হয়। বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী রাজগ্রামের ভূমিকন্যা পিংকি মন্ডলের কন্ঠে, “খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে” নজরুল সঙ্গীত উদ্বোধনী সঙ্গীত দর্শক সাধারণের হৃদয় মন জয় করে নেয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চরৈবেতি সম্পাদক কবি ও গল্পকার কুদ্দুস আলি। তিনি এই অনুষ্ঠানের প্রথম সূচনা প্রাসঙ্গিক ভাবনা ও রবীন্দ্র নজরুল বিষয়ক নানান মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। কথা কবিতা গান ও নাচের মধ্য দিয়ে বাংলার দুই শ্রেষ্ঠ কবির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন উপস্থিত কবি ও শিল্পীরা। ছোট্ট আয়াজ ইসলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে “খালি গলায় গান গেয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আজকের অনুষ্ঠানের অন্যতম সেরা আকর্ষণ ময়ূরাক্ষী চন্দের নজরুল কবিতার সঙ্গে অসাধারণ নৃত্য পরিবেশন। এই অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠে অংশ নেন এম মতিন, কোহিনুর বেগম, অর্ঘ্য পাল, সিমরান ইয়াসমিন, রুকসা খাতুন, অরিত্র রক্ষিত, সৃজনী পারভীন প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন কালিদাস ভট্টাচার্য, দেবময় কারফরমা, আফরোজা বেগম, কাজী হাফিজা মুসকান, মনোজ মাল প্রমুখ। কথা কবিতা গানে জমজমাট অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় পর্বে ছিল এই বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ টপারদের সম্বর্ধনা প্রদান। পাঁচ জনের মধ্যে আল ইকরা একাডেমির নেহনাজ আলম আল আমিন মিশন খলতপুরে থাকায় তার বাবা রিপন মুন্সী পুরস্কার গ্রহণ করেন।
    স্মরণীয় এই অনুষ্ঠানে আন্তুয়া গ্রামের একদল স্পর্ধিত যুবদের উদ্যোগে মুক্তমন নামের একটি সাহিত্য পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন করেন বিশিষ্ট গল্পকার দোস্ত মহম্মদ ও বিশিষ্ট সমাজসেবী শ্যামল মণ্ডল ও চরৈবেতির সহ সম্পাদক শিক্ষিক কবি অভিলাষ রাজবংশী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক দোস্ত মহম্মদ, সুশিক্ষিক গোলাম মোর্তজা জহর, কাজী নুরুল আবসার, শ্যামল মণ্ডল, কাজী শিরীন আলি, অণুগল্পকার ভ্রামণিক মতিয়ার রহমান, নয়ন নস্কর, চঞ্চল কর প্রমুখ। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড রোদ গরমকে উপেক্ষা করে আজকের অনুষ্ঠানে বড়োদের সাথে অবুঝ সবুজ সাথীদের উজ্জ্বল উপস্থিতি ও অংশ গ্রহণও ছিল নজর কাড়া। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি কলম উপহার হিসেবে দেয়া হয়। কলম তুলে দেন শিক্ষক অভিলাষ রাজবংশী। মহতী এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চরৈবেতি ট্রাস্টের সভাপতি ডা আলি আসগর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন চরৈবেতি পত্রিকার প্রকাশক মন্টেন মুন্সী।