|
---|
মতিয়ার রহমান : ১৭ অক্টোবর বাউল সম্রাট লালন ফকিরের প্রয়াণ দিবস। বিতর্ক থাকলেও এই দিনটিকে জন্মদিন বলেও মানা হয়। এই উপলক্ষে রোডম্যাপ পত্রিকার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় অনলাইন সেমিনার। সম্পাদক এম এম আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মৌসুমি মন্ডল। *লালন দর্শন : দেশ ও সমাজ গঠনের প্রেক্ষিত* শিরোনামে বক্তারা আলোচনা করেন। মূখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও লালন গবেষক ড. রমজান আলি। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কিশোরি মন্ডল, দীপনারয়ন মন্ডল, মুবাইদুল ইসলাম মোল্লা, মতিয়ার রহমান ও সাহিত্যিক ইসমাইল দরবেশ। লালনগীতি পরিবেশন করেন লোকসংগীত শিল্পী সম্বিতি পোদ্দার, লোককবি উত্তম সরকার, চন্দন বাউল, সাহেদ রেজা। বক্তারা বলেন, লালন জাত ব্যবস্থার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। বর্তমানে দেশে মানুষ জাত ও বর্ণবৈষম্যের শিকার, তা থেকে মুক্তি পেতে লালন ফকিরের সমাজ দর্শন আজ খুবই প্রাসঙ্গিক। অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি পরিমল বিশ্বাস, সমীরণ বিশ্বাস প্রমুখ। স্বরচিত গান গেয়ে শোনান উপানন্দ বাড়ৈ। এই অনলাইন সেমিনারে প্রায় সত্তরজন উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, লালন ফকির ১৭৭৪ সালে ১৭ অক্টোবর পূর্ববঙ্গের এক কায়স্থ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। যৌবনে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন ভেবে আত্মীয়রা তাঁকে নদীতে ভাসিয়ে দেয় এবং পরে এক মুসলমান মহিলা নদীতে ভাসমান অবস্থায় দেখে তাঁকে তুলে এনে নিজ বাড়ীতে সেবা শুশ্রূষা করেন। পরে লালন সুস্থ হয়ে পৈতৃক ভিটাতে ফিরে গেলে ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজপতিরা তাকে সমাজচ্যুত করে এবং স্ত্রী-সংসার থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং গ্রাম থেকেও বহিস্কার করে। পরে তিনি সেই মুসলিম পরিবারে ফিরে যান এবং কালক্রমে চলমান ধর্ম ও সমাজের উপর অনাসক্ত হয়ে পড়েন এবং নিজের কথা গুলো গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেন যেগুলিকে আমরা লালনগীতি বলে জানি। দীর্ঘ ১১৬ বছর জীবিত থেকে ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি পরলোকগত হন। কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রামে তাঁকে দাফন করা হয়, এখনো সেখানে তাঁর মাজার আছে। লালনের শতশত গান আজো মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। সত্যিকার অর্থে লালন ফকির বৃহত্তর বাংলার নিজস্ব সম্পদ।