তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য

সংবাদদাতা : তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য – ২৮ আগস্ট, ২০২৫,আমি সমস্ত সাংসদ, বিধায়ক এবং দলের নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানাই এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। যতদূর চোখ যায়, আমি দেখছি অসংখ্য মানুষ জমায়েত হয়েছেন। গত ৫–৭ বছর ধরে আমি এই ভিড় লক্ষ্য করে আসছি। গত বছর গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যুবকদের যে ভিড় জমেছিল, আজকের ভিড় সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। যতদূর চোখ যাচ্ছে, শিক্ষার প্রগতি, সংঘবদ্ধ জীবন এবং দেশপ্রেমের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

    – আজ অনুষ্ঠানের পথে আসতে আসতে আমার মনে পড়ছিল, গত বছরের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কথা, যখন আর জি কর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত ছিল। এক বছর কেটে গেছে। এক বছর আগে আমি এই একই জায়গা থেকে, একই মঞ্চ থেকে বলেছিলাম যে আমরা সেই নারীদের প্রতি সম্মান জানাই, যাঁরা রাত দখল-এর ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ, এক বছর পেরিয়ে গেছে। যে কাজ তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন কলকাতা পুলিশ করতে পেরেছিল, তা নরেন্দ্র মোদীর সিবিআই আজও করতে পারেনি। সেটা প্রমাণিত হয়েছে।

    – আমরা সেদিনও বলেছিলাম যে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি চাই। আমরা মন্ত্রিসভায়, বিধানসভায় অপরাজিতা বিল পাশ করেছিলাম এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তা রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছিল। পরে তা রাষ্ট্রপতির কাছেও পাঠানো হয়, কিন্তু এক বছর কেটে গেলেও সেই বিল এখনও অনুমোদন পায়নি। যারা আপত্তি তুলেছিল, তাদের উদ্দেশ্য অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া ছিল না, তাদের উদ্দেশ্য ছিল গরিবদের স্বার্থরক্ষাকারী স্বাস্থ্য-পরিকাঠামো ধ্বংস করা, যার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার ২০১১ সাল থেকে কাজ করছে।

    – সেই বিল কি পাশ হওয়া উচিত নয়? কেন আজ সিপিআই(এম), কংগ্রেস, বিজেপি কেউ আওয়াজ তুলছে না? কেন তারা মিছিল করছে না, এই বিল পাশ করানোর দাবি করছে না? বলুন তো, আপনারা অপরাজিতা বিল পাশের পক্ষে, না বিপক্ষে? সেই বিল পাশ হওয়া উচিত কি উচিত নয়? যে বিল বিধানসভায় পাশ হয়েছে, পরে রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন? সকলে হাত তুলে বলুন।

    – আপনারা কি নিজেদের জেলায় গিয়ে বলবেন না কে এই বিল আটকে রেখেছে? ছাত্র-যুবরা কি প্রতিবাদ করবে না, যারা আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে SIR-এর নামে? ২০২৬-এ যারা আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে, তাদের কি বাংলার মানুষ জবাব দেবে না?

    – স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন এবং পরে সংবিধানের জনক বি. আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে প্রতিটি ভারতবাসীকে মৌলিক অধিকার দিয়েছিল— আগে আমরা দেখেছি সকলে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতেন। কিন্তু আজ আমরা দেখছি, বর্তমান সরকার নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভোটার বাছাই করছে। আগে মানুষ সরকার বেছে নিত, আজ সরকার মানুষ বেছে নিচ্ছে (কারা ভোট দিতে পারবে)। বাংলা কি এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে না? হাত তুলে বলুন।

    – আমরা দিল্লিতে গিয়েছিলাম ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প (মনরেগা)-র জব কার্ডধারীদের জন্য লড়াই করতে। আমরা প্রশ্ন তুলেছিলাম, তাদের জন্য লড়াই করেছিলাম। আমাদের মহিলা প্রতিনিধিদের, বিশেষত তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি, ওবিসি, আদিবাসী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষদের দিল্লির কৃষি ভবন থেকে অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ চুলের মুঠি ধরে টেনে বের করেছিল।

    – আমরা হয়তো দিল্লি থেকে টাকা আনতে পারিনি, কিন্তু আমাদের সরকার ৬৯ লক্ষ জব কার্ডধারীর পাওনা টাকা সরাসরি তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করেছে। যদি আমরা ৬৯ লক্ষ জব কার্ডধারীর জন্য লড়াই করতে পারি, তবে যারা ১০ কোটি বাঙালিকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়েছে, তাদেরও জবাব দিতে পারি। প্রতিহিংসার রাজনীতির মোকাবিলার জন্য, আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ রাস্তায় তৈরি করতে পারি। এই মঞ্চ থেকে, ২৮ আগস্ট, আমি বিজেপির বন্ধুদের এই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।

    – যারা বৈষম্য করে, বাঙালিকে অপমান করে; যারা বলেছে বাংলা বলে কোনো ভাষা নেই— আমরা কি তাদের জবাব দেব না? যারা ১০ কোটি বাঙালিকে অপমান করেছে, বাংলার কৃষকদের টাকা আটকে রেখেছে, জল জীবন মিশনের পানীয় জলের টাকা আটকে রেখেছে, ৫০ লক্ষ বাঙালির আবাস যোজনার টাকা (পিএমএওয়াই) আটকে রেখেছে, যারা পিএমজিএসওয়াই-এর অধীনে ১০,০০০ কোটির বেশি আটকে রেখেছে আমরা কি তাদের জবাব দেব না? আমরা একসঙ্গে লড়ব। আগেও লড়েছি, আবারও লড়ব। যারা বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে সরাবে, আমি তাদের বলব: আমাদের নেত্রীর সঙ্গে পরে লড়াই করো। আপাতত ছাত্র-যুবর সঙ্গে লড়াই করো। ১০–০ গোলে হারবে। বিজেপি আর সিপিআই(এম) এই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আর তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কাছে ১০–০ গোলে হারবে।

    – তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল যুব কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা যারা এত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আজ নেত্রীর কথা শুনতে এসেছে, আমি তাদের বলতে চাই যে, মিডিয়ায় চলতে থাকা পরিকল্পিত কুৎসা রুখতে হবে আমাদের। এটা আমাদের লজ্জা যে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে, ভর্তি প্রক্রিয়ার বিলম্বের কারণে, অনেক অভিভাবক সারা রাজ্যে বিরক্ত হয়েছিলেন। এবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলবেন। কিন্তু আমাদের দুঃখ যে, বাংলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে শিক্ষা দিতে কলকাতা হাইকোর্টের একাংশ যুবসমাজের জীবনে আঁধার নামাতে চেয়েছিল। আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম, আর যেদিন স্টে অর্ডার পেলাম, তার এক ঘণ্টার মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।

    – আমি আপনাদের অনুরোধ করব SIR-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যান। যদি একজন মানুষও তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন, তবে ১০ লক্ষ বাঙালি দিল্লি যাবে, রাজপথ ঘেরাও করবে এবং নিজেদের শক্তি প্রমাণ করবে।

    – তারা বলেছিল বাংলা বলে কোনও ভাষা নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন ভাষায় কথা বলেছিলেন? ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মাতঙ্গিনী হাজরা, জীবনানন্দ দাশ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত? তাঁরা কোন ভাষায় কথা বলেছিলেন? যদি বিদ্যাসাগর না থাকতেন, তবে আপনারা বাবা-মায়ের নাম লিখতেও পারতেন না। ভারতের স্বাধীনতায় বাংলার অবদান অস্বীকারযোগ্য। ভারতকে পথ দেখিয়েছিল বাংলা।

    – আজ বিজেপি সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে হুমকি দিচ্ছে, চুপ করাতে চাইছে, স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। তারা কি বাংলায় সেটা পারছে? না! যতবার তারা ইডি-সিবিআই পাঠিয়েছে, আমাদের নেতাদের লড়াইয়ের সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে। আমরা ইস্পাত। যতবার পোড়াবে, ততই শক্ত হব। সেটাই তৃণমূল কংগ্রেস।

    – মাত্র ৪ দিন আগে তারা একটি নতুন বিল (সংবিধান সংশোধনী বিল) এনেছিল। তারা ভেবেছিল রাতের আঁধারে পাশ করবে। তৃণমূল কংগ্রেসের ২৮ সাংসদ সংসদের ওয়েলে নেমে এমন প্রতিবাদ করেছিল যে, অমিত শাহকে লোকসভার চতুর্থ সারিতে গিয়ে বিল পেশ করতে হয়েছিল। আমি বাংলার ১০ কোটি মানুষকে ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের ২৯ আসনে জিতিয়েছেন, কারণ আমরা এই বিল পাশ হতে দেব না। আর যদি আমাদের ৪০ আসন দিতেন, অমিত শাহকে শেষ সারিতে গিয়ে মুখ লুকোতে হত। এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তি।

    – এই বিল (সংবিধান সংশোধনী বিল)-এর প্রসঙ্গে আমি বলেছিলাম, তোমরা যদি এই বিল পাশ করতে চাও, তাহলে সরকারের কাছে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। বলো তো, সরকারের কি জবাবদিহি করা উচিত নয়? তারা বলেছিল কালো টাকা নির্মূল করবে। কোনো জবাব দিয়েছে? ১৪০ জন মানুষ রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গিয়েছিল। তার জবাব কে দেবে? তারা কৃষি আইন এনেছিল, যার ফলে প্রায় ৭১৬ জন কৃষক সারা দেশে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই বিজেপি সরকার এনআরসির ভয় দেখিয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চেয়েছিল। এত মানুষ ভয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তার জবাব কে দেবে?

    – এই বিজেপি জিএসটি এনেছিল এবং আমাদের আর্থিকভাবে দেউলিয়া করেছে। তারপর তারা রাজ্যের কোষাগার থেকে টাকা তুলে নিয়ে গিয়ে রাজ্যের পাওনা টাকা জোর করে আটকে রেখেছে। তার জবাব কে দেবে? ১০০ দিনের কাজের টাকা যাতে ৬৯ লক্ষ জব কার্ডধারী না পান, তার জন্য বিজেপি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিল। যারা বাংলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, ২০২৬-এ আমরা তাদের কোনো জায়গা দেব না।

    – আমাদের সরকার “আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান” শুরু করেছে, যেখানে প্রতিটি বুথে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। সারা রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৮,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার আত্মনির্ভর ভারতের কথা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর বাংলা তৈরি করেছেন। আগামীকালও আমরা উঠে দাঁড়াব। বাংলা মাথা নত করবে না, আত্মসমর্পণ করবে না। আগামী ২৮ আগস্ট, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চতুর্থবার ক্ষমতায় আসবে, আমি কথা দিচ্ছি। আটকাতে পারলে আটকাও।

    – সবাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে: বিচারব্যবস্থা, বিজেপি, কেন্দ্রীয় এজেন্সি, ইডি, সংবাদমাধ্যম, সিবিআই, নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ১০ কোটি বাঙালি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে। এসো লড়াই করো: একদিকে ১০ কোটি বাঙালি, অন্যদিকে কেন্দ্রের ইডি-সিবিআই। আমরা যত আসন পেয়েছিলাম, আমি কথা দিচ্ছি, এবার আরও বেশি আসন পাব। ২০১১ সালে আমরা ১৮৪ আসন পেয়েছিলাম এবং প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলাম। ২০১৬-তে সেটা হয়েছিল ২১১। ২০২১-এ সেটা হয়েছিল ২১৫। আমি আগেও বলেছি, বিজেপি যদি পারে, ৫০ পেরিয়ে দেখাক। আগামীকালের লড়াই আমরা দেখে নেব। আমরা হিংসার রাজনীতি করি না। আমরা করি জনকল্যাণের রাজনীতি। আমরা বাংলার মানুষের পাশে থাকব।