|
---|
খান আরশাদ, বীরভূম:
রাজনগরের মাদারপুর গ্রামে বিয়ের ভোজ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন শতাধিক মানুষ। এরকমই এক ঘটনা ঘটায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জানা গিয়েছে রবিবার রাজনগর ব্লকের গাংমুড়ি-জয়পুর অঞ্চলের মাদারপুর গ্রামে একটি বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে ভোজ খাওয়ানো হয় বেশ কিছু আমন্ত্রিতদের।
জানা গেছে এই ভোজ খাওয়ার পর সোমবার দুপুর নাগাদ বেশ কিছু মানুষের পায়খানা ও বমির উপসর্গ দেখা দেয়। তৎক্ষণাৎ খবর দেওয়া হয় রাজনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। খবর পেয়ে মাদারপুর গ্রামে উপস্থিত হয় একটি মেডিকেল টীম যেখানে রাজনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের BMOH ডক্টর তীর্থঙ্কর সিনহা, সিনিয়র PHN জুঁই সাহা, ব্লক একাউন্টস ম্যানেজার তন্ময় মুখার্জি সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে তড়িঘড়ি সোমবার সন্ধ্যাতেই উপস্থিত হন। পাশাপাশি রাজনগর থানার ওসি ঝুমুর সিনহাও উপস্থিত হন।
গ্রামে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১১৩ পর্যন্ত পৌঁছায়। যদিও রাজনগর স্বাস্থ্য দপ্তরের তৎপরতায় আক্রান্তদের তড়িঘড়ি চিকিৎসা প্রদানের ফলে সকলেই এখন সুস্থ।
ঘটনাস্থল থেকে খাবার এবং জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কি কারনে এ ধরনের ঘটনা ঘটলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত দুই বছর আগে রাজনগরে লক্ষ্মী পূজার খিচুড়ি খেয়ে ছোটবাজার এবং মালিপাড়া গ্রামের বেশকিছু মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি তিনজনের মৃত্যুও হয়।
সে সময়ও প্রশাসন তথা স্বাস্থ্য দপ্তর যথেষ্ট তৎপরতা দেখায়। মৃতদের তথা আক্রান্তদের পাশে জেলা পরিষদ সভাধিপতি, বিধায়ক, জেলাশাসক থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক প্রশাসনও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
ভয়াবহ সেই আতঙ্কের রেশ এখনো পর্যন্ত রাজনগরবাসীর মন থেকে মুছে যায়নি।
দুই বছর পর ফের মাদারপুর গ্রামে এই ধরনের ঘটনা সকলকে আতঙ্কিত করে তোলে। যদিও স্বাস্থ্য দপ্তরের তৎপরতায় সকলেই সুস্থ হয়ে যান, এমনকি আক্রান্তদের হাসপাতালেও যেতে হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
রাজনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র PHN জুঁই সাহা এবং ব্লক একাউন্টস ম্যানেজার তন্ময় মুখার্জি জানান গত রবিবার মাদারপুর গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ভোজ খেয়ে অসুস্থ বোধ করায় সোমবার দুপুর নাগাদ স্থানীয় জয়পুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে বমি পায়খানার ওষুধ নিয়ে আসেন। বিকেল নাগাদ প্রায় ৫-৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকল আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে আসেন। এরপর আক্রান্তদের সংখ্যাটা প্রায় কুড়ি-বাইশে দাঁড়ায়। এরপর সোমবার সন্ধ্যায় রাজনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে BMOH সহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এবং OC গ্রামে পৌঁছান। আক্রান্তদের সংখ্যা ইতিমধ্যে শতাধিক হয়ে ওঠে। সকলকে রাজনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তরফে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এ পর্যন্ত মোট ১১৩ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সকলেই সম্পূর্ণ সুস্থ, এমনকি আক্রান্তদের কাউকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয়নি। যদিও প্রশাসনের তরফে একটি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়ার জন্য গ্রামে সব সময় রেখে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও সেখানে সবসময়ই নজর রেখে চলেছেন।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডক্টর হিমাদ্রি আড়ি এ বিষয়ে জানিয়েছেন মাদারপুর গ্রামে বিয়ে বাড়ির খাবার খেয়ে বেশ কিছু জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। গ্রামে স্বাস্থ্য কর্মীরা তড়িঘড়ি উপস্থিত হয়ে তাদেরকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে পরিষেবা দেন। সে ধরনের বাড়াবাড়ি কারো হয়নি। স্বাস্থ্য দপ্তর বিষয়টি সবসময় নজর রাখছে।