ওমর খৈয়াম কে সম্মাননা গুগলের

ওমর খৈয়াম কে সম্মাননা গুগলের

    খান আরশাদ, বীরভূম: বিশ্ববন্দিত ফার্সি কবি জ্যোতির্বিদ দার্শনিক ওমর খৈয়ামের ৯৭১ তম জন্মদিনে গুগল তার ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করলো। গাছের নিচে বসে ওমর খৈয়াম বই পড়ছেন এই ছবি গুগল তার সার্চ ইঞ্জিনের লোগোতে ১৮ই মে তাঁর জন্মদিনে সম্মাননা হিসেবে ব্যাবহার করেছে। ওমর খৈয়ামের জন্ম ১৮ই মে ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে ইরানের খোরাসান প্রদেশের নিশাপুরে। তিনি একাধারে গণিতজ্ঞ জ্যোতির্বিদ দার্শনিক হলেও ফার্সি কবি হিসেবে সারা বিশ্বে তিনি বেশি সমাদৃত। ওমর খৈয়ামের পুরো নাম গিয়াস উদ্দিন আবুল ফতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল খৈয়াম। খৈয়াম নিশাপুরে শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ চুকিয়ে সমরখন্দে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে যান । খাইয়ামের পিতা ইব্রাহিম ছিলেন একজন তাঁবু নির্মাতা। খৈয়াম অর্থ তাঁবু। ওমর খৈয়াম তাঁর কাজকে সম্মান দেখিয়েই তাঁর নামের শেষে খৈয়াম ব্যাবহার করতেন। বাল্যকালে নিশাপুরের বিখ্যাত পন্ডিত শেখ মোহাম্মদ মনসুরের কাছে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ইমাম মুয়াফেকের কাছে গিয়ে শিক্ষা লাভ করেন । তিনি গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র, ও দর্শনে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেন। বীজগণিতের সমীকরণের সমাধান সূত্র তিনিই প্রথম সমাধা করেন। গণিতের উপপাদ্য ও তিনি প্রথম আবিষ্কার করেন। তিনি সেসময় সুলতান মালিক শাহ্‌ সেলজুকের দরবারে পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি মালিক শাহ এর দরবারে পরামর্শ দানের পাশাপাশি তিনি তার শিক্ষা চর্চাও চালিয়ে যান। কিন্তু সুলতান মালিক আততায়ীর হাতে নিহত হলে তিনি সেখান থেকে প্রস্থান করেন। এরপর তিনি হজ্ব পর্ব সমাধার জন্য মক্কা গমন করেন। পরে ফিরে এসে তিনি জ্যোতিষ ও গণিত শাস্ত্রের উপর ফের মনোনিবেশ করেন। চলে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা ও আবিষ্কার। খৈয়াম তাঁর সম্পূর্ণ জীবন জ্যোতিশাস্ত্র, দর্শনশাস্ত্র, গণিত ও কাব্য চর্চার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেন। এসব ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর পাণ্ডিত্য পারস্য ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের পণ্ডিতদের কাছে সমাদৃত হয়েছিল। সেসময়ের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ হিসেবে ওমর খৈয়াম বীজগণিত, উপপাদ্য ও জ্যামিতির বিভিন্ন তত্ব সারা বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন। তিনি অইউক্লিডীয় জ্যামিতির তথ্য আবিষ্কার করেন। গণিতের উপর তাঁর লেখা গবেষণামূলক গ্রন্থ “মালাকাত ফী আল জবর আল মুকাবলা” আজও বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের কাছে সমান সমাদৃত। খৈয়ামের জ্যোতিষশাস্ত্রে বর্ষপঞ্জী একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। তিনি সে সময় প্রচলিত বর্ষপঞ্জি সংশোধন করে নতুনভাবে তৈরি করেছিলেন। যা প্রচলিত বর্ষপঞ্জীর তুলনায় অনের উন্নত মানের ছিল। সেসময় সুলতান মালিক তাঁকে একটি মানমন্দির তৈরির জন্য অনুরোধ করলে তিনি অত্যন্ত সফলভাবে সেটি তৈরি করেন এবং অত্যন্ত সুনিপূণভাবে তিনি সৌরবর্ষের দৈর্ঘ্য-পরিমাপ নির্ণয় করেন। বর্তমানে যে বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয় তা ‘গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার’ নামে পরিচিত। এই ক্যালেন্ডার প্রতি তেত্রিশ শত বর্ষে ২৪ ঘন্টার গরমিল হয়। কিন্তু খৈয়াম যে বর্ষপঞ্জি তৈরি করেছিলেন তাতে মাত্র এক ঘন্টার গরমিল দেখা যায়। বোঝাই যায় গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির তুলনায় কত উন্নত ও নিখুঁত ছিল খৈয়ামের এই বর্ষপঞ্জী। বর্তমানে এসব অবদানের চেয়েও বেশি সমাদৃত হয়েছে তার কাব্যগ্রন্থ। তিনিই প্রথম সনেট রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘রুবাইয়াত-এ-ওমর খৈয়াম’ নামে পরিচিত। এই মহান পথ-প্রদর্শকের কবিতা সারা বিশ্বের কাছে আজও সমান জনপ্রিয়। ফার্সি কাব্যের এই মহান পথ-প্রর্দশক শুধু ফার্সিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তার চিন্তাধারার কদর শুধু পারস্য নয় বরং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে পরবর্তীকালে। খৈয়ামের কাব্য বিশ্বের নাম করা সব কবিরা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করেছেন। আমাদের এই উপমহাদেশেও ওমর খৈয়ামকে নিয়ে চলচিত্রও নির্মিত হয়েছে। মহান এই ব্যক্তিত্ব ১১৩১ খ্রিস্টাব্দের ৪ই ডিসেম্বের ৮৩ বছর বয়সে ইহধাম ত্যাগ করেন। ১৮ই মে তাঁর জন্মদিনে গুগল তাঁকে সম্মাননা প্রদান করল।