| |
|---|
জাহির আব্বাস : দেশজুড়ে বেকারত্ব এবং পড়াশোনার প্রতি এই প্রজন্মের ছেলেদের অনাগ্রহ যেভাবে বাড়ছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিভাগের বহু ছাত্র-ছাত্রী সঠিক গাইডেন্সের অভাবে যখন দিশেহারা ঠিক তখনই এই বিষয়টি অনুধাবন করে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক জাকির হোসেন মোল্লা একটি একটি অভাবনীয় সফ্টওয়্যার টুলস্ উদ্ভাবন করে চমকে দিয়েছেন। জানা গেছে , একাধিক একাডেমিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন মাপকাঠির উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই গবেষণা কার্য টি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা এবং প্রত্যাশিত বেতনের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম । তাঁর এই গবেষণাটি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.সেখ মুহম্মদ ওবায়দুল্লাহ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৌম্য সেন -এর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে। যা দুটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি সফল সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা হিসাবেও বিবেচিত।ভারতবর্ষ জুড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কর্মসংস্থানের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য এই এ.আই-ভিত্তিক টুল টির নাম “এডুকেশন ডেটা মাইনিং”। তাঁর এই অসাধারণ কার্য টি বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হিসাবে বিবেচিত হতে চলেছে। বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকদের মধ্যে কর্মসংস্থানের উন্নতির উপর এতে জোর দেওয়া হয়েছে। জাকির বাবু জানিয়েছেন, কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার কথা ভেবে উন্নত মেশিন-লার্নিং টেকনোলজি ব্যবহার করে ক্যাম্পাস নিয়োগের ধরণ বিশ্লেষণ এবং বেতন সহ চাকরির পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই গবেষণা কার্য টি একেবারেই বাস্তব জীবনের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। প্রযুক্তি বিষয়ের পড়ুয়াদের চাকরির ক্ষেত্রে দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ,জব পাওয়ার পূর্বাভাস, স্যালারির সীমা অনুধাবন ছাড়াও যারা চাকুরি রত , তাঁরা যে পরিমাণ স্যালারি পাচ্ছেন আর কী করলে তাঁরা নিজেকে উচ্চ স্যালারি যোগ্য করতে পারবেন – এ ধরনেরও গাইড এতে পাওয়া যাবে।
এই গবেষণা কার্যটি ভারতের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কয়েক বছরের (২০২২-২৪ শিক্ষাবর্ষ সহ) প্লেসমেন্ট ও বেতন সংক্রান্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এই ডাটা গুলি এখন সহজে পাওয়া যাবে আই ই ই ই (IEEE)ডাটা পোর্টে । এগুলি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পলিসি মেকার , একাডেমিক এডমিনিস্ট্রেটর সহ যাঁরা কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাকে তুলে ধরার জন্য কাজ করছেন তাঁদের কাছে খুবই মূল্যবান । এই গবেষণা কার্য টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে । একাডেমিক এবং বৈজ্ঞানিক বিষয়বস্তুর জন্য খ্যাত আন্তর্জাতিক প্রকাশক “স্প্রিংগার” দুটি গবেষণা পত্রকে প্রকাশ করেছে । গবেষণাপত্র দুটির শিরোনাম: 1. Generalization of Logistic Regression to Improve Prediction: An Application on Training and Placement Data.
2.A Comprehensive Analysis on the Skill-Set of the Students to Improve Campus Drive Using Machine Learning Approaches.
এই গবেষণা কার্যক্রমটি চাকরির প্রস্তুতি সহ প্রযুক্তি ও শিল্পক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় চাহিদা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-ছাত্রীদের সক্ষমতার মধ্যে যে ঘাটতি তা পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে । যেটা জাতীয় ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য পূরণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলেই প্রযুক্তি বিভাগের বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
অধ্যাপক ড .ওবায়দুল্লাহ জানান, “এই ধরনের কাজ আমার জানা মতে এখনো পর্যন্ত হয়নি। ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে এই ধরনের টুলস কে ব্যবহার করে আগামী দিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও পূর্বাভাস অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করে প্লেসমেন্টে ব্যাপক সুবিধা পাবে।” আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের প্রাক্তন ছাত্র মুহম্মদ ওসমান গনি এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সেখ রাজিবুর রহমান এই গবেষণা কার্যটি সম্পর্কে জেনে খুবই আপ্লুত। তাদের মতে, এর মাধ্যমে আগামী দিনে বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রাম-অঞ্চলের প্রথম প্রজন্মের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদেরকে বর্তমান চাহিদা মতো পেশাদার করার কাজে লাগাতে পারবে এবং হতাশা কাটিয়ে উৎসাহিত হবে।

ছবি:
গবেষক জাকির হোসেন মোল্লা (মাঝে) অধ্যাপক ড.সেখ মুহম্মদ ওবায়দুল্লাহ (আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়) (বামে)এবং অধ্যাপক ড. সৌম্য সেন (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) (ডানে )।


