সর্বভারতীয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বীরভূমের বাবর আলি

 

    খান আরশাদ, বীরভূম:

    গুজরাটের সুরাটে এক জমজমাট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে টি-টোয়েন্টি ‘বিগ ক্রিকেট লিগ’।
    গত ১২ ডিসেম্বর থেকে এই টি-টোয়েন্টি বিগ ক্রিকেট লীগ শুরু হয়েছে। আগামী ২২-শে ডিসেম্বর ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।
    এই লীগের কমিশনার দিলীপ ভেঙ্গসকার এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কোর্টনি ওয়ালশ।
    সারা দেশের ছয়টি টিম এই টুর্নামেন্টে খেলছে।
    ছয়টি অংশগ্রহণকারী টিম হল ১- নর্দান চ্যালেঞ্জার্স, ২- সাউদার্ন স্পার্টানস্ , ৩- রাজস্থান রিগ্যালস, ৪- মুম্বাই মেরিনস , ৫- ইউ পি ব্রিজ স্টারস্ , ৬- এম পি টাইগার্স ।
    বিশ্বজুড়ে এই ক্রিকেট লিগের দিকে নজর এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের। এই লিগে অংশ নিয়েছেন শিখর ধাওয়ান, ইরফান পাঠান, ইউসুফ পাঠান, সুরেশ রায়না, নমন ওঝা, হার্শেল গিবস, তিলকরত্নে দিলশাদদের মত তাবড় তাবড় দেশের সব ক্রিকেট প্লেয়াররা।
    আর এদের পাশাপাশি এই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অংশ নিতে পারার সৌভাগ্য হয়েছে বীরভূমের সাঁইথিয়া ব্লকের মাঠপলসা গ্রামের বাবর আলির।
    এই মাঠপলসা গ্রাম বরাবরেরই শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার দিক দিয়ে খুবই উন্নত। এই গ্রাম থেকেই অ্যাথলিট, ভলিবল, ফুটবল, ক্রিকেট সহ অন্যান্য খেলায়ও সুনাম অর্জন করেছে বহু কৃতি খেলোয়াড়।
    এবার এই গ্রাম থেকেই ক্রিকেটে এক বিরল প্রতিভার অধিকারী হয়ে সর্বভারতীয় ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেল বাবর আলী। ২৭ বছর বয়সী এই বাবর আলী অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এক যুবক।
    প্রতিভা থাকলে হাজার বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সফলতার চূড়ায় আরোহন করা যায় বাবর আলী তার এক চরম দৃষ্টান্ত।
    কোন কিছুই তার সামনে বাধা হয়ে থাকতে পারে না। সফলতার শিখরে পৌঁছে বাবর আলী সেটাই প্রমাণ করেছে।
    বাবর আলীর বাবা বছর দুয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন। বাবর এর বাবা বেশ কিছুদিন স্থানীয় এক মসজিদের মুয়াজ্জেন অর্থাৎ মসজিদে আজান দেওয়ার কাজ করতেন। চরম অর্থাভাব থাকলেও ছেলের প্রতিভা দেখে সব সময় সঙ্গ দিয়েছেন বাবর এর বাবা-মা। বাবা প্রয়াত হওয়ার পরও মা হাজার দুঃখ কষ্ট সঙ্গে নিয়েও ছেলের পাশে থেকেছেন। স্বপ্ন দেখেছেন ছেলে একদিন সফল হবেই। আজ বাবরের মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণ হল।
    বাবর আজ সফলতার শীর্ষে। তার স্বপ্নের উড়ান সফল হয়েছে। বাড়িতে মা ও এক বোন খুব কষ্টেই দিন গুজরান করেন।
    হাজার কষ্ট থাকা সত্ত্বেও খেলার মাঠ কোনদিন বাবরকে ঠেলে সরিয়ে দেয়নি। বাবরের চরম সমস্যার দিনেও বাবরকে নিজের বুকে টেনে নিয়েছে খেলার মাঠ। ক্রিকেট তাকে দুই হাত দিয়ে সবসময়ই আলিঙ্গন করে রেখেছে।
    প্রতিভা এবং নিজের অধ্যাবসায় থাকলে সে যে একদিন সফল হবেই বীরভূমের বুকে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে তা করে দেখাল বাবর আলী। এখন শুধু মাঠপলশা, সাঁইথিয়া বা বীরভূমের নয়, বরং বাংলার গর্ব হয়ে উঠেছে বাবর।
    দেশের নামকরা যারা ক্রিকেট তারকা, যাদের খেলা দেখে সে দিন-রাত নিজের স্বপ্নের জাল বুনতো, সেই সব মহান ক্রিকেটারদের সাথে সে এখন একই মাঠে খেলছে, তাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করছে, রুম শেয়ার করছে। এ এক চরম পাওয়া।
    তাকে সব সময় সাহায্য ও পাশে থেকে যারা তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, সেই সব মনের মানুষদের অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করছে
    শিখরে পৌছেনো বাবর আলী।
    ক্রিকেটের শিখরে পৌঁছে শিখর ধাওয়ানদের সাথে খেলা, এ তো এক স্বপ্নই ছিল তার।
    বাবর বরাবরেরই উইকেট কিপিং এর পাশাপাশি ব্যাটও ভালো করতো।
    ভারতের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ‘আইডল’ বানিয়ে নিজেকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় এখন বাবর।
    কিন্তু কিভাবে এলো তার এই সুযোগ? সুরাটে হোটেল থেকে ‘নতুন গতি’র এই প্রতিবেদককে সে কথাই শোনাল বাবর আলী।
    কলকাতার মোহামেডান ক্লাবে ট্রায়াল এর জন্য ডাকা হয়েছিল বাবরদের। সেই ম্যাচে নজর কাড়া ৫৭ রান তুলেছিল বাবর। এরপর দিল্লি যায়, সেখানেও ভালো পারফরম্যান্স দেখায়। এরপরই ফাইনাল সিলেকশনে তার নাম আসে। এই নাম দেখার পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় বাবর।
    সুরাটে আয়োজিত বিগ ক্রিকেট লিগে ‘নর্দান চ্যালেঞ্জার্সে’র উইকেট-কিপার কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে সুযোগ পাই। যেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল বলে জানান বাবর।
    সুশান্ত ব্যানার্জি, DSA-র বিদ্যাসাগর সাউ, MGR স্পোর্টস একাডেমীর শেখ মহিমরা বাবরের পাশে সব সময় থেকেছেন। তাদের অবদান অনস্বীকার্য বলে জানায় বাবর আলী।
    বাবর আলীর এই ক্রিকেট জার্নি যেন ইরফান পাঠান ইউসুফ পাঠান দের সাথে অনেকটাই মিল। ইরফান পাঠান, ইউসুফ পাঠানরাও কোনো ধনী পরিবারের দুলাল নন। তাদের বাবাও এক মসজিদের ইমাম ছিলেন অর্থাৎ মসজিদে নামাজ পড়াতেন। সেই ইরফান পাঠান ইউসুফ পাঠানরা ক্রিকেটের চরম শিখরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন। তেমনি বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের যুবক বাবর আলী, তার বাবাও মসজিদে আযান দেওয়ার কাজ করতেন। সেই বাবরও আজ বীরভূম তথা বাংলার গর্ব হয়ে উঠেছেন।
    বাবরের স্বপ্ন এখন ভারতের হয়ে খেলা।
    শুধু মাঠপলসা নয়, সারা বীরভূমবাসী এখন জাতীয় দলে নীল জার্সিতে দেখতে চায় বাবরকে।