বীরভূমের জেলাশাসক ভবনের সামনে বোমাবাজির ঘটনায় গঠন হলো সিট, গ্রেফতার ৪

নিশির কুমার হাজরা, বীরভূম: বীরভূমের জেলা শাসক ভবনের সীমানা প্রাচীরের ভেতরেই গত সোমবার ভোররাতে একসঙ্গে আট আটটি বোমা পরে। এমন ঘটনায় বীরভূমের সিউড়িবাসীরা রীতিমতো সিউড়ি উঠেছেন। একইভাবে ছড়িয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য প্রশাসনের অন্দরেও।

    সিউড়ির গা ঘেঁষে চলে যাওয়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে থাকা বীরভূম জেলা শাসকের বাংলোর প্রাচীরের সীমানার মধ্যে গত সোমবার রাত দুটো আড়াইটে নাগাদ বোমাবাজি হয় বলে জানা যায়। সকালে প্রাচীর এর ভিতরে দেখতে পাওয়া যায় বোমার ছাপ, সুতলি।  মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ ছাড়াও নমুনা সংগ্রহ করে বম্ব স্কোয়াডের একটি দল।

    এ বিষয়ে গতকাল জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছিলেন, “রাতের বেলায় বাংলোর বাইরের দিক থেকে শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।”

    তবে ঘটনার খবর শোরগোল পড়ে যায় পুলিশ প্রশাসন থেকে সাধারণ মহল সর্বত্রই। পড়াটাও স্বাভাবিক। কারণ খোঁজ জেলাশাসকের বাংলোর গায়ে বোমাবাজি এর আগে কোনদিন হয়েছে কিনা কেউ মনে করতে পারছে না। সাথে সাথে প্রশ্ন উঠছে কে বা কারা এত দুঃসাহসিকতা নিয়ে এমন ঘটনা ঘটালো?

    বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিং গতকাল জানান, “ঘটনাস্থলে পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন তদন্ত শুরু হয়েছে।”

    পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বীরভূম পুলিশ সিট গঠন করে। সেই স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য চারজন দুষ্কৃতীকে ইতিমধ্যে আটক করেছে। আটক করা ব্যক্তিদের চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত এই চারজন বোমাবাজির ঘটনায় যুক্ত।

    অভিযুক্ত এই চারজনকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ সুপার শ্যাম সিং সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবিমল পাল জানান, “গতকাল বোমাবাজির ঘটনার পর আমাদের পুলিশের তৈরি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করে এখনো পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। ধৃতরা হলেন আসগর মোল্লা, বাড়ি বাঁশ জোড় উত্তর পাড়া, শেখ কুতুবউদ্দিন, বাড়ি ছাদতলা সিউড়ি, শেখ জয়নাল আবেদীন, বাড়ি বাঁশজোড়, শেখ আনোয়ার, বাড়ি বাঁশজোড়। এদের প্রত্যেকের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে এবং এরা প্রত্যেকেই বাঁশজোড়ের বালিঘাটের সাথে কোন না কোন ভাবে যুক্ত। অভিযুক্তরা সকলেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা স্বীকার করে নিয়েছে এবং এর সাথে আরও যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের নামও বলেছেন।”

    পুলিশের তরফ থেকে আরও জানানো হয় ঘটনার দিন কিভাবে তারা ঘটনাটি ঘটিয়েছিল। জানানো হয়, “ঘটনার আগে তারা নদী ঘাটে জড়ো হয় এবং পরিকল্পনা করে বোমাবাজির ঘটনা ঘটায়। ইতিমধ্যে হুসনাবাদ গ্রাম থেকে তাদের কাছে কোনো একটি ফোন আসে। সেই ফোনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ডিএম বাংলোর সামনে গিয়ে বোমাবাজি করে। ডিএম বাংলোর সামনে বোমা ফাটানোর মূল কারণ হলো হুসনাবাদ গ্রামের সাথে বিরোধ।”

    ধৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, “বারবার পুলিশি অভিযানের ফলে তাদের ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় রাগের বশে এই কাজ করেছে তারা।”

    পুলিশের তরফ থেকে আরও জানানো হয়, এই বোমাবাজির ঘটনা নিয়ে তাদের তদন্ত এখন সবে মাত্র শুরু হয়েছে। সমস্যা আরও সেই ঘটনার সত্যতা প্রকাশ হবে। তবে এই বোমাবাজির ঘটনা সাথে কোন রকম রাজনৈতিক সম্পর্ক এখনো পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে।

    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেদিন রাতে জেলাশাসকের বাংলোর সামনে বোমাবাজির ঘটানোর আগে বীরভূমের এবিপি আনন্দের সাংবাদিকের বাড়িতেও বোমা বাজি করা হয়। মূলত এই দুটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয বলে জানা গেছে।