|
---|
সমীর দাস, কলকাতা:
নবান্নে সোমবার পশ্চিমবঙ্গ সিডিউল কাস্ট অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে তপশিলি জাতিভুক্ত মানুষের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি জানান, সরকার অধিকার ও কল্যাণমূলক পদক্ষেপে সংবেদনশীল ভূমিকা নিয়েছে। গত ১৪ বছরে গৃহীত প্রকল্প রাজ্যে নয়, সমগ্র দেশে এক নতুন দৃষ্টান্ত গড়েছে।
২০১০-১১ সালে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তরের বাজেট ছাড় ছিল মাত্র ১৬০ কোটি টাকা, যা ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকায়। এ সময়ের মধ্যে ৯৯ লক্ষ ৯১ হাজার তপশিলি জাতিগত শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। তপশিলি জাতি–উপজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণি মিলিয়ে প্রদত্ত শংসাপত্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬৭ লক্ষেরও বেশি। আবেদন সংক্রান্ত সময়সীমা ৮ সপ্তাহ থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে ৪ সপ্তাহে।
সরকারি প্রকল্প ‘শিক্ষাশ্রী’র আওতায় পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির তপশিলি জাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের বছরে ৮০০ টাকা স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৫ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রীকে ৮১৪ কোটি টাকার বেশি আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রি-ম্যাট্রিক ও পোস্ট-ম্যাট্রিক পর্যায়ে প্রায় ৮৭ লক্ষ ৩৩ হাজার স্কলারশিপের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে ৩৪টি গার্লস হোস্টেল, ১২টি বয়েজ হোস্টেল, ২৮টি সেন্ট্রাল হোস্টেল ও ৯৭টি আশ্রম হোস্টেল চালু করা হয়েছে। হোস্টেল পরিচালনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা।
‘সবুজসাথী’ প্রকল্পে ৩৭ লক্ষ ৪৭ হাজার তপশিলি জাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীকে প্রদান করা হয়েছে সাইকেল। ‘যোগ্যশ্রী’ প্রকল্পে মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য গোটা রাজ্যে ৫০টি কোচিং সেন্টার চালু করা হয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ৭০০ ছাত্রছাত্রী এই সুযোগ উপভোগ করছেন। সরকারি চাকরির কোচিং পাচ্ছেন ১ হাজার ১৫০ জন। মাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষায় ভালো ফল করা ৭৫০ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রী প্রতিবছর পাচ্ছেন ড. বি. আর. আম্বেদকর মেধা পুরস্কার। গত ১৪ বছরে উচ্চশিক্ষার সহায়ক ঋণ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩২০ জন ছাত্রছাত্রীকে।
তার পাশাপাশি ২০১১ সাল থেকে প্রায় ১ লক্ষ ১৮ হাজার যুবক-যুবতীকে স্কিল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৭১ হাজার ইতিমধ্যেই স্বনির্ভর। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের আর্থিক সহায়তা বাবদ ঋণ ও ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ২২ হাজার মানুষের মধ্যে। ২২টি জেলায় তপশিলি জাতি অধ্যুষিত এলাকায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩০টি স্মার্ট ক্লাসরুম ও ৩৪টি মডেল কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।
‘তপশিলি বন্ধু’ প্রকল্পের আওতায় এখন প্রায় ১১ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষ প্রতি মাসে পান ১ হাজার টাকা বার্ধক্যভাতা। এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির থেকে দেওয়া হয়েছে ৩২ লক্ষ ৩৭ হাজারেরও বেশি জাতিগত শংসাপত্র, ৩৬ হাজারের বেশি শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ ও প্রায় ৮৫ হাজার ৭০০ তপশিলি বন্ধু পেনশন।
রাজ্যে তপশিলি জাতিভুক্ত বিভিন্ন শ্রেণির উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ১০টি উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মতুয়া, বাউড়ি, বাগদি, কুড়মি, নমঃশূদ্র সহ মোট ১০টি সম্প্রদায় উন্নয়ন বোর্ডে খরচ হয়েছে প্রায় ১৩৬ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মানবিক সরকার সর্বদা রাজ্যের মানুষের জন্য কাজ করে। জাতি–ধর্ম–বর্ণ–গোষ্ঠী নির্বিশেষে উন্নয়ন আমাদের মূল লক্ষ্য।”