| |
|---|
লুতুব আলি : নদীয়ার ভূমিপুত্র বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী মিহির লাল চট্টোপাধ্যায়ের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হল সিউড়িতে। আয়োজক বীরভূম সাহিত্য পরিষদ ও মিহির লাল স্মৃতি রক্ষা কমিটি। ভারতের পরাধীনতার নারকীয় অত্যাচার মিহিরলালের মনকে কৈশোর অবস্থা থেকেই দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। স্কুল, কলেজে পড়তে পড়তে স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক তাঁকে ছুঁয়ে যেত। নদিয়ায় পড়াশোনা সম্পন্ন করে তিনি বীরভূমের তাঁতীপাড়ায় চলে আসেন। বিশের দশক থেকেই মিহির লাল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, ভগৎ সিং, ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, রাসবিহারী বসু প্রমুখদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। রামপুরহাটে কংগ্রেসের অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধীজিকে মিহির লাল চট্টোপাধ্যায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গান্ধীজি চেয়েছিলেন পরাধীনতার নাগপাশ থেকে ভারতকে মুক্ত করতে হলে আগে দেশের মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। মিহির লাল এই আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে বুনিয়াদি শিক্ষার প্রসার কে ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলেন। বীরভূমের তাঁতী পাড়ার উন্নয়নের মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে তিনি একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর এই উদ্যোগ সমগ্র বীরভূম জুড়ে রুপায়ন করার চেষ্টা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলির কোন্দল, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি সহ বিভিন্ন ধরনের অসংগতি দেখা দেওয়ায় মিহির লাল কংগ্রেস দল পরিত্যাগ করেন। মিহির বাবু নিরবে, নিভৃতে তাঁতীপাড়ায় বসে জন সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বীরভূম সাহিত্য সভার ঘরে মিহির লাল চট্টোপাধ্যায় এর ১২৫ তম জন্ম দিবসে উপস্থিত ছিলেন তাঁতি পাড়ার ৯৪ বছরের বৃদ্ধা শ্রীমতি বীণাপাণি গুঁই, বাংলার দিকপাল সাহিত্যিক প্রিন্সিপাল তথা ভয়েস চ্যান্সেলর রমা রঞ্জন মুখার্জির পুত্র দেব রঞ্জন মুখার্জি, গবেষক, শিক্ষক, সাহিত্যিক প্রাক্তন প্রিন্সিপাল তথা শিক্ষারত্ন প্রাপক ড. সোমনাথ মুখার্জি প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট জাতীয় শিক্ষক, শিক্ষারত্ন প্রাপক জাতীয় মেন্টর গবেষক পরিবেশবিদ ড. সুভাষচন্দ্র দত্ত। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে মিহির লাল চট্টোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকী পালন ও একই সঙ্গে বই প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সমাজসেবী শিক্ষাবিদ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সমাজ সংস্কারক তথা শিক্ষক , মিহির লালের সর্বক্ষণের সঙ্গী কালিপদ দাসের স্মৃতিচারণা মূলক বইটি দারুণভাবে সমাদৃত হয়। মিহির লালের বর্ণময় জীবনে সমাজসেবার দিকটি বেশি করে পরিলক্ষিত হয়। মিহির লাল ক্ষমতালোভির অসৎ সঙ্গীতের ত্যাগ করে বীরভূমের তাতিপাড়া ও তার সংলগ্ন এলাকায় জাতীয়তাবাদী উন্মেষ ও নারী শিক্ষা দীক্ষা ও সাবলম্বী হওয়ার দিশা দেখান। এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজ ব্যবস্থায় মিহির লালের বর্ণময় জীবন নিয়ে আমাদের আরও বেশি করে চর্চা করতে হবে।


