|
---|
সেখ সামসুদ্দিন, ৫ সেপ্টেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারিতে “মেমারী স্বপ্নসন্ধানী শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র”-এর উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবছরেও শিক্ষক দিবস ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় ও আন্তরিকতায় উদযাপিত হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের মিলিত উপস্থিতিতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার উষ্ণ আবহে অনুষ্ঠানটি স্মরণীয় হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানের সূচনা লগ্নে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী শিক্ষক রামকৃষ্ণ কুণ্ডু। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন— “শিক্ষা শুধু বইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, তা মনুষ্যত্ব গঠনের সিঁড়ি। এই কেন্দ্র শিক্ষাকে সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করে এক নতুন দিশা দেখানোর চেষ্টা করছে।” অনুষ্ঠানের শুরুতে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান-এর প্রতিকৃতি ও প্রয়াত প্রধান শিক্ষক ও সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি চিত্তরঞ্জন কুণ্ডু-র প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। প্রথমে মাল্যদান করেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক রামকৃষ্ণ কুণ্ডু, পরবর্তীতে বিশিষ্ট সমাজসেবী সেখ সামসুদ্দিন, শিক্ষিকা অভয়া দাস, সুলেখা মাহাতো, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ঋত্বিকা কুণ্ডু, কোয়েনা দে, সুপ্রভা চক্রবর্তী, প্রীতি ঘোষ, রিমঝিম ঘোষ, কৃষ্ণেন্দু মুর্মু, নবকুমার পাল, নন্দিনী বাঘ, জেসমিন খাতুন সহ আরও অনেকে। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষিকা চন্দ্রা মিত্র, অভিভাবক-অভিভাবিকা সহ বিশিষ্টজনেরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্যের মধ্য দিয়ে দিনটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ঋত্বিকা কুণ্ডুর নৃত্য পরিবেশনা সকলকে মুগ্ধ করে। এদিন সংস্থার বার্ষিক সাংস্কৃতিক পরীক্ষার ভিত্তিতে অনলাইন ও অফলাইন সকল বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের মেডেল, শংসাপত্র ও বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। নৃত্যে কৃতিত্বের জন্য মেডেল পায় ঋত্বিকা কুন্ডু, কোয়েনা দে সহ আরও ১৫ জন। বিশেষ পুরস্কার পান আরও ৫ জন ছাত্রছাত্রী। মোট ১৭৫ জন ছাত্রছাত্রীকে কৃতিত্বের শংসাপত্র প্রদান করা হয়। বিশিষ্ট সমাজসেবী সেখ সামসুদ্দিন তার বক্তব্যে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করতে ছাত্র-ছাত্রীদের বরণ করে, কিছু উপহার তুলে দেন। “মেমারি স্বপ্নসন্ধানী শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র” শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি এক সামাজিক উদ্যোগ। এখানে চলমান কোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে—নৃত্য, আবৃত্তি ও উপস্থাপনা প্রশিক্ষণ, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের কোচিং (পঞ্চম শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্যন্ত), কম্পিউটার শিক্ষা, স্পোকেন ইংলিশ কোর্স, টেলারিং/সেলাই প্রশিক্ষণ। এছাড়াও দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট কোর্সে বিনামূল্যে ভর্তি ও পাঠদান করা হয়। শিক্ষক রামকৃষ্ণ কুণ্ডু জানান, “শিক্ষার আলো ছড়াতে হলে সংস্কৃতির মাধ্যমে সমাজকে যুক্ত করতে হয়। আমরা শিক্ষার সঙ্গে চেতনার সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে চাই।” তিনি আরও বলেন,
“শুধু পাঠ্যক্রম নয়, আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সমাজ সচেতন, সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ও মানবিক মানুষ হয়ে উঠুক, সেটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।” সকলের মিষ্টি মুখের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন রামকৃষ্ণ কুণ্ডু, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক-অভিভাবিকাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে দিনটি হয়ে ওঠে এক স্মরণীয় অধ্যায়– শিক্ষা, শ্রদ্ধা ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল মেলবন্ধন।