মুসলিম নাগরিকদের একটা অংশ এবার “তোষণ চাই না’’ বলে চিঠি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে

জাকির হোসেন সেখ, ২০ জুন, নতুন গতি, কলকাতা: মুসলিম নাগরিকদের একটা অংশ এবার “তোষণ চাই না’’ বলে চিঠি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সংবাদ মাধ্যমে আজ এমন‌ই খবর প্রকাশ হয়েছে। আর চিঠির বয়ানে পরিস্কার যে, কোন‌ও একজন মুসলিম ব্যক্তির অপরাধের দায় তার ধর্ম পরিচয়ে গোটা মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর চাপানোর বিরুদ্ধে এবার সোজা ব্যাটেই খেলতে প্রস্তুত তাঁরা।
গতকাল বুধবার কলকাতাবাসী ৫০ জন মুসলিম নাগরিকের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো একটি চিঠিতে শহরে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া দু’টি ঘটনায় রং না-দেখে ‘’দোষীদের’’ বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করার সাথে সাথে কোনও অপরাধের ঘটনাতেই যেন সাম্প্রদায়িক রং না দেখা হয়- সে অনুরোধও করা হয়েছে।
এনআরএস হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহ এবং এক মডেলের অ্যাপ-ক্যাব ঘিরে বাইকসওয়ারিদের দাপাদাপি, দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযুক্তেরা ঘটনাচক্রে মুসলিম। ধর্ম দেখে অপরাধের বিচার বা অপরাধীর ধর্ম দেখা আমাদের সংবিধান কোনো ভাবেই স্বীকৃতি দেয় না। তাসত্ত্বেও কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং নেট-নাগরিকদের একটা অংশ অপরাধীর ধর্মীয় পরিচয় নিয়েই জল ঘোলা করতে ব্যস্ত থাকে।
‘’দু’টি ঘটনার হামলাকারীরা মুসলিম— তাতে আমরা ব্যথিত এবং লজ্জিত’’- এই কথা বলে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা হয়েছে, ‘’প্রথমত দোষীদের আইনি সাজা দিন। মুসলিমরা জড়িত, এমন সব ঘটনাতেই তেমনটা করুন। মুসলিম বলে তারা যেন কখনওই রেহাই না-পায় (লোকে ইদানীং যা ভাবছে)। তাতে একটা বার্তা যাবে, একটি গোষ্ঠীকে আড়াল করা হচ্ছে না (যা বেশির ভাগ লোকের বিশ্বাস)।’’ এ-সবই হাজারো ‘নিঃশব্দ ভুক্তভোগীর’ কথা বলে চিঠিতে দাবি করা হয়েছে।
চিঠিতে নাম রয়েছে বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার মুদার পাথেরিয়ার‌ও। তিনি বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বা প্রশাসনকেই বোঝাতে হবে, মুসলিমদের বিষয়ে কিছু ধারণা ঠিক নয়।’’ আজন্ম কলকাতাবাসী, একটি নির্মাণ সংস্থার পেশাদার তাজ‌উদ্দিন চৌধুরী পোদ্দার মারোয়াড়ি পরিবারে বিয়ে করেছেন। নিজেকে ধর্মনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দিয়েই তিনি বলেছেন, ‘‘এটা ভুলভাল গল্প যে, মুসলিমেরা তোষণ চান। প্রশাসনকে এই ধারণা ভাঙতে হবে।’’
দীর্ঘদিন কলকাতাবাসী, ওয়াজ়িদ আলি শাহের বাড়ির ছেলে শাহেনশাহ মির্জা আবার মনে করেন, মুসলিমদের একাংশের মধ্যে কয়েকটি আইনি দিক নিয়ে ভুল ধারণা আছে। যেমন অনেকে টুপি পরে হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইকে বসেন। খামোখা তাঁদের জীবন বিপন্ন হয়। গোষ্ঠীর বিষয়েও ভুল ধারণা তৈরি হয়। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকটি এলাকায় ইমামদের মাধ্যমেও আমরা এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি। এর পাশাপাশি, প্রশাসনকেও বলব, অপরাধকে অপরাধ বলেই দেখা হোক।’’ কিছু এলাকায় আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিও যুবকদের অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয় বলে মনে করেন মুদার। মমতাকে পাঠানো চিঠিতে মুসলিম তরুণদের মধ্যে লিঙ্গসংবেদনশীলতা বা আইনি সচেতনতা বাড়ানোর আর্জি জানানো হয়েছে।
চিঠি লেখার এই পরিস্থিতি কি আদৌ কাম্য ছিল ? এর উত্তরে সাহিত্যিক-অধ্যাপক নবনীতা দেবসেনের বক্তব্য হলঃ- ‘‘মুসলিমদের এত জনকে যে এমন চিঠি লিখতে হচ্ছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসেবে লজ্জাই করছে। কই, হিন্দুদের তো এমন চিঠি লিখতে হয় না।’’