রাজ্য স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হাই জাম্পে স্বর্ণপদক জয় রাজনগরের ছাত্রের

 

     

     

     

     

    খান আরশাদ, বীরভূম: 

    রাজ্য স্তরের প্রাথমিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হাই জাম্পে স্বর্ণপদক জয় করল রাজনগরের বেলবুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র শিবলাল টুডু।
    ৩৯ তম বার্ষিক ক্রীড়া উৎসব আয়োজিত হয় মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। ৯ মার্চ এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হাইজাম্পে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ করে শিবলাল টুডু।


    শিবলাল টুডুর এই কৃতিত্বে গর্বিত সারা রাজনগরবাসী। বীরভূমের রাজনগর ব্লকের ভবানীপুর অঞ্চলের করঞ্জাবুনি গ্রামের শিবলাল টুডু ছোটবেলাতেই তার বাবা-মাকে হারায়। শিবলালের বয়স যখন আড়াই বছর, তখন তার মা লিলি টুডু স্ট্রোকে মারা যান। মা হারা আড়াই বছরের শিশুকে কোলে তুলে বাকি জীবনটা কাটাতে চেয়েছিলেন পেশায় দিনমজুর লক্ষ্মীশ্বর টুডু। কিন্তু বিধির বিধান কে রুখতে পারে ! শিবলালের বয়স যখন প্রায় চার বছর, তখন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা লক্ষীশ্বর টুডু এবং কয়েকদিনের মধ্যেই তিনিও ইহলোক ছেড়ে চলে যান।

    অনাথ শিবলাল টুডুর চারপাশে তখন ঘোর অন্ধকার। সেসময়ই আশার আলো রূপে হাজির হন শিবলাল টুডুর সম্পর্কে এক কাকা এমেল হেমরম। এমেল তখন সদ্য বিবাহিত। নববিবাহিতা স্ত্রী কবিতা হেমরমের কাছে অনাথ শিবলালকে কোলে তুলে নেওয়ার কথা জানালে সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি জানান এমেলের স্ত্রী কবিতা। গ্রামের সব আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এমেলের এই মানবিকতা দেখে সাধুবাদ জানায়। অনাথ শিবলালকে বাড়ি নিয়ে আসেন এমেল। একটু বড় হলে তাকে ভর্তি করেন বেলবুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছোট থেকেই শিবলাল পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় চরম আগ্রহী দেখে এমেল ও তার স্ত্রী তাকে উৎসাহ যোগান। এরই মধ্যে এমেল ও কবিতার ঘর আলো করে এসেছে আরও দুটি সন্তান। এমেলের বড় ছেলেটি শুভঙ্কর হেমব্রম সাড়ে চার বছরের ও আনিসা হেমব্রম এখন আড়াই বছরের। সামান্য কয়েক বিঘা জমি এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ওপর ভরসা করেই কোনো রকমে দিন যাপন করছেন এমেল।
    নিজের দুই ছেলের পাশাপাশি শিবলালকেও নিজের ছেলের মতোই মানুষ করে তুলছেন এমেল ও তার স্ত্রী। শিবলালের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে তাদেরও আবেগে আনন্দাশ্রু ঝরছে।


    শিবলালের সোনা জয়ের খবর তারই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মাধ্যমে পান এমেল। খবরটা চারিদিকে ছড়ানো মাত্রই গ্রাম সহ পুরো রাজনগর বাসীরা শুভেচ্ছা জানাতে থাকে ফোন মারফত।
    এমেল জানান শিবলালকে তার স্কুলের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা খেলাধুলায় উৎসাহ প্রদান করেছেন। তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
    শিবলালের সোনা জয়ের খবর শুনে খুশি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রবোধ ব্যানার্জি, সহ-শিক্ষক রবীন্দ্র মুর্মু সহ অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা।


    রাজনগরের বিডিও শুভাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন শিবলালের সোনা জয় আমাদের সকলের গর্বের বিষয়। সে আরো এগিয়ে যাক। রাজনগর ব্লক প্রশাসন সব সময় তার পাশে আছে। তার এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রশাসনের তরফে সব ধরনের সাহায্য করা হবে।

    রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত-কর্মাধ্যক্ষ সুকুমার সাধু শিবলাল টুডুর এই সাফল্যে উচ্ছসিত হয়ে জানান শিবলাল আমাদের রাজনগরের গর্ব, আমাদের জেলার গর্ব। আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক বাবা-মা হারা কিশোর রাজ্য স্তরের খেলায় গিয়ে যে শীর্ষস্থান দখল করেছে এটা তার চরম কৃতিত্ব। সে রাজনগর তথা জেলা ক্রীড়া জগতের নক্ষত্র। শিবলাল তার পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় আরো উন্নতি করুক এই কামনা করি, ভবিষ্যতে আমরা সব সময় ওর পাশে থাকব এবং ওর যে কোন প্রয়োজনে তাকে ও তার পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। বলে জানিয়েছেন পূর্ত কর্মাধক্ষ্য।

    নতুন গতি

    News Publication