| |
|---|
কুতুব আহমেদ : মানবতাবাদী শিল্পপতি মোস্তাক হোসেনকে নিয়ে যে বিপুল পরিসরে কাজ করে চলেছেন ‘নতুন গতি’ পত্রিকার সম্পাদক এমদাদুল হক নূর, সম্প্রতি তার কিছুটা ঝলক দেখা গেল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসের অডিটরিয়ামে। গত ৯ নভেম্বর রবিবার সেখানে জনাব মোস্তাক হোসেনকে নিয়ে রচিত ‘নতুন গতি’ নিবেদিত গ্রন্থের প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়ে গেল মহা সাড়ম্বরে। ‘বাংলার গৌরব মোস্তাক হোসেন’ নামের গ্রন্থটির লেখক আবদুর রউফ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মোস্তাক হোসেনকে নিয়ে ‘নতুন গতি’ প্রকাশনীর এটি দ্বিতীয় গ্রন্থ। এর আগে প্রয়াত লেখক নুরুল আমিন বিশ্বাসকে দিয়ে এমদাদুল হক নূর ‘মানবতাবাদী মোস্তাক হোসেন’ গ্রন্থটি লিখিয়েছিলেন। যদিও বিষয় ও বৈচিত্র্যের দিক থেকে দুটি গ্রন্থই মৌলিকত্বের দাবি রাখে।
‘নতুন গতি’র চিরাচরিত ঐতিহ্য অনুসারে পবিত্র কোরআন পাঠের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। কোরআন শরীফ থেকে কিছু অংশ পাঠ করেন মাওলানা মুহাম্মদ সফিউল্লাহ মল্লিক। তারপর অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত ভাষণ দেন ‘নতুন গতি’ পত্রিকার কর্ণধার তথা এই বাংলায় মোস্তাক হোসেনকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করা সাহিত্য ব্যক্তিত্ব ও সম্পাদক জনাব এমদাদুল হক নূর। তিনি বলেন, “জনাব মোস্তাক হোসেনকে নিয়ে আরও একাধিক গ্রন্থ প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। বিজ্ঞাপন এবং প্রচার মারফত সে কথা আমরা বার বার প্রচার করেছি। কিন্তু তাঁকে নিয়ে যখন আমি বই করতে শুরু করি, তখন নানা দিক থেকে নানা প্রশ্ন ভেসে উঠছিল যে, একটা মানুষকে নিয়ে এত বই করার কি আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে?
জনে জনে এই প্রশ্নের উওর দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমি কখনও লিখিত আকারে, কখনও সভা-সমিতিতে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। মোস্তাক হোসেনের প্রাসঙ্গিকতা এবং তাঁকে নিয়ে কেন আরও বেশি মূল্যায়ন হওয়া উচিত— সেখানেই আমি স্পষ্ট করেছি আমার বক্তব্য।”
সম্পাদক এমদাদুল হক নূর যে যুক্তিবাদের আলোকে মোস্তাক হোসেনের প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করেন, স্বাভাবিকভাবেই তার ওপর আর কোনও প্রশ্ন চলে না।
এরপর প্রারম্ভিক ভাষণ দেন বিশিষ্ট শিক্ষক আবদুর রশিদ। তিনি ‘নতুন গতি’ পত্রিকার আদর্শ এবং মোস্তাক হোসেনের মানবতাবাদের ওপর তাঁর মননশীল বক্তব্য তুলে ধরেন।
‘চাঁদের হাটে’ মুক্তি পেল ‘বাংলার গৌরব মোস্তাক হোসেন।’ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করলেন এই বাংলার আর এক কৃতি সন্তান এবং প্রাক্তন আইএএস ও জি.ডি স্টাডি সার্কেলের চেয়ারম্যান সেখ নুরুল হক।
গ্রন্থ প্রকাশের পর বক্তব্য রাখার সময় মোস্তাক হোসেনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সমাজে মোস্তাক হোসেনের মতো মানুষ বিরল। আরও অনেক কোটিপতি তৈরি হয়েছেন এই সমাজে। তাঁদের সম্পদও অঢেল। কিন্তু মোস্তাক সাহেবের মতো এমন দিলদরিয়া মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার এবং তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিনের মেলামেশার সুবাদে এটুকু বলতে পারি, মানুষ হিসাবে তিনি অনন্য।”
এরপর বক্তব্য রাখেন এদিনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “এই বাংলায় মিশন শিক্ষার ক্ষেত্রে মোস্তাক হোসেনের যে অবদান, তাকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। একক প্রচেষ্টায় একটা গোটা প্রজন্মকে তিনি হাত ধরে টেনে তুলে আনছেন, যা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। তবে সংখ্যালঘুদের জন্য যেসব সরকারি স্কিম আছে, সেগুলোরও সদ্ব্যবহার করা উচিত আমাদের।” এদিনের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হিসাবে মোস্তাক-দুহিতা এবং জি.ডি হসপিটাল অ্যাণ্ড ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউটের সিইও মুসরেফা হোসেনের উজ্জ্বল উপস্থিতি নজর কেড়ে নেয় সকলের।
তিনি আবেগঘন এবং যুক্তিনিষ্ঠ বক্তব্যে নিজের পিতার কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, “নীতি, শিক্ষা এবং কর্ম— এই তিনটি বিষয় দিয়ে আমি আমার আব্বাকে বোঝার চেষ্টা করি। প্রকৃত অর্থেই তিনি আমার কাছে একজন আর্দশ মানুষ। তাঁকে ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, সব কাজই তিনি নিখুঁত ভাবে করার চেষ্টা করেন। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আমাদের ভাই-বোনদের সময় দিয়েছেন, নিয়ম করে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছেন এবং সময়মতো পড়াতে বসানো, খেলাধূলা, সাঁতার শেখানো ইত্যাদি কাজগুলো অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে করেছেন।এখনও অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও রবিবারটা তিনি পরিবারকে সময় দেবার জন্য বরাদ্দ রাখেন।
আব্বা বলেন, যখন যে কাজটা করবে নিজের একশো শতাংশ দিয়ে করার চেষ্টা করবে। তিনি কখনও যোগ্য কাউকে বঞ্চিত করে অন্যকে সুযোগ দেবার পক্ষপাতী নন। ডোনেশন দিয়ে স্কুল-কলেজের সিট দখল করাকে তিনি কিছুতেই প্রশ্রয় দিতেন না।আমাদের বলতেন, নিজের যোগ্যতায় যা করার করবে।
আব্বার নীতিগত দিকটিও খুবই মজবুত। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে যে খুতবা পাঠ হয়, খাবার টেবিলে সেই খুতবা নিয়ে আবার আলোচনা হয় আমাদের বাড়িতে। তাছাড়া কাজই তাঁর কাছে ধ্যান-জ্ঞান। এমন একজন কর্মপ্রিয় মানুষের সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত। আজ আপনারা এমদাদ আঙ্কেলের ডাকে এখানে এসেছেন,যিনি আমার আব্বাকে নিয়ে অনেক কাজ করে চলেছেন, তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন উত্তরবঙ্গের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. জ্যোতিপ্রদাস রায়। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ‘নতুন গতি’ পত্রিকার সম্পাদক এমদাদুল হক নূরের সঙ্গে তাঁর সখ্যতার কথা উল্লেখ করেন। বিস্মৃতপ্রায় লেখক এম. আবদুর রহমানের ওপর গবেষণা সংক্রান্ত বি
ষয় নিয়েই দুজনের মধ্যে আলাপ, উল্লেখ করেন তিনি। তবে শিল্পপতি, শিক্ষাব্রতী ও সমাজসেবী মোস্তাক হোসেনকে নিয়ে যে কাজ করে চলেছেন এমদাদুল হক নূর, তাকে বাহবা দেন ড. জ্যোতিপ্রদাস রায়।
উল্লেখ্য, এদিনের অনুষ্ঠানের আরও একটি আকর্ষণীয় বিষয় ছিল মোস্তাক হোসেনকে নিয়ে লেখা ৪৭ জন কবির লেখা ৫০টি কবিতার একটি বই। এই বইটিরও প্রকাশক ‘নতুন গতি প্রকাশনী।’ সম্পাদনা করেছেন এমদাদুল হক নূর এবং মনিরা খাতুন।
বক্তৃতা, গান, কবিতা পাঠ সহ নানা অনুষঙ্গের ডালিতে সাজানো ছিল ‘বাংলার গৌরব মোস্তাক হোসেন’ গ্রন্থ প্রকাশের অনুষ্ঠান। উপরিউল্লিখিত বিশিষ্টজনেরা ছাড়াও এদিন বক্তব্য রাখেন কুমারেশ চক্রবর্তী, সানজিদা খাতুন, সুরঞ্জন মিদ্দে, সাইফুল্লাহ, ড. নুরুস সালাম, ড. শেখ কামালউদ্দিন, সৌমিত্র দস্তিদার প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মামূন ন্যাশনাল স্কুলের সম্পাদক কাজী মুহাম্মদ ইয়াসীন, নবাবীয়া মিশনের সম্পাদক সাহিদ আকবার, পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা পর্ষদের সচিব মুকলেসুর রহমান, আলতাফউদ্দিন সরকার প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষক ও সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব মনিরুল ইসলাম। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন ‘নতুন গতি’ পত্রিকার ম্যানেজার রফিকউদ্দিন মণ্ডল।


