নিরবে নিভৃতে চলে গেলেন “দাবার চাল” এর স্রষ্টা কুমার চৌধুরী।

সেখ মনোয়ার হোসেন, বর্ধমান: নিরবে চলে গেলেন সিনেমা জগতের একজন প্রখ্যাত পরিচালক কুমার চৌধুরী। নিজের জীবদ্দশায় মুম্বাইয়ের মেহবুব স্টুডিওতে সারা জীবন ডিরেকশন এর কাজ করেছিলেন নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী, এছাড়াও কলকাতা ও বর্ধমানে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে বাংলা সিনেমার পরিচালনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন, ১৯৮০ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত টালিগঞ্জে বিভিন্ন সিনেমার পরিচালক, সহ পরিচালক হিসাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

    কুমার চৌধুরীর পরিচালনায় ১৯৮৭ সালে “দাবার চাল” নামে একটি সিনেমা তৈরি হয়। মুখ্য অভিনেতা ছিলেন দীপঙ্কর দে, সুমিত্রা মুখার্জি, রাজশ্রী রায় চৌধুরী, অনুপ কুমার, তরুণ কুমার, শুভেন্দু, সমিত ভঞ্জ প্রমূখ, ৮৭ -৮৮ সালে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এই সিনেমাটি।
    পরিচালক কুমার চৌধুরী ” অগ্নিবীনা” নামক আরো একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন। যার প্রডিউসার ছিলেন বাবা সিং , কিন্তু দুর্ভাগ্যর বিষয় ওই সিনেমাটি আজও রিলিজ হয়নি। প্রডিউসার বাবা সিং এর বাড়ি ছিল বর্ধমানের পানাগড়ে কিন্তু ইন্দ্রিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর তিনি দেশান্তর হয়ে যান শিখদের ওপর দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে। সিনেমাটি আজও রিলিজ হয়নি এবং প্রডিউসার বাবা সিং আর দেশে ফিরে আসেনি বলেই শোনা যায়।
    পরিচালক কুমার চৌধুরীর প্রকৃত নাম নাজির চৌধুরী, পিতা চৌধুরী হাবিবুর রাসুল, মাতা গাদী চৌধুরী, বাড়ি বর্ধমান শহরের বি সি রোডের উপর খান পাড়ায়, পূর্বপুরুষদের বাড়ি ছিল বর্ধমান জেলার গোলসি গ্রামে, ৬৮ সালে গোলসি গ্রাম থেকে বর্ধমান শহরে চলে আসেন জীবন জীবিকার সন্ধানে পিতার সঙ্গে। ছোটবেলায় তার পড়াশোনা মানকর হাইস্কুল থেকে, পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বেতার শিল্প প্রতিষ্ঠান সেই সময়কার সবথেকে বড় রেডিও, গ্রামা ফোন দোকান ছিল। ছোটবেলা থেকেই অভিনয় আবৃত্তি ওপর ঝোঁক ছিল পরবর্তীকালে টালিগঞ্জে সহকারি পরিচালনা ও পরিচালকের কাজ করতে শুরু করেন, তখন তিনি তার পৈতৃক নামটি উহ্য রেখে নতুন নাম নেন কুমার চৌধুরী।  এবং বিশেষ দক্ষতায় কাজও চালিয়ে গেছেন যোগ্যতার সাথে কিন্তু ১৯৯০ সালে টালিগঞ্জ কে বিদায় জানিয়ে বোম্বাইয়ের অধুনা মুম্বাইয়ের মেহেবুব স্টুডিওতে সহকারী পরিচালনায় যোগদান করেন। মেহবুব স্টুডিও র পরিচালনায় কুমার চৌধুরী একটি ছাত্রদের ওপর টেলিফিল্ম তৈরি করেন যা খুবই নাম করেছিল সেই সময়। এছাড়াও অনেক সিনেমাতে সহকারী পরিচালনা বা পরিচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন গৌরবের সঙ্গে।
    গত ৫ই নভেম্বর ২০২৫ বুধবার সন্ধ্যা ৫ ঘটিকায় মৃত্যুবরণ করেন বর্ধমানের নিজ বাড়িতে, মৃত্যু কালে দুই পুত্র ও স্ত্রী কে রেখে যান, ৬ নভেম্বর২০২৫ বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর বর্ধমান শহরের পীর বাহারাম কবরস্থানে কবরস্থ করা হয় কুমার নাজির চৌধুরী কে ,শহরের অগণিত ধর্মপ্রাণ ও সংস্কৃতি পরায়ণ মানুষ তার জানাযায় শরিক হন এবং দাবার চালের স্রষ্টা কে নীরবে বিদায় জানান l