জামুড়িয়ার ছত্রিশগড়ে অজয়ের তীরে বুড়ো পীর বাবার ঊরশ উৎসব ও মেলা

স্টাফ রিপোর্টারঃ  পশ্চিমবর্ধমানের জামুড়িয়ার শ্যামলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ছত্রিশগণ্ডা মৌজাস্থিত অজয় নদের তীরে হযরত মাওলানা সৈয়দ শাহ্ নূর মোহাম্মদ (রহ. ) এর ঊরশ উপলক্ষে জমজমাট মেলা শুরু হয়েছে। চলবে পাঁচ দিন ধরে। একশো বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই ঊরশ উৎসব। বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ চাদর চড়ান, সিন্নি দেন। খনি-শিল্পাঞ্চলের এই বিখ্যাত সুফি এলাকায় বুড়োপীর বাবা নামে খ্যাত। এবার মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী । অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও মেলা কমিটির বিশেষ সদস্য লাল্টু কাজী। উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট সংগঠক সেখ গব্বর ও সেখ ভলু, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে পরোপকারী বলে পরিচিত লোকমান আন্সারী ও নূর জামাল প্রমুখ। রাতের এই মেলায় ধর্ম ও ভাষা নির্বিশেষে যোগ দিয়ে থাকেন অসংখ্য মানুষ। এবছরও তার অন্যথা হয়নি।

    বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, এই মেলা হল সম্প্রীতির মিলন স্থল। তিনি বলেন, সব ধর্মের মানুষ পীর বাবাকে মান্য করেন। তিনি পীর বাবার দরগায় প্রণতি জানান। জনপ্রিয় সমাজসেবী লাল্টু কাজী বুড়োপীর বাবার মাজারকে কেন্দ্র করে অজয় নদের তীরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান। তিনি জানান, মালিকানাধীন প্রয়োজনীয় জমিও আছে। লাল্টু কাজী বলেন, এই দাবি পূরণ হলে এলাকার মানুষ আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে উপকৃত হবেন।
    এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বুড়োপীর বাবা কয়েক শতাব্দী পূর্বে বাগদাদ থেকে এখানে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। দীর্ঘ জীবন লাভ করার কারণে তিনি মানুষের কাছে বুড়োপীর বাবা নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন । অজয় নদের তীরে নির্জন এলাকায় তিনি সুফি সাধনা শুরু করেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। সময়ের দূরত্বে তা এক সময় বিলীন হয়ে যায়। বিহারের পটনা শরীফ থেকে ছত্রিশগণ্ডায় শিষ্য কাজী মোহাম্মদ হোসেনের আতিথ্যতা গ্রহণ করতে আসেন হযরত সৈয়দ শাহ্ জাফর আলি (রহ.)। তিনি বুড়োপীর বাবার সমাধি সনাক্ত করেন। হযরত সৈয়দ শাহ্ জাফর আলি (রহ) রানিগঞ্জের সৈয়দ শাহ্ সামসুদ্দিন (রহ) এর ছোট ভাই। পটনা শরীফে তাঁর দরগা আছে। বিশিষ্ট সমাজসেবী লাল্টু কাজীর দাদাজি কাজী মোহাম্মদ হোসেন দরগা নির্মাণের পর শুরু হয় ঊরশ উৎসব ও মেলা । পীরসাহেবের মাজারে আধুনিক নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৭৬ সালে, ১৯৭৯ সালে তা শেষ হয়। বস্তুত, খনি-শিল্পাঞ্চলে বুড়োপীর বাবার ঊরশ উৎসব সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।