|
---|
নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক:সিসিটিভি ভাঙা, একই সময়ে সাতদিনের লম্বা ছুটিতে ২ সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী, তৃণমূলে ফেরার ইচ্ছে- টিটাগড়ের বিজেপি কাউন্সিলর, যুব নেতা মণীশ শুক্লার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে জোরাল হচ্ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব।
অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে হাওড়ার বৈঠক সেরে সবে ফিরেছিলেন। টিটাগড়ে নিজের অফিসে ঢুকতে যাবেন, তখনই বাইক থামিয়ে দুই যুবক এসে দাঁড়ায়। তারপর পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে চারটে গুলি। বুকে-মাথায় গুলি নিয়ে নিজের খাসতালুকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লেন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বাহুবলী বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা। রবিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সোমবার ১২ ঘণ্টার ব্যারাকপুর বনধ ডেকেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই বনধকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় টিটাগড়, খড়দহ, এমনকী কলকাতার এনআরএস হাসপাতাল চত্বরও। রবিবার মণীশ খুন হওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিজেপি। কিন্তু টিটাগড়, খড়দহের রাজনৈতিক হাওয়ায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে অনেক রহস্যময় কাহিনিও।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের আনাচে কানাচে অনেকেই বলছেন, মণীশ শুক্লা খুনের পিছনে থাকলেও থাকতে পারে পুরনো অঙ্ক। এমনকী এও শোনা যাচ্ছে, বিজেপির সঙ্গে সম্প্রতি দূরত্ব বাড়াচ্ছিলেন মণীশ। সূত্রের খবর এমনও ,মণীশ নাকি সম্প্রতি ফিরতে চাইছিলেন তৃণমূলে। তাতেই কি রোষের মুখে খুন হতে হলো মণীশকে? এমন দাবি শুধু তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম করছেন, তাই নয়। এলাকায় এমন গুঞ্জন বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল।
এদিন ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘মণীশের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আজকের নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক খুন। কিন্তু অর্জুন সিং ওকে গুণ্ডা দিয়ে বিজেিপ করতে বাধ্য করায়। কিন্তু বিজেপিতে আর থাকতে পারছেন না মণীশ। তাই তৃণমূলে ফিরতে চাইছিলেন।’ রীতিমতো অর্জুনের দিকে সন্দেহের আঙুল ঘুরিয়ে দিয়েছেন ফিরহাদ। বলেন, ‘যে সময় ও পার্টি অফিসে এল, তার আগেই কৈলাস বিজয়বর্গীয় জরুরি ফোন করছিলেন অর্জুনকে। এরপরই কলকাতায় চলে এলেন অর্জুন। কী এমন জরুরি ফোন ছিল? ছোটখাটো নেতাদেরও তো বিজেপি সিআরপিএফ দেয়, মণীশকে দিল না কেন?’
রবিবার সকালে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে হাওড়ার পাঁচলায় গিয়েছিলেন মণীশ শুক্লা। তিনি ছিলেন ব্যারাকপুর সংসদীয় এলাকার বিজেপি যুবনেতা। হাওড়ায় দলীয় সভা সেরে অর্জুনের সঙ্গেই এ দিন ফেরেন মণীশ। তিনি টিটাগড়ে নেমে যান। অর্জুন জগদ্দলের দিকে এগিয়ে যান। এরপর অর্জুন কলকাতায় ফিরে আসেন বলে অভিযোগ করেছেন ফিরহাদ হাকিম। এর কিছুক্ষণ বাদেই মণীশ গুলিবিদ্ধ হন। সাধারণত মণীশ শুক্লার সঙ্গে সর্বদাই অন্তত ৭ জন দেহরক্ষী থাকতেন, তার মধ্যে ২ সশস্ত্র। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় কোনও দেহরক্ষীই কাছে থাকলেন না কেন, উঠছে সেই প্রশ্ন। এমনকী মণীশ শুক্লার ২ সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীই রবিবার থেকে সাতদিনের ছুটি নিয়েছিলেন। এটা কি নেহাতই কাকতালীয়? উঠছে প্রশ্ন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ন’টা নাগাদ টিটাগড়ের পুরানি বাজারের এপি দেবী রোডের নিজের অফিসে ঢুকছিলেন মণীশ। তখনই আততায়ীরা খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করে। রক্তাক্ত মণীশকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যারকপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ততক্ষণে হাসপাতালের বাইরে বিরাট ভিড় জমিয়েছে মণীশ অনুগামীরা। সেই ভিড় ঠেলে অ্যাম্বুল্যান্স ছোটে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সিসিটিভি ফুটেজ! ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও, ঠিক ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভাঙা। ইতোমধ্যেই তদন্তভার গিয়েছে সিআইডি’র হাতে। তদন্ত শুরু করেছেন আধিকারিকরা।