সময় থাকতে শুধরে যান, নয়ত সময় শুধরে দেবে: মোদি সরকারকে মাহমুদ মাদানীর হুঁশিয়ারি

সময় থাকতে শুধরে যান, নয়ত সময় শুধরে দেবে: মোদি সরকারকে মাহমুদ মাদানীর হুঁশিয়ারি

    নতুন গতি,ওয়েব ডেস্ক: ভারতীয় সংবিধানবিরোধী নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের আমদানিকারক মোদি সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি সংকেত দিয়ে জমিয়তে উলামা হিন্দের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদ মাদানী বলেছেন, সময় থাকতে শুধরে যান, নয়ত সময় আপনাদের শুধরে দেবে।

    মাওলানা মাহমুদ মাদানী বলেছেন, সরকার দেশের আইন ও সংবিধানকে অস্বীকার করে ধর্মভিত্তিক সিএএ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। দেশের সংবিধান বিরোধিতা দেশের সাথে গাদ্দারির নামান্তর। সরকারকে আমি বারবার বলে এসেছি, বলছি আর বলতে থাকব, ‘সময় থাকতে আপনারা ভুল শুধরে নিন, নয়ত সময় আপনাদের শুধরে দেবে।

    অপ
    সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গাঙ্গুহের ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানে এক অনুষ্ঠানে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে দেওয়া বক্তব্যে জমিয়তে উলামা হিন্দের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদ মাদানী এসব বলেন।

    সরকার ক্ষমতার নেশায় বিভোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সব কিছু মেনে নিতে রাজি আছি; কিন্তু যে স্বাধীনতা আমরা অগুণতি কুরবানি দিয়ে অর্জন করেছি, সে স্বাধীনতা আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইলে আমরা সহ্য করব না। সরকার ক্ষমতার নেশায় বিভোর হয়ে আছে। কিন্তু মনে রাখবেন, ক্ষমতা চিরকাল থাকে না। রাত যত বড়ই হোক সকাল ঠিকই আসে।

    তিনি বলেন, ‘আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না। ভাববেন না ক্লান্ত হয়ে আমরা একসময় থেমে যাব। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আমরা শত বছর সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। বিজয় ছিনিয়ে এনেছি।’

    তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের ভাড়াটে নয়; আমরা এদেশের অংশীদার। আমাদের আকাবিরদের রক্ত-ত্যাগের বিনিময়েই এদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা সবসময় দেশকে রক্ষা করে এসেছি। আজও করছি। দেশের সংবিধানকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আমরা মাঠে নেমেছি।’

    সিএএ বিরোধী আন্দোলন দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে আন্দোলন অভিহিত করে মাদানী বলেন, ‘দেশের ভেতরে কোন অন্যায়-অবিচার হওয়া মানে দেশের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাওয়া। আর যে দেশের ভিতকে নষ্ট করে সে দেশের শত্রু না বন্ধু আপনারাই বলেন? আজ আমাদের এ আন্দোলন দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে আন্দোলন।’

    এছাড়াও শহীনবাগসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনে অংশ নেয়া মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের প্রশংসা করেছেন মাহমুদ মাদানী। তিনি বলেছেন, ‘পর্দাকে অক্ষুণ্ন রেখে যে রমণীগন আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের প্রতি আমাদের সবধরণের সহযোগিতা রয়েছে। তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনারা আপনাদের বিক্ষোভে অবিচল থাকুন। কেউ আপনাদের কিছু করতে পারবে না।’

    আন্দোলনরত সকলকে তিনটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্যদানের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘ তিনটি জিনিষের প্রতি খেয়াল রাখবেন। ১. কোন ধরণের আশংকা ছাড়াই আন্দোলনকে চাঙ্গা রাখুন। যেখানে যারা আন্দোলন করছেন স্থির প্রত্যয়ে সেখানে অটল থাকুন। মুসলমানদের জন্য এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলছেন, ‘পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই তবে সফলতা।’ ২. সবসময় কুরবানির জন্য প্রস্তুত থাকবেন। ৩. মুখাপেক্ষী থাকবেন আল্লাহর প্রতি। সফলতা আল্লাহ তায়ালা দেবেন। তবে প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে নয়। চেষ্টার ত্রুটি রাখা যাবে না। দুআর সাথে জোরদার প্রচেষ্টা বজায় রাখতে হবে।’

    যোগী আদিত্যনাথের ‘মুসলমানেরা দেশে থেকে গিয়ে কোন এহসান করেনি’ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে মাওলানা মাদানী বলেন, ‘এখানে কথা এহসানের নয়। আমরা চাইলে দেশ বিভক্তির পর চলে যেতে পারতাম। কিন্তু এই দেশে থেকে গিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি অন্যদের চেয়ে এ দেশের প্রতি ভালোবাসা-দেশপ্রেম আমাদের বেশী। কারণ আমাদের থাকা ও যাওয়ার দুটো অপশন ছিল। আমরা থাকাকে বেছে নিয়েছি। তাদের কাছে শুধু থাকার অপশন ছিল। যাওয়ার ছিল না।’

    এছাড়াও তিনি বিক্ষোভকারীদের হুশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ জোশের সাথে হুশকেও বজায় রাখতে হবে। মুসলমান আর যাই হোক যালেম হতে পারে না। যার হুশ নেই তার জোশের কোন অধিকার নেই। পালোয়ান তো সেই যে রাগকে বশে রাখতে পারে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কোন কাজ করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘যালেমের বিরুদ্ধে আমাদের এ আন্দোলন সওয়াবের কাজ।’

    এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, জমিয়তে উলামা হিন্দের সেক্রেটারি মাওলানা হাকিমুদ্দীন কাসেমী, উত্তরপ্রদেশের জমিয়তের প্রধান মাওলান মুহাম্মদ আকীল, রাজনৈতিক উপদেষ্টা ইমরান মাসউদ, মাযাহের রানা, হাজী সেলিম কুরায়শি, মাওলানা জহুল আহমাদ কাসেমী, মাওলানা ইরফান কাসেমী, চৌধুরী মুজাফফর হুসাইন, গাঙ্গুহ জমিয়ত প্রধান মাওলানা আলতাফ রশিদী, মুফতি উমায়ের কাসেমী, সাহারানপুর জমিয়তে উলামর সেক্রেটারি মাওলানা সাইয়্যেদ যাহীন আহমদ প্রমুখ।