|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা: রাস্তা আছে, কিন্তু পিচ? নামগন্ধও নেই। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে পুর এলাকার অধিকাংশ ওয়ার্ডের রাস্তার খুবই বেহাল দশা। সম্প্রতি বর্ষায় রাস্তার ওপর জল জমায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষার জল নামতেই রাস্তার ছয় ইঞ্চি গভীরে থাকা বড় বড় পাথরের টুকরো বেরিয়ে আসছে। হাঁটতে গেলেই হোঁচট খেয়ে কেলেঙ্কারি। কোথাও আবার বর্ষায় পিচ এবং পাথরের স্তর উঠে গিয়ে পাকা রাস্তা মাটির হয়ে গিয়েছে। যেখানে সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে কাদা তৈরি হচ্ছে। জলপাইগুড়ি পুরসভার অর্ধেকের বেশি ওয়ার্ডে আজকাল এমনই হাল। পুরসভার ২, ৩, ১৪, ২০, ২১, ২২ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার সমস্যা সব থেকে বেশি রয়েছে।
অন্যদিকে, টেন্ডার ডেকেও পুর কর্তৃপক্ষের লাভ হচ্ছে না। ঠিকাদারদের কোটি কোটি টাকা বকেয়া থাকায় তাঁরা একজোট হয়ে কেউই টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না। পুরসভার ভাঁড়ার শূন্য থাকায় কর্তপক্ষের শিরেসংক্রান্তি অবস্থা। ভোটের পরে প্রতিশ্রুতিমতো একটি কাজও সঠিকভাবে শুরু করতে না পারায় কাউন্সিলারদের প্রতিনিয়ত এলাকাবাসীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।পুরসভার পূর্ত বিভাগের চেয়ারম্যান পরিষদের সদস্য সন্দীপ মাহাতো বলেন, কাউন্সিলারদের তরফে তাঁদের নিজ নিজ এলাকার রাস্তা তৈরির আবেদন এসেছে। বর্ষার মধ্যে জল জমায় কিছু রাস্তা আরও বেশি খারাপ হয়েছে এটা ঠিক। দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৃষ্টি একটু কমলেই রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু করতে আমরা চেষ্টা করছি।
জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) পুরসভার রাস্তাগুলির মধ্যে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সব থেকে শোচনীয় অবস্থা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই ওয়ার্ডের ৯০ শতাংশ রাস্তাই বেহাল। বিরোধীদের অভিযোগ, ওয়ার্ড দীর্ঘ বছর কংগ্রেসের দখলে থাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের বোর্ডের কাছে বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ওয়ার্ডের নাগরিকরা যার ভুক্তভোগী। ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিয়ে ভোটে জিতে সবার আগে কাজ হবে রাস্তা তৈরি করা বলে বর্তমানে ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু পুরসভার অর্থসংকট পরিস্থিতিতে তা আর হল কোথায়!
পান্ডাপাড়ার ঘোষপাড়ার রাস্তায় ঢুকতেই এক প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হল। সাইকেল ঠেলে বাড়ির পথে যাচ্ছেন। রাস্তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন। রাস্তা থেকে একটা বড় সাইজের পাথর তুলে ধরে ব্যক্তির বক্তব্য, দিনকয়েক আগে এমনই একটি পাথর সাইকেলের চাকায় আটকে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। তারপর থেকে যতবার এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি সাইকেল হাঁটিয়ে নিয়ে যাই। এই রাস্তার এমনই অবস্থা, কোনও টোটো পাড়ার গলিতে আর ঢুকতে চাইছে না। রাস্তাতেই এলাকার বাসিন্দা শিবু ঘোষের সঙ্গে দেখা হল। তিনি বললেন, শেষ কবে এই রাস্তা তৈরি হয়েছিল পাড়ার কেউ বলতে পারবে না। বর্ষার জল জমার পর রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। শুনেছি নতুন কাউন্সিলার রাস্তা সারাইয়ের জন্য তদ্বির করছেন। কিন্তু পুরসভার যদি অর্থসংকট পরিস্থিতি হয় তাহলে কাউন্সিলারই বা কী করবেন।
পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটাখানা, পরেশ কলোনি সহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা খারাপের একই চিত্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই ওয়ার্ডেরও প্রায় ৮০ শতাংশ রাস্তাই খারাপ। এলাকার বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী শুক্লা রায় বলেন, ধরধরা ব্রিজ থেকে শুরু করে ভাটাখানা পর্যন্ত প্রায় পুরো রাস্তাটাই চলাচলের অযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনবাজারে টোটোতে উঠে ভাটাখানার নাম শুনলে রাস্তা খারাপের দোহাই দিয়ে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দাবি করেন চালকরা। পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে একই পরিস্থিতি। ওই ওয়ার্ডের শক্তিনগর এলাকার তিনটি রাস্তাই বেশ কয়েক বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
অন্যদিকে, শহরের প্রধান রাস্তাগুলোর ওপর কিছু জায়গায় মরণফাঁদ তৈরি হয়ে রয়েছে। পানীয় জলের পাইপ সারাইয়ের জন্য মাঝেমধ্যে কিছু জায়গায় রাস্তা খোঁড়া হলেও সেগুলোকে বুজিয়ে পিচ দিয়ে মেরামতি করা হয় না। গাড়ি চলাচলের ফলে ওই জায়গাগুলো থেকে মাটি-পাথর সরে গিয়ে বড় ধরনের গর্ত তৈরি হয়েছে। শহরের হাকিমপাড়া মোড় থেকে শুরু করে শহরে বেশ কিছু রাস্তায় এমনই মরণফাঁদ তৈরি হয়ে রয়েছে।পুরসভা সূত্রে খবর, এই রাস্তাগুলো মেরামতির জন্য পাড়ায় সমাধান প্রকল্পে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি এই ধরনের কাজের টেন্ডার ডাকার পরও কোনও ঠিকাদার অংশ নেননি। এই পরিস্থিতিতে কবে রাস্তা সারাই হবে সেটাই এখন বড় কথা।