শিল্পা আর্ট স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান

মতিয়ার রহমান : শিল্পা আর্ট স্কুল আয়োজিত বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়ে গেল বীরভূম জেলার মুরারই থানার কুমাডোল গ্রামে। বিদায়ী বসন্তের বিকেল। বাংলা বর্ষ শেষের চৈত্রের বাতাসে গরমের আঁচ। তাই একটি শাল সেগুন বাগিচায় বসেছিল এই বার্ষিক অধিবেশন। কথা ছিল দুপুর আড়াইটায় আসর বসবে। কিন্তু এই রোদ গরমে কে আসবেন? মনের মাঝে প্রশ্নটা বার বার উঁকি মারছিল। বাঙালির সময় জ্ঞান! এই সত্যটাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা করে দিয়ে দলে দলে কাতারে কাতারে শিশু পুত্র কন্যা সন্তানের হাত ধরে হুজুরে হাজির মা বাবারা। পৌনে তিনটার সময় অনুষ্ঠান শুরু। প্রথমে অতিথি বরণ। শিল্পা আর্ট স্কুলের পক্ষে শিক্ষিকা সেমিমা ও তাসলিমা সভাপতি প্রধান অতিথি বিশেষ অতিথিদের কপালে চন্দনের ফোঁটা, বুকে ব্যাজ, হাতে একটা কভার ফাইলে কলম, টিফিন প্যাকেট ও জলের বোতল দিয়ে বরণ করে নেন।

    উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়। স্বাগত ভাষণ দেন শিল্পা আর্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিরুদ্ধ ফুলমালী। নৃত্য পরিবেশন করে ক’জন ক্ষুদে নৃত্য শিল্পী। দর্শক সাধারণের হৃদয় মন জয় করে নেয় সায়নী বাচস্পতি নামের একটি ছোট্ট মেয়ে। টিয়াপাখির পালকের রঙে গাঢ় সবুজ হাঁটু অবধি পরনের শাড়ি, গায়ে টিয়া পাখির ঠোঁটের রঙে গাঢ় লাল ব্লাউজ আর কালো চুলের খোঁপায় লাল সবুজের ফুল। অসাধারণ কম্বিনেশন! আহা! মেয়েটি মন প্রাণ উজাড় করে তার নাচ দেখাল। মা তার প্রথম শিক্ষিকা আর নাচের শিক্ষিকা অনামিতা ভান্ডারী বুক ভরে প্রশংসার অক্সিজেন নিয়ে গেলেন। দুশোর অধিক অঙ্কন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের নানা পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে ছিল দামি মেডেল, স্মারক, রৌপ্য পদক ও সোনার জলে ধোয়া নানান পদক ও শংসাপত্র। কথা কবিতা গান ও নাচের মধ্য দিয়ে কখন যে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যার কাছে ডিউটি বদল করে সূর্যদেব পৃথিবীর পথে হাঁটা শুরু করেছে সে খেয়াল ছিল না কারুরই। একদা আমের জন্য বিখ্যাত কুমাডোল গ্রামখানি নিতান্তই পাড়া গাঁ। সেখান প্রতি বছর শিল্পা আর্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিরুদ্ধ ফুলমালীর উদ্যোগে এত বড় সংখ্যক মানুষের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে একটি মনোরম অনুষ্ঠান সত্যি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান মঞ্চে উপস্থিত অতিথিরা। এমন একটা সুন্দর অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও নাট্যকার শ্রদ্ধাভাজন ধ্বজাধারী দত্ত, বহু গ্রন্থের জনক ক্ষেত্র গবেষক দীনবন্ধু দাস, সুগায়ক মনোজ কুমার মাল, শিক্ষক সুখেন বাবু প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন অমিয় কুমার মণ্ডল। “জনগণ মন অধিনায়ক জয় হে —“জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সভার সমাপ্তি ঘটে। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মতিয়ার রহমান।