আমরুল্লাহ সালেহ: তালিবানরা কখনই চাপে ছিল না, বরাবর মদত করে এসেছে পাকিস্তান

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: উত্তর বাঘলান প্রদেশের পঞ্জশিরের প্রবেশপথ আনদারাব উপত্যকা দখলে মরিয়া তালিবান গোষ্ঠী৷ এখানে তালিবানের বিরুদ্ধে আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে উঠেছে৷ সঙ্গে রয়েছেন আফগানিস্তানের বর্তমান স্বঘোষিত কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ৷ সাক্ষাৎকারে তালিবান এবং বিশ্বরাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে অকপট সালেহ!

    প্রশ্ন: আফগান রাষ্ট্রের পতন ও আশরফ গনির আফগানিস্তান ছাড়ার বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

    উত্তর: আমার মনে হয় না এখনই এই সব নিয়ে কথা বলার খুব একটা প্রয়োজন আছে, এই সব নিয়ে কথা বলার সঠিক সময় এখন নয়, পরে এই সব নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

    প্রশ্ন: আফগানিস্তানে তালিবানদের দখল নিয়ে আপনি কাকে দায়ী করবেন এবং কেন করবেন? কাবুল দখলের পরিণতি আপনার দেশ ও বিশ্বে কী প্রভাব ফেলবে? এবার কি আফগানিস্তান সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘরে পরিণত হবে?

    উত্তর: এটা খুবই স্পষ্ট যে তালিবানরা কখনই চাপে ছিল না। ওদের বরাবর মদত করে এসেছে পাকিস্তান। পড়শি দেশে ওদের অবাধ যাতায়েত ছিল। আমেরিকাও পাকিস্তানের সহযোগিতাকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছে বলে আমি মনে করি। পাকিস্তানকে তালিবানরা বরাবর নিজেদের বেস হিসাবে ব্যবহার করে এসেছে। পাকিস্তানের শুধু নির্দিষ্ট কোনও এলাকা নয়, দেশের গোটা ভূখণ্ডের মানুষ কোনও না কোনও ভাবে তালিবানকে মদত জুগিয়েছে। এমনকী, শান্তিচুক্তি ও পাকিস্তানের উন্নয়ন খাতে আমেরিকা যে টাকা পাঠিয়েছে, তা দিয়ে তালিবান সন্ত্রাসবাদকে মদত জুগিয়েছে। পশ্চিমের মিত্র দেশগুলি কখনই আফগানিস্তানের মতো পারমাণবিক রাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের কথা ভাবেনি। এছাড়াও দোহায় হওয়া বৈঠকের পর তালিবানরা বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে যায়। দোহা বৈঠকের উদ্দেশ্যই ছিল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থেকে সব কিছুকে আড়াল করা।

    আরও একটি কারণ হল, গত দুই বছরে আমেরিকার তরফে আমাদের গণতন্ত্রের উপরে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারা আমাদের ব্ল্যাকমেইল করেছিল এবং বলেছিল যে হয় তুমি বন্দীদের মুক্তি দাও, আর সেটা না হলে আমরা তোমাদের সাহায্য করা বন্ধ করে দেব। আমারা বলেছিলাম এটা কি নিশ্চিত যে এই মানুষগুলো বিরোধ তৈরিতে সামনের সারিতে থাকবে না? সেই উত্তরে না এসেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তাদের সামনের সারিতে থাকতে দেখা গিয়েছে। এর মানে এটা বন্দীদের মুক্তি নয়, তালিবানকে উপহার দেওয়া হল কট্টর মৌলবাদী মনোভাবাপন্ন কতগুলি যোদ্ধা।

    চতুর্থ কারণ হল আমাদের সরকারে এমন কিছু লোকজন ছিল যারা পরিস্থিতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছিল না। এই সব ছাড়াও আরও কারণ রয়েছে যে জন্য আফগানিস্তান এমন ট্র্যাজেডির পথে এগিয়ে গিয়েছে।

    বর্তমানে NATO চলে গিয়েছে, মার্কিন সেনা চলে গিয়েছে, কিন্তু আফগান জনগণ এখনও চলে যায়নি। সন্ত্রাসবাদীরা কাবুল-সহ আফগানিস্তান দখল করেছে। আজ একজন অর্থ পাচারকারী যিনি আল-কায়দার মদতপুষ্ট, যিনি তালিবানদের মধ্যে লেনদেনের সুবিধা করে দিচ্ছিলেন, তিনি আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কর গভর্নর হয়েছেন। হাক্কানিরা কাবুল চালাচ্ছে। আর এই হাক্কানি কারা তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। এটি একটি লজ্জা এবং বিশ্বাসঘাতকতা; আমি তার অংশ হতে চাই না। আমি তালিবানদের কখনই মেনে নেব না। আমার শরীরের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করব। আফগানিস্তান আফগানিস্তানই থাকবে কখনই তালিবানিস্তান হবে না।

    প্রশ্ন: এই গোটা পর্বে আমেরিকান মনোভাব এবং আচরণ সম্পর্কে আপনি কী ভাবেন? তাদের হঠাৎ চলে যাওয়া এবং এতগুলি অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছেড়ে যাওয়া নিয়ে আপনার মতামত কী?

    উত্তর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তি। আমি তাদের নিয়ে খারাপ কিছু কামনা করি না। তবে এটা বলব, যে একটা ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এমন পতন ডেকে এনেছে। এই সিদ্ধান্তে আমেরিকান সামরিক বাহিনী বা আমেরিকান গোয়েন্দাদের কোনও সম্পর্ক ছিল না। এটা বোঝা গেল সুপার পাওয়ারও নতি স্বীকার করতে পারে। গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যে তার সমালোচনা করছে। এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত যার খেসারত দেওয়া শুরু হয়েছে।

    প্রশ্ন: বোঝাই যাচ্ছে এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে আমেরিকা তালিবান হুমকিকে ভুল ভাবে নিয়েছে। আপনি আশরফ গনির প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আপনাদের সরকারে কী গাফিলতি ছিল যে তারা বুঝতে পারেনি দেশের মাটিতে কী ষড়যন্ত্র চলছে?

    উত্তর: কোনও একটি সুপার পাওয়ার যদি এদিকে বা ওদিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের মনোভাব বদলাতে পারবো না।আমি জানি, আমি দেশের একটা বড় পদে ছিলাম। তবে আমি ২ বছর আগে থেকে এই বিষয়ে সতর্ক করে এসেছি। আজ তার মাসুল দিতে হচ্ছে। আমি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম যে আমেরিকার কথার কোনও দাম নেই, ওদের প্রতিশ্রুতি মতো কাজ ওরা করতে পারেনি। এটা সম্পূর্ণ একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এতে কোনও ভাবেই আমেরিকান সামরিক বাহিনী বা আমেরিকান গোয়েন্দাদের সিদ্ধান্ত নেই। সম্প্রতি ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক জয় তালিবানকে আরও শক্তিশালী করেছে।

    প্রশ্ন: পঞ্জশির উপত্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন? যেখানে আপনি এবং আহমদ মাসুদ তালিবানদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন? খবর রয়েছে যে তালিবানরা পঞ্জশির উপত্যকায় হামলা চালানোর জন্য শত শত যোদ্ধা পাঠাচ্ছে!

    উত্তর: আমি এখানেই রয়েছি, এখানে মানুষের নিরাপত্তা অনেকাংশে ভালো। যতই তালিবানরা বেশি লোক পাঠাক আমি লড়াই করব। কোনও দিনই ওরা এখানের দখল নিতে পারবে না।