লেখিকা ও সমাজকর্মী রোশেনারা খানের মা সিদ্দিকা খান প্রয়াত

সেখ মহম্মদ ইমরান, মেদিনীপুর: চলে গেলেন মানবিকগুন ও প্রগতিশীল চিন্তাধারাযুক্ত মহিলা সিদ্দিকা খান।শনিবার ভোররাতে গড়বেতার মংলাপোতা গ্রামে নিজ বাসভবনে প্রয়াত হলেন লেখিকা ও সমাজকর্মী রোশেনারা খানের মা সিদ্দিকা খান। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। শনিবার সকালে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ছুটে আসেন পাড়া, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনেররা।

    সিদ্দিকা খান ১৯৩০ সালে কেশপুর ব্লকের অমৃতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছভাই বোনের মধ্যে সিদ্দিকা ছিলেন বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান। শৈশবেই মা হারানো সিদ্দিকাদের লালন-পালন করেছেন তাঁদের বড়দি রোকেয়া বেগম। সিদ্দিকার যখন ছোট তখন তাঁর বাবা খলিলুদ্দিন এর ইচ্ছার তাঁদের পুরো পরিবার মেদিনীপুর শহরে চলে আসে। যদিও সেই অস্থির সময়ে স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া শেখা ‌হয়নি সিদ্দিকার। যদিও সিদ্দিকা বাংলা, হিন্দি, উর্দু তিনটি ভাষাই বলতে ও বুঝতে পারতেন। এসব তিনি তাঁর পিতা ও দাদাদের কাছ থেকে শুনে শুনে শিখেছিলেন।

    সিদ্দিকা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মতিউর রহমানের পুত্র বিপত্নীক হাবিবুর রহমানের সাথে। হাবিবুরের বাবা পুলিশ অফিসার মতিউর রহমানের আদি বাড়ি গড়বেতার মংলাপোতায় হলেও পিতার কর্মসূত্রে হাবিবুরর বাড়ি বানিয়ে মেদিনীপুর শহরে থাকতেন। পিতা পুলিশ অফিসার হলেও হাবিবুরের জীবন চলার পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। যুবক বয়সে হাবিবুর ছিলেন স্বাধীনচেতা সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ।তিনি গানবাজনা,ছবি আঁকা ভালোবাসতেন।   চিল্কীগড়ের ওসি থাকাকালীন পিতা মতিউর রহমান মারা গেলে সৎ মা ও সৎ মায়ের ভাইদের সাথে বিরোধ দেখা দেয় হাবিবুরের। হাবিবুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী সহ মেদিনীপুরের বাড়ি ছেড়ে কলাইকুন্ডাতে গিয়ে “জয়হিন্দ” নামে একটি কাপড়ের দোকান করেন। কিন্তু দেশভাগের সময়কার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল “জয়হিন্দ” দোকানটি। হাবিবুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তানসহ মেদিনীপুরে না ফিরে সোজা তাঁদের আদি বাসস্থান গড়বেতার মংলাপোতা গ্রামে চলে যান। সেখানেই নতুন ভাবে সংসার শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই হাবিবুরের প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেলে হাবিবুর দ্বিতীয়বার বিয়ে করে সিদ্দিকা খানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মা হিসেবে সিদ্দিকা খান সমমনোভাবাপন্ন দৃষ্টিতে যেমন নিজের পাঁচ সন্তানকে মানুষ করেছেন,তেমনি, স্বামীর প্রথমপক্ষের তিন সন্তানকেও মানুষ করেছেন। ছোট বেলা স্কুলে লেখাপড়া না শিখলেও পরে ছেলে, মেয়েদের কাছ থেকে কাজ চালানোর মতো লেখা পড়া শিখে নিয়েছিলেন সিদ্দিকা।

    সিদ্দিকা শেষ বয়সে নিয়মিত খবরের কাগজ পড়তেন, ভালো সেলাইয়ের কাজ জানতেন। তাঁর কন্যা মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা রোশেনার খান বর্তমান সময়ের একজন বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও লেখিকা। মুসলিম মহিল সহ পিছিয়ে পড়া সমস্ত মহিলাদের নিয়ে রোশেনারার লেখালেখি ও লড়াইয়ের কথা সর্বজন বিদিত। রোশেনারা পিতা হাবিবুর অনেকদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন। শনিবার প্রয়াত হলেন মা সিদ্দিকা। অন্যদিকে গত ফেব্রুয়ারিতেই প্রয়াত হয়েছেন রোশোনারার স্বামী সাজাহান খান। মায়ের কথা বলতে গিয়ে রোশেনারা বলেন,”মাকে হারিয়ে বড় একা,একা লাগছে।”