ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে সকলের চোখে হিরো জবেদুল ইসলাম ও তহিদুল ইসলাম

জলপাইগুড়ি: ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে এখন শীর্ষে জলপাইগুড়ির দহমনির দক্ষিণ মৌয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। আর ট্রেনে আটকে থাকা আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে এখন সকলের চোখে হিরো জবেদুল ইসলাম ও তহিদুল ইসলাম।

    বর্তমানে জলপাইগুড়ির ময়নাগুরি দৌমনি এলাকার মৌয়াবাড়ি গ্রামের হিরো ওরাই। যখন বিকট শব্দের সাথে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে তখনই কিন্তু দৌড়ে ছুটে আসেন এই দুই যুবক এরপর তার বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের চিৎকার করে ডেকে আনেন এবং আহতদের উদ্ধারে ঝাপিয়ে পরেন সবাই। খবর দেন প্রশাসনের আধিকারিকদের। ঘটনাস্থল থেকে ৩০ মিটার দূরেই বাস শহিদুল ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলামের।

    গতকাল বিকেল পাঁচটা নাগাদ আচমকাই মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যাত্রীবাহী দূরপাল্লার গৌহাটি বিকানি এক্সপ্রেস। এখনও পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ট্রেন দুর্ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় রয়েছে প্রায় ৪৩ জন। আহতদের চিকিৎসা চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল এবং ময়নাগুড়ি হাসপাতালে।

    এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারত বলেই আশংকা। এমনকি দুর্ঘটনায় আহত যারা রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেরই সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত এমনটাই বলছেন চিকিৎসকেরা। যদিও তা এড়ানো গিয়েছে শুধুমাত্র এই দক্ষিণ মৌমারি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্যে। যদি ঘটনার সময় সেই গ্রাম পাশে ঝাঁপিয়ে না পড়ত, আরও বেদনাদায়ক হয়ে উঠত পরিস্থিতি।

    দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢেকে যায় গোটা এলাকা। তার মধ্যে কুয়াশা, উদ্ধারকার্য চরম সমস্যা তৈরি হয়। এরপর এই দুই যুবক মিলে লাইটের ব্যবস্থা করেন সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে উদ্ধারকার্য চালিয়ে যান গ্রামবাসীরাই। তখনও এসে পৌঁছতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের প্রায় কেউই।

    এদিন বিকেলে আচমকা বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। ধোয়াতে ঢেকে যায়। ভূমিকম্পের মতো কম্পনের সৃষ্টি হয় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। দেখতে পেয়ে ঘটনাস্থলে তড়িঘড়ি ছুটে যান জবেদুলরা। বন্ধুদের নিয়ে এরপরই রেলের কামরার ভেতর থেকে চিৎকার ও মানুষের আর্তনাদ শুনে একে একে সকলকে বের করতে শুরু করেন।

    একে একে উদ্ধার করা হয় প্রায় ২৬ জনকে। ততক্ষণে দেড় ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যায়। তারপর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় প্রশাসনের আধিকারিক এবং অ্যাম্বুল্যান্স ও দমকলের গাড়ি। গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় শুরু হয় উদ্ধার কার্য। ৩০০ জন যাত্রীকে গ্রামবাসীরা উদ্ধার করে। তাঁদের সুরক্ষিত নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।

    গোটা ভূমিকায় গ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এমনকি গ্রামবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়েছে রেল কর্তারাও। মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “যে সময় দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেই সময় কোন আধিকারিক বা কেউই জানতেন না। সেই সময় যদি গ্রামবাসীরা এগিয়ে না আসতেন তাহলে হয়তো এই মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি বাড়তে পারত। আর দুই যুবক যেভাবে লাইটের ব্যবস্থা করে গ্রামবাসীদের ডেকে এনে উদ্ধারকার্য চালিয়েছেন তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমরা রাজ্য সরকারের তরফ থেকে।”

    এদিকে দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হয়েছেন তহিদুল ইসলাম তার হাতের অনেকটা অংশ কেটে যায়। তবুও বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই তার! তিনি বলেন, “অনেক মানুষকে বের করতে পেরেছি, বেঁচে গিয়েছে না হলে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তো। সঠিক সময় হাসপাতালের না আনতে পারলে প্রাণহানির ঘটনা বাড়তো আরও। আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আনন্দিত।”

    জবেদুল ইসলাম বলেন, “আমরা আনন্দিত ও গর্বিত যে আমাদের গ্রামের মানুষ মিলে যেভাবে এতগুলো মানুষকে বাঁচাতে পেরেছি, তার জন্য আমরা খুশি এবং ধন্যবাদ জানাই রাজ্য সরকারকে যেহেতু রাজ্য সরকারের তরফ সে তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়েছে।

    জবেদুল ইসলাম ও তহিদুল ইসলামের মতো এলাকার বেকার যুবকদের এই ভূমিকায় রীতিমত খুশি গোটা গ্রাম। আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রেল মন্ত্রী ও রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলা বলেন, “গ্রামবাসীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, তাঁদের জন্যই অনেক প্রাণ বেঁচে গিয়েছে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেও।”