একই পঞ্চায়েতের তিন বিজেপি সদস্যকে ভাগাভাগি করে দলে নিল তৃণমূল, চাঞ্চল্য জেলায়

মালদা: একজনকে দলে টানলেন কৃষ্ণেন্দু। দুইজনকে সাবিত্রী মিত্র। একই পঞ্চায়েতের তিন বিজেপি সদস্য কে এভাবেই ভাগাভাগি করে দলে নিল তৃণমূল। আর এটা নিয়েই জেলার রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের চক্ষু চড়কগাছ। কদিন আগেই মালদহ সফরে এসে সাবিত্রী কৃষ্ণেন্দু দের দ্বন্দ্ব মেটাতে নির্দেশ দিয়ে যান তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মমতার নির্দেশই যেন সার। সপ্তাহের মধ্যেই সেটাই কার্যত দেখিয়ে দিলেন সাবিত্রী কৃষ্ণেন্দু। ঘটনা মালদহের ইংলিশ বাজার ব্লকের ফুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের। শনিবার এই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য পুতুল মন্ডল কে মালদহ শহরে নিজের কালিতলার দপ্তরে এনে দলীয় পতাকা ধরান রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী। আর তার 24 ঘন্টার মধ্যেই সেই একই গ্রাম পঞ্চায়েতের বাকি দুজন বিজেপি সদস্য কে নিজের সদরঘাটের বাড়িতে ডেকে এনে দলীয় পতাকা ধরালেন মানিকচকের তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র। তৃণমূল শিবিরের অনেকেই মনে করছেন, দল ভাঙানোর খেলায় সাবিত্রী কৃষ্ণেন্দুর রেষারেষিটাও কার্যত দ্বন্দ্বের ইঙ্গিতবাহী। ফুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত মানিকচক বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত। সেই নিরিখে ব্লক সভাপতি সাবিত্রী মিত্র এই এলাকার দলের মুখ্য সংগঠক। সাবিত্রী দেবী এলাকায় দল পরিচালনা করেন। অন্যদিকে ফুলবাড়িইয়া গ্রাম পঞ্চায়েত টি ইংলিশ বাজার ব্লকের অধীনে রয়েছে। তৃণমূলের ইংলিশ বাজার ব্লক কমিটিতে গ্রামীণ সভাপতি রয়েছেন প্রতিভা সিংহ। সেই গ্রামীণ ব্লক সভাপতির অনুপস্থিতিতেই কৃষ্ণেন্দু বাবু পুতুল মন্ডল নামের এক বিজেপি সদস্যকে কেন দলীয় পতাকা ধরালেন তা নিয়ে দলেরই একাংশের প্রশ্ন উঠেছে। এদিন অবশ্য দুই বিজেপি সদস্য কে দলীয় পতাকা ধরানোর মুহূর্তে ব্লক সভাপতি তথা বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রর পাশেই দেখা গিয়েছে প্রতিভা সিংহকে।

    মানিকচক বিধান সভা কেন্দ্রের ফুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ইতি মধ্যেই বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা । ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির প্রকল্প প্রত্যেকটিতেই রয়েছে দুর্নীতি এমনটাই অভিযোগ গ্রাম বাসীদের । আর এই দুর্নীতি থেকে বাঁচতেই তৃণমূলের নাম লেখানোর হিড়িক পড়েছে পঞ্চায়েত সদস্যদের এমনটাই দাবি স্থানীয়দের । যদিও বিজেপি থেকে তৃণমূলের যাওয়ার ঘটনায় স্থানীয়রা বলেন আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ধরনের সদস্যদের উচিত শিক্ষা দিবে গ্রামবাসি ।

    যদিও এই বিষয়ে কৃষ্ণেন্দু বাবুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েই আমি দলত্যাগী সদস্যকে দলীয় পতাকা হাতে তুলে দিয়েছি । আমাদের লক্ষ্য বেশি করে কর্মী আমাদের দলে নিয়ে আসা । তাতে আমাদের দল আরো শক্তিশালী হবে । যদি কেউ এর পাল্টা কিছু করতে যায় সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার । আগামী দিনে এই এলাকা থেকে আরো অনেকে তৃণমূল আসার জন্য আমার কাছে আসছেন । তাদেরকেও দলে নেওয়ার জন্য চিন্তা ভাবনা করছি ।

    তবে সাবিত্রী মিত্র বলেছেন, বিজেপির অনেকেই আমাদের তৃণমূলের ঢোকার জন্য দরখাস্ত দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু আমি মনে করি প্রত্যেককে দলে নেওয়া উচিত নয়। মন থেকে তৃণমূল করতে চাইবেন তাদেরকে দলে নিতে হবে। যাকে তাকে পতাকা ধরিয়ে দিলাম সেটা আমি করতে নারাজ। এভাবেই কৃষ্ণেন্দু কে কটাক্ষ করে সাবিত্রী মিত্র বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক জেলা সফরের পরেও তাদের দ্বন্দ্ব অব্যাহত।

    অন্যদিকে জেলা বিজেপির সভাপতি গোবিন্দ মন্ডল জানান যারা বিজেপি থেকে অন্য দলে গেছে তাদের দল থেকে বরখাস্ত করা হবে । তিনি এও বলেন বিভিন্ন পঞ্চায়েতে দেখা যাচ্ছে বিজেপির বেশ কিছু সদস্য তৃণমূলে যাচ্ছে এরা লোভে পড়ে যাচ্ছে কিংবা এরা দুর্নীতির সাথে যুক্ত । এই ধরনের সদস্যদের এলাকাবাসীরা নির্বাচনে উচিত শিক্ষা দিবে ।