মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান, মুসলিম তার নয়ন মনি হিন্দু তাহার প্রাণ এই কবিতার বাস্তব চিত্র দেখা গেলো বর্ধমানে মেমারিতে

অতনু ঘোষ, নতুন গতি, বর্ধমান : কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতাটির সঙ্গে বর্তমান সামাজিক জীবনের পার্থক্য অনেকটাই। বর্তমানে বিজ্ঞান কে হাতিয়ার করে মানুষ যেখানে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ শিখরে উঠছে সেখানে আজও দেখা যায় ধর্ম নিয়ে হানাহানি। ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় আজও দেখা যায় রাম রহিমের লড়াই। কিন্তু এমন সমাজ তো আমরা চাই না, আমরা এমন সমাজ চাই যেখানে মসজিদের আজান এর সাথে মন্দিরে ঘন্টার ধ্বনি ধ্বনিত হবে, যেখানে হিন্দু ভাইয়ের রক্তে প্রাণ বাঁচবে মুসলমান মায়ের আবার মুসলমান ভাইয়ের রক্তে প্রাণ বাঁচবে হিন্দু বোনের। যেখানে পূজোর প্যান্ডেলে বাজবে বিসমিল্লাহের সানাই।

    এদিন এমনই এক সম্প্রীতির নিদর্শন দেখা গেল পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি 1 নম্বর ব্লকের দুর্গাপুর অঞ্চলের শ্যামনগর গ্রামে। শ্যামনগর গ্রামের শেষ প্রান্তে মাঠের মাঝখানে আছে *চমরআলী* পীর সাহেবের মাজার এবং এর সাথে আছে প্রায় 25 বিঘা জায়গা জুড়ে মুসলিমদের পবিত্র গোড়স্থান। প্রতি বছরই 18 ই ফাল্গুন পীর সাহেবের ঔরস উদযাপিত হয়। এ বছরে তার ব্যতিক্রম নয়। গ্রামের হিন্দু,মুসলিম, আদিবাসী সহ সমস্ত ধর্মের মানুষ পীরের এই ঔরস কাজে যোগদান করেন, এবং পীরের খিচুড়ি সিন্নি রান্নার কাজে এবং পরিবেশনের কাজে হাত লাগান। আশেপাশে এলাকার সমস্ত গ্রামের মানুষ জাতপাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দুপুরে প্রচন্ড রোদ কে উপেক্ষা করে মাঠের মধ্যে মাটিতে বসে খিচুড়ি সিন্নি গ্রহণ করেন।

    শ্যামনগর সহ অন্যান্য গ্রামের মহিলারাও প্রচন্ড রোদের মধ্যে মাটির রাস্তা ধরে পায়ে হেটে মাজারে যান এবং সেখানে গিয়ে ধুপ মোম জ্বালিয়ে পীর সাহেবের কাছে সংসারের মঙ্গল কামনা করেন।

    আগের দিন রাত থেকে শুরু হয়ে যায় রান্নার কাজ। কিন্তু বর্তমানে পানীয় জল ও বিদ্যুতের খুবই প্রয়োজন এখানে। এই সময় বহুদূর থেকে জলের ট্যাঙ্ক করে রান্নার জল আনতে হয়।কিন্তু সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে বছরের-পর-বছর এই চমর আলী পীর সাহেবের ওরস উদযাপিত হয়ে আসছে।শ্যামনগর গ্রামের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে দেখে একটা কথাই মনে পড়ে *সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।