|
---|
মেহবুব আলম, বাসন্তীঃ এডস একটি মারাত্মক মারণ রোগ ক্যান্সারের থেকেও ভয়ঙ্কর এডস রোগ। সেই নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী থানার এক যুবক সোমেন দেবনাথ। ইতিমধ্যেই দেড় লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি পথ এডস সচেতনতা প্রচারে পেরিয়ে এসেছেন। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে পৃথিবীর ১৮০ টি দেশ ইতিমধ্যেই অতিক্রম করে এসেছেন সৌমেন দেবনাথ।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে খবরের কাগজে এইডসের ভয়াবহতা নিয়ে খবর পড়ে জানতে পারেন এই রোগ ক্যান্সারের থেকে ভয়াবহ মারাত্মক আকার ধারণ করবে কিন্তু শহর থেকে বহুদূরে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত বাসন্তীতে তিনি অনুভব করলেন এই রোগ সম্বন্ধে সকলের মধ্যে সচেতনতার অভাব এ বিষয়ে সকলকে সচেতন সজাগ করতে হবে। শপথ নেন এ বিষয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করা ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল সোসাইটি ফর এডস কন্ট্রোল থেকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন তারপর নিজের স্কুলেই এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার শুরু করেন এরপরও বাসন্তীর বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলেন। ২০০৪ সালে পরিবারকে বিদায় জানিয়ে সাইকেল নিয়ে এর সচেতনতা এইচআইভি প্রচারে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন ভারতে দু’বছরের সচেতনতা প্রচার শেষে বহির্বিশ্বে প্রচার এর আগে দিল্লির ইন্ডিয়া গেট এ তৎকালীন বিদেশ মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় তাকে ফ্লাগ অফ করেছিলেন। এরপর তিনি প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন।
কিন্তু কাবুল শহরের অদূরে তালিবানদের হাতে ধরা পড়েন, সেখানে তার উপর অন্ধকার ঘরে বন্দী করে রাখার পাশাপাশি চলে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর তালিবানরা বুঝল এই যুবকের কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই তখন তারা সোমেনকে রান্নার কাজে লাগিয়ে দিলো। তার হাতের রান্না খেয়ে কাবুলি তালিবানরা খুব খুশি হলো, তারপর ২৫ দিনের মাথায় তাকে তালেবানরা মুক্তি দিলো উত্তর মেরুতে যাত্রার সময় ঠান্ডায় জমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
বিদেশ সফর কালে ২৩ টি দেশের প্রেসিডেন্ট ৫১ টি দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি ১০২ টি দেশের ভারতীয় হাইকমিশনার সহ কয়েক লক্ষ জনতার মনকে ছুঁয়ে গেছেন তিনি। কিন্তু এতকিছুর পরেও সোমেন বাংলাদেশী একজনের কথা ভুলতে পারেননি। বিভিন্ন স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও, হোটেল সব জায়গাতেই ওয়ার্কশপ করেছেন সকলকে সচেতন করেছেন এই বিষয়ে, সকলেই মুগ্ধ হয়ে তার বানি শুনেছেন। কারো কোনো সহযোগিতা ছাড়াই আজকেরে দীর্ঘ এতটা পথ তিনি পাড়ি দিয়েছেন কোনো স্পন্সর তিনি পাননি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন আমার সেভাবে কোনো অর্থাভাব ছিল না, না ছিল কোন স্পনসর, কেউ এ বিষয়ে আমার পাশে দাঁড়ায়নি সেইভাবে। তবে সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণ করার একটাই কারণ, পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচা এবং সাইক্লিং করলে শরীর ফিট থাকা যার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া এতে খরচ ও খুব কম, কিছু লোকজনের সাহায্য ছাড়া আমি এই যাত্রা করতে একদমই পারতাম না।
পৃথিবীর এইডস মুক্ত স্বপ্ন ভরা দুই চোখ তার ইচ্ছা। ২০২০ সালের মধ্যে ১৯১ টি দেশ অতিক্রম করে ২ লক্ষ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া সেই সেই স্বপ্ন ভরা দুই চোখ নিয়ে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সোমেন দেবনাথ ছুটে চলেছেন বিশ্বের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে ফেলেছেন এশিয়া মহাদেশ, ইউরোপ, আফ্রিকা, দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকা, কানাডা, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ফিলিপিন্স, নিউজিল্যান্ড সহ বেশ কিছু দেশ সচেতনতা প্রচার করে এসেছেন। মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ ও মায়ানমার হয়ে ভারতে প্রবেশ করার ইচ্ছা সোমেন দেবনাথের।