|
---|
লুপ্তপ্রায় মনীষীর সন্ধান
আলোচক:মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ
বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর সমাজে মুসলিম মনীষীদের অবস্থান গগণশুণ্য প্রায়।তাঁরা ক্রমশঃ মুসলিম যুবসমাজ থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মুসলিম যুবক-যুবতি দের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে না মুসলিম মনীষীরা ,তাঁরা কোথাও হাড়িয়ে যাচ্ছে সাম্প্রদিকতার বেড়াজালে।মুসলিম যুবক -যুবতি’রা মুসলিম বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, অনুবাদক, খেলোয়াড়, মহাদ্দেশ প্রভৃতিজনের সম্পর্কে জানবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
আল্লামা আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলীর সংক্ষিপ্ত জীবনে উঁকি মেরে পূর্বপুরুষদের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানা যাবে।বিশিস্ট কোরআনের ইংরেজি অনুবাদক আল্লামা আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলীর মর্মান্তিক শেষ জীবনের কথা জানা যায় “তাসকিন কি তালাশ” গ্রন্থে। এই মহান মুসলিম মনীষী ১৪ এপ্রিল ১৮৭২ সালে বোম্বাই-এর ডাউউদী বহরা শিয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর বাবা ইউসুফ আলী আল্লাহবক্স পরে সুন্নি হয়ে যান ।তিনি তাঁর ছেলেকে কোরআনের হাফেজ বানিয়ে ছিলেন।আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী ইংরেজীতে স্নাতক এবং এল এল বি ডিগ্রি অর্জন করেন ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট লোরেন্স কলেজ থেকে। তিনি আরবি এবং ইংরেজি তে কথা বলতে পারদর্শী ছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস এ যুক্ত ছিলেন।আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও তিনি ইসলামি আকিদা ভুলেননি, তিনি সর্বদাই কোরআন তেলাওয়াত করতেন এবং হাদিসের তাফসীর পড়তেন।তারই ফলস্বরূপ তিঁনি তাঁর অগাধ ইসলামিক জ্ঞান কোরআনের অনুবাদের কাজে লাগান এবং কোরআনের ইংরেজী অনুবাদ বের করেন নিজ অর্থব্যয়ে।পরবর্তীতে আমেরিকার”পানামা করপোরেশন” এবং সউদী বাদশা প্রকাশ করে এবং বিতরণ করে সারা বিশ্বের দরবারে।খুব অল্প সময়ে তিনি ইংরেজি ভাষাভাষী পাঠক মহলে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।তিনি খুবই দয়ালু স্বভাবের মানুষ ছিলেন।তাই তার তাফসীরের কোন অংশই নিজের স্বত্তাঅধিকারে রাখেননি ,যে কেউ তা প্রকাশ করতে পারতো।
আল্লামা ইউসুফ আলী যাঁর লেখা সারা বিশ্বের ইংরেজি ভাষাভাষী পাঠকের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, তাঁরই বার্ধক্য জীবন কেটেছে খুবই দারিদ্রে,দুঃখে, হতাশায়, যন্ত্রনায়। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর আত্মজীবনী “তাসকিন কি তালাশে” (searching for peace) গ্রন্থে উল্লেখ আছে যা মালয়েশিয়া থেকে প্রকাশিত হয়েছে।তাঁর সহজ বোধগম্য ইংরেজিতে কোরআনের অনুবাদ ইংরেজি ভাষায় তাঁর অগাধ জ্ঞানের সাক্ষী স্বরূপ। তিনি টীকা সহ কোরআন শরীফ এর অনুবাদ করেন।যা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক হিসেবে খ্যাতি দিয়েছে।শেষ জীবনে এই মহান অনুবাদক নিঃস্ব হয়ে যান।শরীর ভেঙ্গে পড়ে ইংল্যান্ডের শীতে।westministarer gate থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে পুলিশ তাঁকে ওয়েস্টমিনিস্টার হসপিটালে ভর্তি করান,পরে বৃদ্ধাশ্রম এ স্থান পান। ১৯৫৩ সালের ১০ই ডিসেম্বর ইনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে সেন্ট স্টিফেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।প্রায় তিন ঘন্টা মৃত্যুর সাথে লড়াই করে হেরে যান।(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নিনা এলাইহে রাজিউন)।
এই মহান অনুবাদকের যিনি কোরআনের অনুবাদের বোঝা সারা বিশ্বের জন্য নিয়েছিলেন তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করতে কোন স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও কোন মুসলিম ভাই এগিয়ে আসেনি। ইতস্তত হয়ে পাকিস্তান হাই কমিশনারের পক্ষ থেকে তাঁকে ব্রোকওয়ার্ড কবরস্তান -এর মুসলিম বিভাগে কবরস্থ করা হয়।
আল্লামা আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলির মৃত্যুর এই হৃদয়বিদারক ঘটনা কি মুসলিম সমাজের যুবক-যুবতি দের নাড়া দেয় না? এই মহান মুসলিম মনীষীর কোন সম্মান দিতে পারেনি তাঁর জন্মস্থান ও মুসলিম সমাজ ।তাঁর দারিদ্র্য জীবনের অধবা মৃত্যুপরবর্তী জীবনের পাশে মুসলিম সমাজ দাঁড়াতে পারেনি। এটাই লজ্জার!!!!!