এলার্মিং জোনেও বিধায়ক অরিন্দমের হাত ধরে শান্তিপুরে এগিয়ে যাবেন মমতা- অনুব্রতের তৃণমুল

শরিফুল ইসলাম, নতুন গতি, শান্তিপুর:কেউ পরের ট্রেনে চেপে এগিয়ে গেছেন। কেউ আগের ট্রেনে এসেও পিছিয়ে পড়েছেন! গতির গতে আগুপিছু হলেও এখন মত ও পথ একই। প্রথম জন অরিন্দম ভট্টাচার্য বিধায়ক, শান্তিপুর। দ্বিতীয় জন অজয় দে, চেয়ারম্যান পৌরসভা।

    চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার, ছাতিমতলার মাঠে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বুথওয়ারী সম্মেলনে একজন ট্যালেন্ট দিয়ে বক্তব্য রাখলেন। তো অন্যজন চল্লিশের অভিজ্ঞতা নিয়ে অনুব্রতর সঙ্গে কথা বললেন।

    শান্তিপুরে শাসক দলের অন্দরে এই ভাবেই চলছে ট্যালেন্ট বনাম অভিজ্ঞতার লড়াই। আর এই লড়াইয়ে মাঝে আপাতত রেফারির ভূমিকায় পাঁচনখ্যাত অনুব্রত মন্ডল।

    শান্তিপুর কে শাসক দলের পক্ষে ধরে রেখে রানাঘাট লোক সভা আসনটি ‘সিওর’ করাই পাখির চোখ তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা তথা রাজ্য নেতৃত্বের। কারণ সব জায়গায় মিটলেও শান্তিপুরের লড়াই যতটা না বিরোধীদের সঙ্গে তার চেয়েও সমস্যা এখানে অন্দরেই।

     

    নির্বাচন নির্ঘন্ট ঘোষণা শুধুমাত্র কয়েক মুহূর্তের অপেক্ষা।
    বিগত পঞ্চায়েত ফলাফলে কার্যত বীতশ্রদ্ধ তৃনমুল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার দুটি লোকসভা আসন ধরে রাখতে রিস্ক ফ্যাক্টর রিপিয়ারে আগে ভাগেই একান্ত আস্থাভাজন অনুব্রত মন্ডলকে নদীয়া জেলায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। কর্তব্যবোধে অবিচল অনুব্রতবাবু প্রথম থেকেই নরমে-গরমে ক্ষত স্থান মেরামতির কাজ শুরুও করে দিয়েছেন ।

    কৃষ্ণনগর লোকসভা থেকে শুরু করে এখন দোয়া ও দাওয়া চলছে রানাঘাট লোকসভায়।
    সাতটি বিধান সভার সর্বত্রই ছোট খাট ক্ষত সারিয়ে দেওয়া, দেখে মনে হলো, অনুব্রতর কাছে খুব বেশি ঝকমারী কিছু নয়। তবে ঝক্কি টা দিতে পারে বোধহয় শান্তিপুরই।

    বৃহস্পতিবার, রানাঘাটের সম্মেলনে এসে, আশা করা যায় দক্ষ সংগঠক অনুব্রত মন্ডলের বোঝা সারা এখানে পাঁচন নয়, কি চালাতে হবে। অন্যান্য বিধানসভার চেয়েও চোখের দৃষ্টিটা একটু বেশিই পড়বে অনুব্রতর শান্তিপুরে বলাই বাহুল্য।

    তাই, দলের জেলা সভাপতির হাতে নগরোন্নয়ের মুখ থাকলেও দক্ষ সংগঠক বর্ষীয়ান বিধায়ক তথা রানাঘাটের বিশেষ পর্যবেক্ষক শংকর সিংহ’র শান্তিপুর প্রসঙ্গে ‘এলারমিং পজিশন’ মন্তব্যে ভ্রু কুঁচকে ওঠে জেলা পর্যবেক্ষক অনুব্রত মন্ডলের।

    নগরে যখন এত উন্নয়ন নগর পালের নেতৃত্বে, সেখানে ওয়ার্ডে দলের খারাপি কিভাবে মেনে নেওয়া যায়! আর তাইতো বিচক্ষণ অনুব্রত দলীয় সভাপতি নয়, প্রশ্ন টি নগরপাল তথা সরাসরি করে বসেন চেয়ারম্যান অজয় দে কেই।
    চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পৌরোপতি অজয় দে কৌশলে সকলের সামনে ছোট ছোট সমস্যার দোহাই দিয়ে পাড়ে উঠে পড়েন।

    দলীয় রাজনৈতিক মঞ্চে সম্মেলন। আত্মসমালোচনা করে ভুল ভ্রান্তি সমাধান করতেই তো কর্মী-নেতৃত্বের এককাট্টা হওয়ায়। কেন বললেন, এখানে আলোচনা সমীচীন নয় ! গোটা সম্মেলন কক্ষে কর্মীদের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে করতে শোনা গেল , তবে কি দলের কর্মী দেরও বিশ্বাস করেন না অজয় বাবু ? কিছু নিন্দুক কে তো বলতে শোনা যায়, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে তিনি নাকি দলের পক্ষে খুব বেশি সক্রিয়তা দেখান নি। সেখানে ছয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে অরিন্দম ভট্টাচার্য অজয় বাবুকে ফিউজ করে দিয়েছিলেন।যদি এই সভায় অজয় বাবু মুখ খুলতেন তবে তাকেই সমালোচনার মুখে পড়তে হত।

    বেরিয়ে আসত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষে তাঁর নেতিবাচক ভূমিকা। এবং বিধানসভা ভবনে দিদিমনির রুদ্ধদ্বার বৈঠকের অজয় বাবু সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য রাখার স্মৃতি। তাই কৌশলে অজয় বাবু এড়িয়ে গেলেন। হাজার হোক, অভিজ্ঞতার একটা মূল্য আছে। তিনি জানতেন , সেই মুহূর্তে যদি সব কথা আলোচনায় আসতো তবে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিত।

    তাই বসন্তের হালকা শীতের আমেজে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হোক চান নি দূরদর্শী ছয় বারের শান্তিপুরের চেয়ারম্যান অজয় দে।
    অনুব্রত বাবুও বুঝে গেছেন পুরাতন কাসুন্দি এখন ঘাটাঘাটি করলে আগামী নির্বাচনে গিঁটে খোলা দায়।
    তৃণমূলের একনিষ্ঠ খাঁটি তৃণমূল এবং নিশ্চিত সুদক্ষ রাজনীতিবিদ অনুব্রত মন্ডল ভেবেই রেখেছেন হয়তো, গ্রামে বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে শান্তিপুরে অরিন্দমের ছায়াই অজয় কে লড়িয়ে দিলেই কেল্লাফতে। নয়তো , পঞ্চায়েতের মতন ভূমিকা যদি শহরে নেন অজয় বাবু তবে তা দলের পক্ষে খুব একটা সুখের হবে না ।

    তাই, সেদিন সম্মেলনে সরাসরি আলোচনা না করার দাবি অনুব্রত মেনে নিলেন হয়তো, তবে কথা মতো পরবর্তী শান্তিপুর নিয়ে আলোচনায় অজয়কে অনুব্রতর মুখোমুখি হতেই হবে। এবং সেখানে দুধে জল জলের দুধ মেপে নিয়েই আগামী দিনে শান্তিপুরের সংগঠন চালাবেন অনুব্রত বাবু নিশ্চিত।

    কারণ, অনুব্রত মন্ডল কেবল বিরোধীদের মুখের বুলিতেই নয়, রীতিমতন রাজনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েই কোণঠাসা করেছেন, যোগ্যতা দেখিয়েই দিদিমনির আস্থাভাজন। তাঁর শরীরে অক্সিজেন কম ঢুকতে পারে কিন্তু দলের ভিতরে দুষিত কার্বন-ডাই -অক্সাইড শুষে নিয়ে দলকে অক্সিজেন জোগাতে তিনি দক্ষ!

    তাই তরুণ তুর্কি উচ্চ শিক্ষিত দলের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যকে এদিন, বিশেষ পর্যবেক্ষক যায় বলুন না কেন, অনুব্রতর হাতের পাঁচনটা ছিল অন্যদিকেই মনে করছেন বুথ সম্মেলন ফেরত তৃণমূলের সচেতন কর্মীরা।

    মাঠেও নেই সিপিএম, ঘাটেও নেই বিজেপি, কংগ্রেস আবেগেই, তৃণমূল নেতৃত্ব একসঙ্গে শহরে নির্বাচন ঠিক মতন সামলে দিলেই শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের হাত ধরে আগামী লোকসভায় নির্বাচনে কৃষ্ণনগরের সঙ্গে সঙ্গে এখানেও অনুব্রত একশই একশো মার্ক্স পাবেন দিদিমনির কাছে, মনে করছেন শান্তিপুরের রাজনৈতিক মহল।