এবার নাসিরুদ্দিনের পাশে দাঁড়ালেন আশুতোষ রানা এবং রাজা মুরাদ

শরীফুল ইসলাম, নতুন গতি

    প্রতিবেশী পাকিস্তান প্রধান ইমরান খানের মন্তব্য উস্কে দিয়েছিল সহিষ্ণুতা সম্পর্কে অভিনেতা নাসিরউদ্দিন সাহেবের একটি বক্তব্যের বিতর্ক। এরপর ভারতে এই বর্ষীয়ান অভিনেতার বিরোধিতায় তাঁরই সহকর্মী থেকে শুরু করে কট্টর ধর্মান্ধ গেরুয়া শিবির তেড়েফুঁড়ে লেগেছিল। এবার, শাহের পাশে বলিউডের তারকারা একে একে দাঁড়াতে শুরু করে দিলো।

    ব্রিটিশ অনুসৃত বিভাজন নীতি ও তৎকালীন দেশীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মিলেমিশে ১৯৪৭- এ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ঘোষণার আগের দিন ১৪-ই আগষ্ট ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক দেশটি আত্মপ্রকাশের পর থেকে আজ ইস্তক ভারতের সঙ্গে সখ্যতার পরিবর্তে বৈরীতার সেই ট্র্যাডিশন চলছে সমান তালে।

    নীতিগতভাবে যে কোনো রাষ্ট্রের কর্তব্য প্রতিবেশী স্বাধীন দেশের সংবেদনশীল অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিতভাবে মন্তব্যে বিরত থাকা। এই প্রত্যাশা আরো বেড়ে যায় বিশেষ কোনো সর্বজন শ্রদ্ধেয় পরিচিত ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি ঘিরে।
    ইমরান খান পাকিস্তান রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আসীন হবার পর তাঁর সমকালীন ভারতীয় ক্রীড়াবিদ, ক্রিকেট অনুরাগী মায় সাধারণ মানুষ প্রত্যেকের মধ্যেই একটা তৃপ্ত ভাব এসেছিল। তাঁরা মনে করেছিলেন এবার ‘ভারত-পাকিস্তান’ এর শত্রুতা সুলভ চিরন্তন মনোভাবের
    আবহ হয়তো কাটবে। পারস্পরিক সম্পর্কে বিশ্বাস আসবে। সব প্রত্যাশাই জল ঢেলে পাক প্রধানের ইমরান খানের মন্তব্য ঘিরে এখন দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক-উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে।
    ঘটনার সূত্রপাত, প্রখ্যাত কলাকার নাসিরউদ্দিন শাহের একটি ‘টুইট ‘ ঘিরে । ‘গোরক্ষক বাহিনীর তান্ডবে সম্প্রতি বুলন্দ শহরে গো প্রেমীদের হাতে সেখান কার একজন পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসির শাহ দেশে যে নিরন্তন অসহিষ্ণুতার উদাহরণ ঘটে চলেছে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ ভারতে এখন একজন পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর চেয়ে একটি গোরু’ র মৃত্যু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে কেউ যদি ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞাসা করে তাদের ধর্ম কি , কি উত্তর দেবে তারা। কারণ তিনি মুসলিম , তাঁর স্ত্রী হিন্দু। সেই অর্থে তিনি তো তাঁদের সন্তান দের বিশেষ ধর্মীয় শিক্ষা দিতে পারেন নি।’
    পাক পঞ্জাবের এক সভায় ‘নাসিরশাহের’ বক্তব্য’ হাতিয়ার করে পাক রাষ্ট্রপ্রধান ইমরান খান মন্তব্য করেন , ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কে তিনি শিখিয়ে দেবেন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করা উচিত।
    শুরু হয়ে যায় উক্তি -পাল্টা বিবৃতি ঘিরে বিতর্ক। বিতর্কের জেরে নাসির সাহেবের আজমের- এ একটি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়া হয় উদ্যোক্তা দের পক্ষ থেকে। নাসিরউদ্দিন শাহের পাশে রিতা চাড্ডির পর এগিয়ে এসেছেন বলিউডের প্রভাবশালী অভিনেতা সন্তোষ রানা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিচালক মধুর ভান্ডারকর, রাজনীতিক ওয়াইসি।


    তাঁরা প্রত্যেকেই দ্বার্থহীন ভাষায় বলেন , নাসিরুদ্দিন যা বলেছেন তা বলার অধিকার তাঁর সাংবিধানিক অধিকার। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আগামী প্রজন্মের স্বার্থে উদ্বিগ্ন নাসির তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেছেন মাত্র। তাই বলে তাঁকে দেশদ্রোহির তকমা দেওয়া ভিত্তিহীন। এবার নাসিররুদ্দিনের পাশে দাঁড়ালেন বলিউডের আর এক বর্ষীয়ান অভিনেতা রাজা মুরাদ।
    প্রথম থেকেই ‘নাসির বিতর্কে’ তাঁর পাশে পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী মহল। পশ্চিমবঙ্গ বুদ্ধিজীবী মহলের মত , বর্তমানে দেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যার মতন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা গুলির মোকাবিলার ব্যার্থতা ঢাকতে কেন্দ্রের শাসকদল সাধারণ মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার স্বার্থে এই সব বিতর্ক নিয়ে দেশবাসীকে বিব্রত রেখেছে।
    তাঁর মন্তব্য ঘিরে এত বিতর্কের পরেও বর্ষীয়ান অভিনেতা এই পরিস্থিতিতে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। তিনি বলেন , “যে দেশে আমি বসবাস করছি সেটা আমার ঘর, ভালোবাসার বিষয়। সেই পবিত্র স্থানের ভালো-মন্দ সম্পর্কে চিন্তা করার , বক্তব্য রাখার অধিকার আমার আছে।ভুল করলে সমালোচিত যেমন হতে পারি তেমন দেশের ইতিবাচক স্বার্থে সমালোচনা করাটাও আমার অধিকার।”
    তবে , তাঁকে কেন্দ্র করে ইমরান খানের মন্তব্যে তিনি মোটেই উচ্ছসিত নন, বরং প্রতিবেশী দেশের ওই রাষ্ট্রপ্রধান কে খানিকটা উপদেশের সুরেই তিনি বলেন, ” ইমরান তাঁর নিজের দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবুক। তাঁদের সমস্যার সমাধানের দিশা নির্ধারণ করুক।আমরা জানি কিভাবে আমাদের সমস্যা মেটাতে হয়।”
    সত্তরোদ্ধ ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি তিনি গভীর আস্থা ও শ্রদ্ধাশীল বুঝিয়ে দেন রিল ‘সারফরশের’ ভিলেন, ‘মাসুম’-পিতা রিয়েল লাইফের নাসিরউদ্দিন শাহ।