লকডাউন আবহে ভিনরাজ‍্যে মৃত‍‍্যু চাঁচলের শ্রমিকের, শেষ দেখা হলোনা পরিবারের, একজোড়া শিশু সন্তান নিয়ে দিশেহারা আয়েশা

উজির আলী,নতুনগতি চাঁচল:০৬ ই মে

    লকডাউনে আটকে পড়া ভিনরাজ‍্যে আবারও পরযায়ী শ্রমিকের মৃত‍্যু হল মালদহের চাঁচলে।
    লকডাউনের পর চাঁচল ১ নং ব্লকের ভগবানপুর জিপির দক্ষিন কালিগঞ্জ গ্রামের দুইজন পরযায়ী শ্রমিকের মৃত‍্যু ঘটল বলে বাসিন্দারা জানায়।
    দ্বিতীয় দফার লকডাউনে ওই গ্রামেরই এক পরযায়ী শ্রমিক হৃদ আক্রান্ত হয়ে মৃত‍্যু হয় মুম্বাইয়ের বান্দ্রাতে।

    তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের তৃতীয় দফার লকডাউনে এবার কর্ণাটকের ম‍্যাঙ্গালোরে হৃদ আক্রান্ত হয়ে প্রানছাড়া হল দক্ষিন কালিগঞ্জের তারিক হোসেন(৪৫)
    জানা যায় মঙ্গলবার হঠাৎই হৃদ আক্রান্ত হলে সহকর্মীরা স্থানীয় NECTAC হাসপাতালের উদ্দেশ্য নিয়ে যেতে যেতে পথে মৃত‍্যু হয়েছে বলে পরিবার জানিয়েছে।
    মঙ্গলবার ইফতারের পর গ্রামে মৃত‍্যু সংবাদ আসতেই গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

    স্থানীয়রা জানায়, সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরাতে পাঁচ মাসে আগে পাড়ি দিয়েছিলেন কর্ণাটকের ম‍্যাঙ্গালোরে। নির্মান কর্মীর কাজে নিযুক্ত ছিল তারিক। তারপরেই করোনা সংক্রমন রুখতে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে শুরু হল দেশজুড়ে লকডাউন। ভিনরাজ‍্যে আটকে পড়ল মালদা জেলার হাজার হাজার পরযায়ী শ্রমিক। আটকে ছিল তারিক হোসেনও।

    স্ত্রী আয়েশা বিবি(৩৫) কান্নার রোলে বলেন স্বামী দিনে চারবার পাঁচবার ফোন করত। ট্রেন চালু হলেই বাড়ি যাব। গড়িয়ে আসছে ঈদ উৎসব। তাই আরোও বেশী দুশ্চিন্তায় ছিল বলে জানান আয়েশা।
    আগে কোনো রোগব‍্যাধী ছিলনা তারিকের বলে জানান তার স্ত্রী।
    লকডাউনে বাড়ি ফিরতে না পেরে সংসারের মায়ায় দুশ্চিন্তায় হৃদ আক্রান্ত কি? প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এখন চাঁচলে।

    গ্রামের বাড়ীতে রয়েছে নাবালক দুই শিশু সন্তান আলিক চাঁদ(০৮) ও আরহান আলী। আরহান সদ‍্য হাটতে শুরু করেছে।
    বাবার যে মৃত‍্যু হয়েছে,সে কিছুই জানেনা! মায়ের কান্না মুখে তাকিয়ে দুই সন্তান।
    প্রশ্ন তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে? সবে মাত্র সংসার শুরু হয়েছিল আয়েশার।

    স্থানীয় বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন জানান,
    তারিকরা পাঁচভাই। চারজন ভিনরাজ‍্যে,কেউ দিল্লি,মুম্বাইয়ে নির্মানকর্মীর কাজে যুক্ত।
    বাড়িতে রয়েছে একভাই, তবে সবাই পৃথক পৃথক ভাবেই চলে। ভিটেমাটি ছাড়া চাষের জমিও নেই তাদের। তাইতো সবভাইয়ে ভিনরাজ‍্যে।

    পিতা রব্বুল হোসেন(৭০)ছেলের মৃত‍্যু সংবাদ পেয়ে এখন কাতর। যেখানে আসন নেই সেখানেই গড়িয়ে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। রোজামুখে তিনি এখন ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে ছেলে যেন ভালো থাকে। তবে তিনি বার্ধক‍্য ভাতা পাননা বলে সংবাদ মাধ‍্যমকে এদিন জানিয়েছে।
    রোজা তো বটেই, শোকের ছায়ায় আজ উনুন জ্বলেনি মৃতের বাড়ী সহ প্রতিবেশীদের বাড়িতে।

    ম‍্যাঙ্গালোর থেকে ২৬০০ কিমি মালদার চাঁচলে দেহ ফিরাতে ব‍্যর্থ পরিবার।
    চলছে তৃতীয় দফার লকডাউন, দেহ আনতে অনেক টাকার ব‍্যাপার। তাই গ্রাম‍্য ও পরিবারের মতে ম‍্যাঙ্গালোরেই বুধবার সমাধি সম্পন্ন হয়েছে।
    বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে পেলেন দুই শিশু সন্তান আলিক ও আরহান। স্ত্রী আয়েশার কান্নার রোল এখন দফায় দফায়। প্রতিবেশীরা একে একে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন বাড়ীতে। বৃদ্ধ বাবার অশ্রূতে এখন ভিজেছে দাঁড়ি। শেষ দেখা হলোনা ছেলের।

    শ্রমিকের মৃত‍্যুতে শোকাহত হয়েছেন চাঁচলের মহকুমা শাসক সব‍্যসাচী রায়। তিনি জানান ওই পরিবারটি সরকারি কোনো সাহায্য যেন পায়, তা প্রশাসনের তরফে দেখা হচ্ছে।