কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক ব্যানার্জীর জয় প্রতিহত করতে বিজেপির ধর্মীয় বিভাজনের তাস

জাকির হোসেন সেখ, ১৪ মে, নতুন গতি, ডায়মন্ড হারবার: ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে গতবারের মত এবারও তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৪ সালের ষষ্ঠদশ লোকসভা নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হয়েছিলেন মাত্র ৭১ হাজার ২৯৪ ভোটে। এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু এবারে তাঁর জয়ের ব্যবধান আরো কমিয়ে দিতে সর্বশক্তি দিয়ে ধর্মীয় বিভাজনের তাস খেলায় নেমেছে বিজেপি।
ক’দিন বাদে ১৯শে মে রবিবার শেষ দফার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মোট ৯টা কেন্দ্রের মধ্যে এই ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রেও ভোট নেওয়া হবে।

    ৩১ বছর বয়সী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে। কিছুদিন ধরে একটা ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন নিজের ভাইপোকেই তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে তৈরি করছেন। অভিষেক এখন সারা ভারত যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতিও।
    ২০১৪ সালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএম প্রার্থী ডাঃ আবুল হাসনাতকে ৭১ হাজার ২৯৪ ভোটে পরাস্ত করেছিলেন। অভিষেক ব্যানার্জি পেয়েছিলেন ৫ লাখ ৮ হাজার ৪৮১ টা ভোট। আর আবুল হাসনাত পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৯ টি ভোট।
    ২০১৯ সালের এই সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী এবার ডাঃ ফুয়াদ হালিম, বিজেপির নিলাঞ্জন রায় এবং কংগ্রেসের সৌম্য আইচ রায়। গতবারের মতো এবারও এখানে অভিষেকের সঙ্গে “কাঁটে কি টক্কর” অর্থাৎ তীব্র লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সিপিএমের প্রার্থী ডাঃ ফুয়াদ হালিমের বলেই এলাকা বাসীর মত। ডায়মন্ড হারবার পৌরসভা এলাকায় অবশ্য তৃনমূল বাদে সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি প্রার্থীরাও জোর প্রচার চালাচ্ছেন।

    জয়ের ব্যাপারে একশো শতাংশ আত্মবিশ্বাসী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্তি দিচ্ছেন, “এই রাজ্যে মমতার বিকল্প নেই। উন্নয়নের অপর নামই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে কারণেই বিরোধী কোনো প্রার্থী তাঁর ধারেকাছেও থাকতে পারছেন না।”
    অভিষেক ব্যানার্জীর এই যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই মুখ খুলতে না চাইলেও হাবেভাবে বুঝিয়েছেন যে, অতটা নিশ্চিত হওয়ায় সন্দেহ আছে। কারণ উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে বিরোধী দলকে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে যেভাবে সর্বশক্তিতে বাধা প্রদান করেছে তৃনমূল, তাতে নিরপেক্ষ অনেক মানুষকেই তৃনমূলের প্রতি বিরূপ করে তুলেছে। আর সেই সুযোগেই বিজেপি তার সাম্প্রদায়িক দাঁত নখ বিস্তার ঘটানোর সুযোগ পেয়েছে। তলে তলে তাই নাকি চোরা স্রোত বইছে একটা।

    অভিষেক ব্যানার্জীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের ফুয়াদ হালিম পেশায় চিকিৎসক। তাঁর পিতা হাসিম আবদুল হালিম ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার টানা ২৯ বছরের স্পিকার। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফুয়াদ হালিম কলকাতার বালিগঞ্জ আসনে লড়ে হেরে যান। প্রখ্যাত অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহ এবার ফুয়াদ হালিমের জয় প্রার্থনা করেছেন।

    বিজেপির প্রার্থী নীলাঞ্জন রায়। আগে ছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কংগ্রেসের সভাপতি। বাড়ি বালুরঘাটে। বিজেপিতে যোগ দেয়ার পরেই দল তাঁকে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে টিকিট দিয়েছে। তবে মুস্কিল হল তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি গত ২৬ এপ্রিল ১৭ বছরের এক কিশোরীকে যৌন হেনস্তা করেছেন। সুত্র মারফত জানা গেছে, ফলতা থানায় অভিযোগ দায়েরের পর তাঁর বিরুদ্ধে এখন গ্রেফতারের আদেশ ঝুলে রয়েছে। এমনকি এখনও পর্যন্ত নীলাঞ্জন রায়কে পুলিশ গ্রেপ্তার না করায় সোচ্চার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিশু অধিকার রক্ষা কমিটি। যদিও এই ঘটনাকে মিথ্যা এবং তৃণমূলের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার।

    ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন দলের নেতা সৌম্য আইচ রায়। তিনিও জোর প্রচার চালাচ্ছেন। গত ৯ মে ২৯ টি গাড়ি নিয়ে বিশাল এক রোড শো ও করেছেন তিনি।
    অত‌এব কার ঝুলিতে কত ভোট পড়বে জানা যাবে ২৩শে মে।