প্রসঙ্গ: কলকাতা বইমেলা ২০১৯

 

     

    প্রসঙ্গ: কলকাতা বইমেলা ২০১৯
    তানবির কাজি

    বাঙালি ও বাংলা সম্পর্কে বলতে গেলে বাঙালি সংস্কৃতির কথা চলে আসে। অবশ্য সেটা স্বাভাবিক। কারণ কোনো জাতিকে বুঝতে গেলে বা কোনো জাতির ভাষাকে বুঝতে গেলে সেই জাতির সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত হতে হয়। বাঙালি ও বাংলা নিয়ে আলোচনার অন্যতম বিষয় কলকাতা বইমেলা। অস্বীকার কখনই করতে পারবো না সে সত্য। অবশ্য বাংলাদেশ মানেও বাঙালি সংস্কৃতি। কিন্তু পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ -এর সংস্কৃতির মধ্যে একটু হলেও পার্থক্য আছে। যদিও দুই বঙ্গের মানুষ একই ভাষায় কথা বলে , একই ভাষায় অনুভব করে। তাদের অনুভুতি এক । তাদের ভাবনা এক। কিছু পার্থক্য আছে ,তার কারণ হিসাবে বললে ১৯৪৭ এর দেশভাগ এবং ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রভাব বাস্তবরূপ হিসাবে চলে আসে। যাইহোক সেসব দিকে যাচ্ছি না। শুধুমাত্র কলকাতা বইমেলা সম্পর্কে আলোকপাত করতে চাই।
    ১৯৭৬ সাল থেকে এশিয়ার বৃহত্তম বইমেলা, কলকাতা বইমেলা প্রতিবছর খুব সুন্দরভাবে রয়েছে বাঙালি সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে। বাঙালির অন্যতম উৎসব বললেও হয়তো ভুল হবে না। তার ফলশ্রুতি হিসাবে বইমেলার ক’দিন বাঙালিদের মধ্যে হাজার কাজের মধ্যেও বইমেলা যাবার প্রবণতা অনেক বেশি। ইতিহাস এবং বর্তমান সাক্ষী সাহিত্যে বাঙালিরা এক অন্য স্থান দখল করে আছে সারা বিশ্বে। ভারতবর্ষে বাঙালিদের মতো সাংস্কৃতিক মনোভাবাপন্ন মন অন্য কোনো রাজ্যের মানুষদের মধ্যে নেই। বাঙালির মনের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য , সংগীত , শিল্প।
    কলকাতা বইমেলা সম্পর্কে যদি আরও ভালোভাবে বলি তাহলে বলা যেতেই পারে, কলকাতা বইমেলা হল বাঙালি লেখকদের তীর্থস্থান। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে বইমেলার কিছুদিনের জন্য। বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়িয়ে তোলে সৌন্দর্য। বিভিন্ন দেশের লেখকদের চেনা ও জানার ক্ষেত্র। প্রতিবছর পঁচিশ লাখেরও বেশি মানুষ আসে তাদের সময় বাঁচিয়ে।
    কিন্তু সেই চিত্রে এই বছর অনেকটাই কম মানুষদের ভিড় , বইমেলার কিছুটা হলেও সৌন্দর্য যেন ফিকে হয়ে পড়েছে। কলকাতা বইমেলা ২০১৯ হারিয়েছে তার জীবন্ত ইতিহাস। ৩১ জানুয়ারী থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলমান বইমেলায় লোক সমাগম ছিল কম যদি শেষ দুই-তিন দিন বাদ রাখি । বই বিক্রিও অনেকের মতে ভালো হয়েছে কিন্তু আগের মতো কি?
    কারণ হিসাবে বলতে গেলে উঠে আসে কয়েকটি দিক। প্রথমত , সময়। এবারের বইমেলার সময় খুব সুবিধাজনক নয়। ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক এবং সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। ফলে ছাত্রছাত্রীদের ইচ্ছা থাকলেও তারা আসতে পারছে না। অভিভাবকরাও তাদের ছাড়বে না। এবং ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাও আসবেন না। দ্বিতীয়ত, স্থান। সায়েন্সিটি কাছ থেকে সেন্ট্রাল পার্কে বইমেলা নিয়ে আসাও লোক সমাগম কম হওয়ার বড়ো কারণ। সেন্ট্রাল পার্ক আসার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই খারাপ। যত সহজে পূর্বের স্থানে পৌঁছানো যেত বা সেখান থেকে বাড়ি ফেরা যেত ততটা সহজ এখানে হয়ে ওঠে না। তৃতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়া। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া এমনভাবে ঢুকে গেছে মানুষের মধ্যে যে বই পড়ার সময় কম হয়ে পড়েছে। বলা যেতে পারে বই পড়ার সময় নেই। অল্প টাকায় ভালো ইলেকট্রনিক্স , ইন্টারনেট মানুষকে বন্দি কামরায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে শুধু বাঙালি সংস্কৃতি নয় ভারতীয় সংস্কৃতির অধঃপতন ঘটছে। বাঙালিরা ভুলতে চলেছে তাদের সংস্কৃতি , তাদের ভাষা।
    সর্বশেষ বলবো, বইমেলা কর্তৃপক্ষ এবং আমাদের সকলের দায়িত্ব আবার পরের বছর কলকাতা বইমেলার পুরোনো রূপ, সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা। কারণ কলকাতা বইমেলা বাঙালির গর্ব , ভারতের গর্ব।