সম্প্রীতির শহর “মিঠি” যেখানে হিন্দুরা রোজা রাখে আর মুসলিমরা প্রতিদানে কুরবানী করে না

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: “মিঠি” এমন এক শহর যেখানে হিন্দুরা রমজান মাসে উপবাস রাখে আর মুসলমানরা পড়শী হিন্দুদের আবেগে আঘাত লাগবে বলে কুরবানীতে গরু কাটেনা। তাও আবার পাকিস্তানে! ধুস এ আবার হয় নাকি ? কিন্তু না আপনি ঠিকই পড়ছেন পাকিস্তানের প্রথম শ্রেনীর সংবাদ পত্রিকা ডনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে থেকেই উঠে এলো এমন এক সুন্দর সম্প্রীতির বার্তা।


    এই শহরে খুশির ঈদ হোক বা বকরিদ, উৎসব উপলক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন গরু, ছাগল বা উট কুরবানী দিয়ে থাকে যেমন হিন্দুরা দূর্গাপূজোর নবমী বা কালীপূজোর রাতে পাঁঠাবলি দেয়। ইদানিং এই কুরবানী নিয়ে দেখি ফেসবুকেও চলে এক সূক্ষ্ম প্রতিযোগীতা, কে কোথায় কটা গরু কেটেছে, কোথায় পশুর রক্তে রাস্তাঘাট লাল হয়ে গেছে এইসব পোস্ট আরকি । কিন্ত অবাক কান্ড, ইসলামিক দেশ পাকিস্তানের এক শহরে আজ অব্দি কোনদিন গরু কাটা হয়নি শুধুমাত্র হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত লাগবে বলে ?
    করাচী থেকে 450 কিমি দূরে সিন্ধু প্রদেশের এক শহর মিঠি ।এখানে হিন্দু মুসলিম যুগের পর যুগ ধরে শান্তিতে একসাথে বাস করছে। একদিনের জন্যও হিন্দু মুসলিমের মধ্যে ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা হয়নি। মন্দিরে পূজার সময় মসজিদের লাউডস্পিকার বন্ধ রাখা হয় আবার নামাজের সময় মন্দিরে কোনও ঘন্টা বাজে না। রমজানের সময় কোনও হিন্দু বাইরে খায় না, অপর দিকের হোলির দিন মুসলিমরা সব হিন্দুদের বাড়িতে বাড়িতে মিঠাই পাঠায়, হোলি খেলে।
    হিন্দু বাসিন্দাদের মতে মহরম দুঃখের মাস। মিঠির হিন্দুরা সেই মাসে বিয়ে শাদি বা কোনও আনন্দ অনুষ্ঠান করেন না। মিঠিতে মুসলিমরা ঈদে গরু কুরবানি করেন না। এটা পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই হয়ে আসছে। গরুকে এখানে মুসলিমরাও শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। সবাই এক সঙ্গে মহরম , ঈদ ও দীপাবলী পালন করে ।

    অবিশ্বাস্য লাগবে শুনতে, মিঠিতে অপরাধের হার পাকিস্তানের যেকোনও জায়গার চেয়ে কম। মাত্র ০.২%। এর অর্থ, পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে কম অপরাধ হয় এই শহরে। তাই বলা যেতে পারে, হিন্দুপ্রধান মিঠিই পাকিস্তানের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ শহর। এখানে ধর্মীয় দাঙ্গা হয়নি কোনও দিন। জোর করে ধর্মান্তরিত করার ঘটনা ঘটেনি কোনও দিন। চেষ্টা করে কোনও পাকিস্তানি মৌলবাদী সংগঠন মিঠিতে জাল বিছাতে পারেনি। হিন্দু মুসলিমরা যৌথভাবে সেই জাল কেটে দিয়েছেন।আমরা কি পারিনা মিঠির মত আমাদের সমাজ গড়ে তুলতে, তবেই তো সার্থক হবে রবিঠাকুর, নেতাজী বা নজরুলের দেখা স্বপ্ন !

    পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ পত্রিকা Dawn থেকে সংগৃহীত।