কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কোতুয়ালি ভবনের সামনে তৃণমূল দলেরই একাংশের বিক্ষোভ

মালদা,  ০৯ আগস্ট:  মালদা জেলায় তৃণমূলের নতুন ব্লক কমিটি গঠন নিয়ে কোতোয়ালির গনি প্রাসাদের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন দলেরই একাংশের নেতাকর্মীরা। এমনকি দলের জেলার সভানেত্রী মৌসুম নূরের কাছে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার সকালে দলের জেলা সভাপতি মৌসম নুরের সামনে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূলের বিভিন্ন ব্লকের নেতাকর্মীরা।

    তাঁদের অভিযোগ,  যারা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল দল করে এসেছেন,  তাদেরকে বাদ দিয়ে কংগ্রেসিদের নিয়ে এই কমিটিগুলি করা হয়েছে। এরকম কমিটি থাকলে আগামী বিধানসভায় মালদায় দলের ভরাডুবি হবে।

    যদিও এদিন বিভিন্ন ব্লকের দলীয় কর্মীদের অসন্তোষ সামলিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৌসুম নূর বলেন,  এটি দলের আভ্যন্তরীণ বিষয়। পাশাপাশি আংশিক সময়ের জন্য এই ব্লক কমিটিগুলি তৈরি হয়েছে। তবে কোথাও কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা হবে।

    এদিন রতুয়া ১ ব্লকের ৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং কালিয়াচক ২ ব্লকের ৫ টি অঞ্চল কমিটির তৃণমূল দলের নেতাকর্মীরা কোতুয়ালি ভবনে এসে হাজির হন।  এই কোতুয়ালি প্রাসাদেই থাকেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা প্রাক্তন সংসদ মৌসম নুর। তাঁর কাছে নতুন ব্লক কমিটি নিয়ে যে যার মতোন করেই নিজেদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

    রতুয়া ১ ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি ফজলুর রহমানের অভিযোগ, এতদিন দলের হয়ে জীবন দিয়ে গেলাম। হঠাৎ করে পুরনো ব্লক কমিটি ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হলো। আর যাদের এই ব্লক কমিটিতে রাখা হয়েছে তারা প্রত্যেকে কংগ্রেস দল করে। রতুয়ার তৃণমূল বিধায়ক সমর মুখার্জি ষড়যন্ত্র করেই পুরনো নেতৃত্বকে সরিয়ে দিয়েছে। তার পছন্দের কংগ্রেসিদের ওই কমিটিতে বসানো হয়েছে। এতে এলাকায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। কেন হঠাৎ করে এরকম কমিটি তৈরি করা হলো সে ব্যাপারে দলের জেলা সভাপতির কাছে আমরা জানতে এসেছি।

    প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি ফজলুর রহমানের বক্তব্য, তৃণমূলের প্রথম থেকে ছিলাম । দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে কাজ করে গিয়েছি। হঠাৎ করে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখার্জি। আর তারপরই নিজের পরিচিত কংগ্রেস নেতাদের কমিটিতে এনে দায়িত্ব দেওয়া হল।  যারা কোনোদিন রাজনীতি করে নি। তারা তৃণমূল দল করবে কিভাবে। এরকম চলতে থাকলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

    তৃণমূল পরিচালিত কালিয়াচক ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি টিংকুর রহমান বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নানান অত্যাচার সহ্য করেই তৃণমূল দলকে বুকে আঁকড়ে রেখেছি। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আদর্শে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু হঠাৎ করে এলাকার পুরনো নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে দেওয়া হলো ব্লক কমিটি থেকে।  এলাকার কিছু কংগ্রেসিদের কৌশলগতভাবে ব্লক কমিটির দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এলাকায় ব্লক কমিটি তৈরি নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে । পুরো বিষয়টি আমরা দলনেত্রীকে লিখিত আকারে জানিয়েছি। পাশাপাশি জেলা সভানেত্রী মৌসম নুরের কাছেও এবিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছে। অবিলম্বে এই ব্লক কমিটি ভেঙে দেওয়া উচিত।

    এদিন কোতোয়ালি ভবনের সামনে দলেরই একাংশ নেতাকর্মীদের ক্ষোভ দেখে অস্বস্তিতে পড়তে হয় জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে। দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে আশ্বাস দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন দলের একাংশ জেলা নেতারা। যদিও এদিন বিক্ষোভকারী নেতাদের সাফ কথা, নতুন ব্লক কমিটিতে যারা এসেছেন, তারা তৃণমূল দলের কেউ না। সকলেই কংগ্রেস করে। এরকম নেতৃত্বকে রেখে কোনো ভাবেই কাজ করা যাবে না। অবিলম্বে এই ব্লক কমিটি ভেঙে আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে।

    এদিন পুকুরিয়া অঞ্চল কমিটির তৃণমূলের সভাপতি বাচ্চু ঘোষ বলেন,  যারা এতদিন দল বিরোধী কাজ করে এলেন। যাদের জন্য এত বিরোধিতা। আজ তাদেরই ব্লক কমিটিতে রাখা হয়েছে। এই বিষয়টিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। মানুষ ভালো চোখে নিচ্ছে না।

    তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৌসুম নূর বলেন, এটি দলের আভ্যন্তরীণ বিষয়। কাজেই এব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলবো না। তবে দলের মধ্যে কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই সেটি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।  তবে কিছুদিনের জন্য এই কমিটি তৈরি হয়েছে । সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়কেরা এই কমিটি তৈরি করেছেন।

    ছবি ——- জেলার নতুন ব্লক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কোতুয়ালি ভবনের সামনে তৃণমূল দলেরই একাংশের বিক্ষোভ।