বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার এই বেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় পরিবেশবিদ ও চিকিৎসকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা:  শীত আসতেই, শহরে শুরু হল দূষণ। দীপাবলির আকাশ ছিল, শহরের দূষণ মানচিত্রে সবুজ৷ কিন্তু শীত আসতেই দূষণ বাড়ছে শহরে। ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের মাপ অনুযায়ী, বালিগঞ্জ, ভিক্টোরিয়া, ফোর্ট উইলিয়াম, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় দূষণের মাপ ধরা পড়েছে অনেকটাই বেশি। বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার এই বেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় পরিবেশবিদ ও চিকিৎসকরা।

     

    বিশেষ করে সন্ধ্যার সময়ে যে পরিমাণ দূষণ বাড়ছে তা নিয়ে চিন্তিত পরিবেশবিদরা। পরিবেশবিদ সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ জানিয়েছেন, এটা কিন্তু খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এখনই জরুরি।পশ্চিমবঙ্গে ২০২৩ সালে এরোসেল দূষণ ৮% বৃদ্ধি পাবে বলে জানাচ্ছে বোস ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা পত্র বায়ুদূষণের দিক দিয়ে নতুন বছর পশ্চিমবঙ্গের জন্য মোটেও সুখকর হবে না বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।তাঁদের মতে, ২০২৩ সালে রাজ্যে এরোসল দূষণ ৮% বৃদ্ধি পাবে। যা এরোসল দূষণের মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অর্থাৎ রেড জোনে ঢুকে পড়বে। দেশে এরোসল দূষণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করবে বিহারের পর। PM2.5 এবং PM10 এর পাশাপাশি সমুদ্রের লবণ, ধুলো, জৈব কার্বন দিয়ে তৈরি হয় এরোসল। যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। Aerosol optical depth(AOD) হল বাতাসে এরোসিল কত পরিমানে আছে তা জানার পদ্ধতি।কলকাতার বোস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডক্টর অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং গবেষক মনামী দত্তের A deep insight into state-level Aerosol pollution in India শীর্ষক গবেষণাপত্রে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের এরোসল দূষণ নিয়ে ভবিষ্যতের কী হতে চলেছে তা বলা হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গ ইতিমধ্যেই রেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে। যার অর্থ AOD এর মাত্রা ০.৫। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক। গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে এরোসল পলিউশনের মাত্রা পশ্চিমবঙ্গে ২০২৩ এর মধ্যে ৮% বৃদ্ধি পাবে। যা AOD তে দাঁড়াবে 0.75 শতাংশ। এরোসল অপটিক্যাল ডেপ্থ বা AOD এর মাত্রা যদি শূন্য থেকে একের মধ্যে থাকে তাহলে স্বচ্ছ পরিষ্কার আকাশ দেখা যায়। আর যদি একের বেশি হয় তাহলে আকাশ ঘোলাটে হয়।যদিও ২০১৫ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে চিরাচরিত জ্বালানি পদ্ধতি তৈরি হওয়া দূষণের মাত্রা বেড়ে ৩৫ শতাংশ হয়েছে। উল্টো দিকে যানবাহনের দূষণ কমে ১৮% হয়েছে। কারণ হিসেবে মনামী দত্ত বলেন, “যানবাহন থেকে তৈরি হওয়া দূষণ কমার প্রধান কারণ হতে পারে EURO-IV গাড়ি রাস্তায় নামানো এবং পুরনো ইঞ্জিনের গাড়িগুলোকে আপগ্রেড করা। একই সঙ্গে ১৫ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি চলাচল নিরপরা নিষেধাজ্ঞা জারি করা বড় কারণ। যানবাহন চলার ফলে রাস্তায় তৈরি হওয়ার ধুলোর পরিবর্তে বাড়িঘর তৈরি হওয়া সময় যে ধুলো তৈরি হচ্ছে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের প্রধান শহরগুলির রাস্তার পাশের বেআইনিভাবে তৈরি হওয়া খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্টে চিরাচরিত জ্বালানি আধিক্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

     

    গবেষণাপত্রে পশ্চিমবঙ্গের এরোসল দূষণের পরিমাণ কমানোর জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। ডক্টর চ্যাটার্জি বলেন, চিরাচরিত জ্বালানির পদ্ধতি থেকে তৈরি হওয়া দূষণ এরোসেল দূষণের প্রধান কারণ। সম্প্রতি এলপিজি দাম বৃদ্ধির ফলে গরিব মানুষেরা আবার চিরাচরিত কাঠ, কয়লা দিয়ে রান্নার পদ্ধতিতে ফিরে গেছে। পাশাপাশি রাস্তার ধারে খাবারের দোকানগুলির সংখ্যাও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।