৫০ বছর আগে বাঙ্গালী ইঞ্জিনিয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ফারাক্কা ব্যারেজ বিহারের বন্যার কারণ হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক- যদিও সেই সময় বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার কপিল ভট্টাচার্য ঠিকই বলেছিলেন, ফারাক্কা ব্যারেজ প্রকল্পে মারাত্মক ত্রুটি চিহ্নিত করার পরেও, সেই কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে ভারতবাসী এই বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার কে পাকিস্তানের দালাল বলেও অভিহিত করেছিল, এমনকি তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।গত সপ্তাহে বিহার বিধ্বংসী বন্যার মুখোমুখি হওয়ায়, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার রাজনৈতিকভাবে চার্জড বাঁধ সম্পর্কে অস্বাভাবিক কড়া বক্তব্য দিয়েছেন যে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি গঙ্গা নদীর জলাবদ্ধতার কারণে হয়েছে, কিন্তু বিহারের বন্যা হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টিতে। নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার জন্যই সেখানকার মানুষদেরকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। একচল্লিশ বছর আগে  গঙ্গার উপর যখন ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হয়, তার একটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জলপ্রবাহের একটা অংশকে হুগলী নদীতে চালিত করে কলকাতা বন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করা।সে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল না-হলেও ফারাক্কার জেরে গঙ্গার উজানে যে পলি পড়া শুরু হয়েছে, তারে জেরে প্রতি বছরই বর্ষার মরশুমে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের একটা বিস্তীর্ণ অংশ।। বহুদিন ধরেই মালদহ-মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গা তীরবর্তী দুর্ভোগ ও বিপর্যয়কবলিত মানুষ ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। একই সঙ্গে তারা ক্ষতিপূরণ, ভূমি ও পুনর্বাসন দাবি করে আসছে। অব্যাহত বন্যা ও নদীভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও তারা দাবি জানিয়ে আসছে। বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গের জন্যও ফারাক্কা বাঁধ বড় রকমের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পার্শ্ববর্তী বিহারও ফারাক্কা বাঁধের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেখানে চলমান বন্যায় ১০ লাখের বেশি মানুষ ও ২ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিহার রাজ্য সরকারের দাবি, ফারাক্কা বাঁধের কারণেই এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং প্রায় প্রতিবছরই রাজ্য বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে।অথচ যখন ফারাক্কা বাঁধের কুফলগুলো বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার কপিল ভট্টাচার্য সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন তখন তার পাশে এসে কেউ দাঁড়ায়নি, কপিল বাবু বলেছিলেন

    গঙ্গা থেকে অপসারিত ৪০,০০০ কিউসেক পানি ফিডার খাল কিম্বা হুগলী-ভাগরথী ধারণ করতে পারবে না।

    গঙ্গা এবং ভাগরথীর প্রবাহ রেখার উচ্চতার তারতম্যের কারণে পানি সঞ্চালন কষ্টকর হবে। ফলে গঙ্গা নদী তার স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য অন্য পথ খুঁজবে।

    প্রথমোক্ত কারণের জন্য মুর্শিদাবাদ এবং মালদা জেলা জুড়ে দেখা দিবে জলাবদ্ধতা।

    ব্রক্ষপুত্রের তুলনায় গঙ্গা কম গতি শক্তি সম্পন্ন নদী। এ ধরণের নদীর গতিপথ হয় আঁকা-বাঁকা (meandering)। এক বাঁক থেকে আরেক বাঁকের দূরত্বকে বলে মিয়ান্ডার দৈর্ঘ্য এবং একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে কয়টা বাঁক রয়েছে তাকে বলে মিয়ান্ডার ফ্রিকোয়েন্সি। হঠাৎ করে মৃতপ্রায় হুগলী-ভাগরথীর মধ্য দিয়ে কৃত্রিমভাবে বিপুল পরিমাণে পানি প্রবাহিত করলে হুগলী-ভাগরথী ও উজানে বিহার অবধি সব নদীর মিয়ান্ডার ফ্রিকোয়েন্সির উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। ফলে ঐ সমস্ত নদীতে জলাবদ্ধতা, নদী ভাঙ্গন এবং চর সৃষ্টি তরান্বিত হবে।

    ভাটি অঞ্চলের সকল নদীর নাব্যতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।

    শুষ্ক মওসুমে পানি প্রবাহ কম হওয়ার কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন দেখা দিবে।

    কপিল বাবুর হলফনামা পড়ে ভারত সরকার এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিল। কে এল রাও, যিনি সেই সময়ে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন, ভট্টাচার্যকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেছিলেন। বাংলা প্রকাশনা আনন্দবাজার পত্রিকা তাঁকে পাকিস্তানের গুপ্তচর বলে অভিহিত করেছিলেন এবং ভট্টাচার্যকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।

    সরকার অবশেষে ১৯৬২ সালে গঙ্গার ওপরে ২.৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যারাজ তৈরি শুরু করে এবং ১৯৭৫ সালে বাঁধটি উদ্বোধন করা হয়।